পুঁজিবাজারে মূল্যসূচকের পতন দীর্ঘায়িত হওয়ায় নেতিবাচক মনোভাব দেখা যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। তা এই বাজারকে আরও চাপে ফেলেছে।
এ পরিস্থিতিতে বুধবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন ৩০০ কোটি টাকার নিচে নেমে হয়েছে ২৯৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, যা ৯ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর আগে চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি এই বাজারে ২৯২ কোটি ১৪ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছিল।
এদিন লেনদেনের পাশাপাশি মূল্যসূচকও কমেছে। প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫০ পয়েন্টে কমে ৫ হাজার ৩১৬ পয়েন্টে নেমেছে। কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর।
অন্য পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই চিত্র দেখা গেছে। এদিন সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই কমেছে ৭৫ পয়েন্টের বেশি; নেমেছে ১৪ হাজার ৯৭২ পয়েন্টে।
পূজার ছুটির পর সোমবার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৮ পয়েন্ট কমেছিল। দ্বিতীয় কর্মদিবস মঙ্গলবার কমেছিল ৭ পয়েন্ট।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টানা দরপতনে সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীর মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। কিছু বিনিয়োগকারী রাগে-দুঃখে সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত কম-বেশি সব শেয়ারে ক্রেতা আছে। তবে সবাই সতর্ক। যারাই একটু-আধটু শেয়ার কিনছেন, তাদের প্রায় সবাই ঝুঁকি বিবেচনায় যতটা সম্ভব কম মূল্যে শেয়ার কেনার চেষ্টা করছেন। এতে শেয়ারের বিক্রির চেষ্টার বিপরীতে ক্রয় চাহিদা বাড়ছে না। ফলে শেয়ারদর কমছে; পতন হচ্ছেই বাজারে।
ইলেকট্রনিক শেয়ার ধারণ সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সিডিবিএল প্রকাশিত তথ্যেও এর প্রমাণ মিলছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত দেড় মাসে সম্পূর্ণ খালি হওয়া বিও অ্যাকাউন্ট সংখ্যার তুলনায় নতুন বিও অ্যাকাউন্ট খোলার সংখ্যা কমছে। যেমন- এ সময়ে সাড়ে ১০ হাজারের বেশি বিও অ্যাকাউন্ট খালি হয়েছে। ফলে খালি হওয়া বিও সংখ্যা বেড়ে ৩ লাখ ২২ হাজারে উন্নীত হয়েছে, যা গত আগস্ট শেষে ছিল ৩ লাখ ৯ হাজার ৪৩৪টি। এ সময়ে নতুন খোলা ৮ হাজার ৬৩৮টি বিও অ্যাকাউন্টের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৯৮৭টিতে শেয়ার কেনা হয়নি।
টানা দরপতনকেই এ জন্য দায়ী করেছেন দেশের বড় একটি ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “ব্যাংক ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় বড় ও কৌশলী বিনিয়োগকারীরা এখন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগমুখী নন। এতে বাজারে ক্রয় চাহিদা কমে গেছে। এর বিপরীতে মার্জিন ঋণে কেনা শেয়ারে দর পতনে গ্রাহক নতুন করে অর্থ দিয়ে ঋণ সমন্বয় করছেন না।
“ফলে বাধ্য হয়ে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো ফোর্স সেল করছে, যা বাজারের দরপতনকে একরকম স্থায়ী রূপ দিচ্ছে।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়।
এরপর কিছুদিন পুঁজিবাজারে সূচকের উল্লম্ফন হলেও এক পর্যায়ে মূল্যসূচকের পতন শুরু হয়। সেই ধারা এখনও অব্যাহত আছে। এর মধ্যে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান খোন্দকার রাশেদ মাকসুদসহ নতুন নিয়োগ পাওয়া কমিশনাররা কাজ শুরু করেছে, কিন্তু পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়নি।
বুধবারের বাজার পরিস্থিতি
বুধবার দিনশেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৪৯ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৩১৬ পয়েন্টে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়া সূচক ১২ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৮২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএস৩০ সূচক ১৫ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৪৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
মোট ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ৫৩টির। কমেছে ৩০০টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৪২টির দর।
এদিন ডিএসইতে ২৯৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন মঙ্গলবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৩১৮ কোটি ৭ লাখ টাকা। এর আগে চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি ২৯২ কোটি ১৪ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল। সে হিসাবে ডিএসইতে গত ৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে বুধবার।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে সিএসসিএক্স সূচক ৪১ দশমিক ১৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৯ হাজার ১০২ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৭১ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট কমে ১৪ হাজার ৯৭৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। শরিয়া সূচক ৬ দশমিক ৪১ পয়েন্ট কমে ৯৬৯ পয়েন্ট এবং সিএসই ৩০ সূচক ৩৮ দশমিক০৭ পয়েন্ট কমে ১২ হাজার ২০৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে।