দেশের পুঁজিবাজারে গত দু’দিনে কিছুটা ঘুড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা ছিল। তবে দীর্ঘদিন আটকে থাকা শেয়ার বিক্রি করে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীর হাতে নগদ নেওয়া, ক্ষতি পোষানো কিংবা মুনাফা তোলার প্রবণতা দেখা যায় বুধবার। এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স দুই মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নামে।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজারের সূচক ডিএসইএক্স এদিন ৪৯ পয়েন্ট কমে নামে ৬২২৬ পয়েন্টে। এর আগে গত ২১ নভেম্বর এ সূচক ছিল ৬২২১ পয়েন্টে।
এদিন ওয়ালটন, ইউনাইটেড পাওয়ার, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল, সামিট পাওয়ার ও বিকন ফার্মাসহ অনেকটা বড় মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের দামে উল্লেখযোগ্য সংশোধন হয়, যা বাজার সূচককে নিচে টেনে নেয়। এই পাঁচটি শেয়ার ডিএসইর প্রধান সূচকের ২৫ পয়েন্ট পতনের প্রায় অর্ধেকের জন্য দায়ী।
বুধবার লেনদেনও কিছুটা কমেছে। লেনদেন হয়েছে ১,১৭৩ কোটি টাকার কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট।
মঙ্গলবার ডিএসইতে লেনদেন হয় ১,১৭৬ কোটি টাকার, যা ছিল প্রায় ৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। আগের দিন সোমবার লেনদেন হয় ১,০৪২ কোটি টাকার লেনদেন হয়।
বুধবার খাতভিত্তিক লেনদেনে এগিয়ে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাত, ১৪.১ শতাংশ। এরপরে ছিল প্রকৌশলী ১২.১ শতাংশ ও ব্যাংক ৯.৪ শতাংশ।
এদিন প্রায় সব খাতের শেয়ারই দর হারিয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ৪.৮ শতাংশ, প্রকৌশল ৪.৭ শতাংশ ও পেপার ও প্যাকেজিং ৪.৪ শতাংশ দর হারিয়েছে।
ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তর তুলে নেওয়ার পর পুঁজিবাজারে চাঙাভাব ফিরে আসার যে আভাস পাওয়া যাচ্ছিল দুই দিন না যেতেই তা উবে গেছে। বড় দরপতন হয়েছে দুই বাজারে। মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেনও কমেছে। কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর।
সপ্তাহের চতুর্থ দিন বুধবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৫০ পয়েন্ট কমে নেমে এসেছে ৬ হাজার ২২৬ দশমিক ৬৫ পয়েন্টে। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩৪৭ দশমিক ২৭ পয়েন্ট কমে নেমেছে ১৭ হাজার ৮১১ দশমিক ৩১ পয়েন্টে।
দেড় বছর পর দুই দফায় ১২টি ছাড়া অন্য কোম্পানিগুলোর শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস তুলে নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
প্রথম দফায় গত সপ্তাহের শেষ দিন ১৮ জানুয়ারি ৩৫টি বাদে সব কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর সোমবার পুঁজিবাজারের লেনদেন শেষে এক আদেশে আরও ২৩টির ফ্লোর প্রাইস উঠানোর কথা জানায় বিএসইসি।
তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সংখ্যা ৩৯২টি, এর মধ্যে ৩৮০টির শেয়ারদরের সর্বনিম্ন সীমা তুলে নেওয়া হলো।
ফ্লোর প্রাইস উঠানোর পর প্রথম দিন গত রবিবার বিক্রির চাপে বড় পতন হয় পুঁজিবাজরে, ডিএসইএক্স পড়ে ৯৬ পয়েন্ট। তবে পরের দিন সোমবার বেলা আড়াইটার লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূলসূচকে আসে কিছুটা উত্থান, বাড়ে ১৪ পয়েন্ট।
সপ্তাহের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার ডিএসইএক্স ২২ পয়েন্ট বাড়ার মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়, সূচক দাঁড়ায় ৬ হাজার ২৭৬ দশমিক ২৫ পয়েন্টে।
বুধবার ডিএসইর অন্য দুই সূচকের মধ্যে শরীয়াহ সূচক ডিএসইএস ১১ দশমিক ২৫ পয়েন্ট কমে নামে ১ হাজার ৩৭২ পয়েন্টে এবং ডিএস-৩০ সূচক ১৯ দশমিক শূন্য ৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ১৩৯ পয়েন্টে।
বুধবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৯৬টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৬১টির, কমেছে ৩০৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩০টির দর।
অন্য পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) বুধবার পতন ধারা দেখা যায়। নির্বাচিত সূচক সিএসসিএক্স ২০৯.০ পয়েন্ট এবং সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই ৩৪৭.৩ পয়েন্ট কমেছে।
সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিল ২৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
লেনদেন হয়েছে ২৭৮টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৫১টির, কমেছে ২০৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৩টির দর।