ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যসীমা উঠার পর কয়েকদিন পুঁজিবাজারে বাড়ে বিক্রির চাপ। সেই ধাক্কা কাটিয়ে সোম ও মঙ্গলবার দেশের পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ক্রয় প্রবণতা দেখা গেছে। এতে এ দু’দিন মূল্যসূচক বেড়েছে বাজারে। বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর। লেনদেনও বেড়েছে। দুই বাজারেই একই চিত্র দেখা গেছে।
সপ্তাহের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫২ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ১৫০ দশমিক ২১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৯৩৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকার, যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বেশি। সোমবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৬৬২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
অন্য বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৭৭ দশমিক ৯০ পয়েন্ট বেড়ে ১৭ হাজার ৪৪২ দশমিক ৭৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। সোমবার এই বাজারে ১৩ কোটি ৬ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল।
টানা তিন কার্যদিবস কমার পর চলতি সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন সোমবার ডিএসইএক্স ১৮ দশমিক ১৬ পয়েন্ট বেড়েছিল। সিএএসপিআই বেড়েছিল ২১ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট।
হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, এই দুই দিনে (সোম ও মঙ্গলবার) ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭১ পয়েন্টের বেশি বেড়েছে। সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ২০০ পয়েন্টের মতো।
ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর দুই দিন ভালোর ইঙ্গিত দিলেও ফের দরপতন শুরু হয় বাজারে। টানা তিন কার্যদিবস দুই বাজারেই মূল্যসূচকের বড় পতন হয়। এই তিন দিন ডিএসইএক্স কমে ২০০ পয়েন্টের মতো। এ সমেয়ে সিএসইতেও একই চিত্র দেখা যায়।
বেশিরভাগ শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্যসীমা তুলে দেওয়ার পর গত সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার বড় দরপতনের পর দুই দিন (সোম ও মঙ্গলবার) বাজারে সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার আলো দেখা দিয়েছিল। সবাই ভেবেছিলেন বাজার বোধ হয় এবার ঘুরে দাঁড়াবে।
কিন্তু গত সপ্তাহের বুধ ও বৃহস্পতিবার এবং চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার বাজারে বড় পতন হয়। ফের হতাশ হয়ে পড়েন বিনিয়োগকারীরা। সোম ও মঙ্গলবার বাজারে চাঙাভাব দেখা দেওয়ায় আবার আশায় বুক বাঁধছেন তারা।
দেড় বছর পর গত ১৮ জানুয়ারি পুঁজিবাজারে বেশিরভাগ শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয় বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে বহাল রাখা হয় অনেকটা বড় মূলধনি ৩৫টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস।
বেশিরভাগ শেয়ার থেকে বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন মূল্যসীমা তুলে নেওয়ার পর প্রথম কার্যদিবস ২১ জানুয়ারি দুই পুঁজিবাজারেই মূল্যসূচকের বড় পতন হয়, কমে যায় লেনদেনও। তবে পরের দুই দিন সোম ও মঙ্গলবার বাজারে চাঙাভাব দেখা যায়। লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে প্রায় ১২০০ কোটি টাকায় উঠে।
২৩ জানুয়ারি থেকে আরও ২৩টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পরও সূচকের উত্থানে আশা সঞ্চার হয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। তবে বুধবার ফের দরপতনে বিনিয়োগকারীদের আর্থিক লোকসান বেড়েছে।
বাজারে এখন ১২টি ছাড়া সব কোম্পানির শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস তুলে দিয়েছে বিএসইসি।
মঙ্গলবারের বাজার
সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার ডিএসইতে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫২ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৬ হাজার ১৫০ পয়েন্টে।
অন্য দুই সূচকের মধ্যে শরীয়াহ সূচক ডিএসইএস ১২ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৫৪ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৭ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১১১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
ডিএসইতে ৯৩৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর আগের কার্যদিবস সোমবার লেনদেন হয়েছিল ৬৬২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
মঙ্গলবার ডিএসইতে ৩৯৪টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২৫৫টির, কমেছে ৯২ টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৭টির দর।
দেশের আরেক পুঁজিবাজার সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৭৭ দশমিক ৯০ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৪৪২ পয়েন্টে।
এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৭২টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৭১টির, কমেছে ৭৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৫টির দর।
সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।