Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

ক্রয়চাপে ডিএসইর সূচকের বড় লাফ

SS-DSEX--GRAPH-010224
[publishpress_authors_box]

দেশের পুঁজিবাজারে গত কয়েকদিন চাঙ্গাভাব দেখা দেওয়ায় উচ্ছ্বসিত বিনিয়োগকারীরা। ফ্লোর প্রাইস উঠার ধাক্কা কাটিয়ে তাদের মধ্যে চার দিন ধরে ক্রয়প্রবণতা দেখা গেছে।

বিভিন্ন কোম্পানির প্রান্তিকের আয়ের খবরও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে ভূমিকা রেখেছে।  

ফলে ঘুরে দাঁড়ানো পুঁজিবাজারে লেনদেনের পাশাপাশি প্রতিদিনই বাড়ছে মূলসূচক। টানা চার দিন সূচক বেড়ে সপ্তাহ শেষ হয়েছে। অনেক দিন পর ভালো একটা সপ্তাহ পার করল পুঁজিবাজার।

বাজারে চাঙ্গাভাব দেখা দেওয়ায় ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারীর মধ্যে আস্থা ফিরে আসছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৬০ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট বা ১ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ২১৩ দশমিক ৯৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এদিন লেনদেন হয়েছে এক হাজার ১২২ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বেশি। বুধবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৯৮০ কোটি টাকা।

অন্য বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৯৮ দশমিক ১২ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়ে ১৭ হাজার ৬২৬ দশমিক ১২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এদিন লেনদেন হয়েছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা। বুধবার এই বাজারে ১৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, টানা তিন কার্যদিবস কমার পর চলতি সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন সোমবার ডিএসইএক্স ১৮ দশমিক ১৬ পয়েন্ট বেড়েছিল। সিএএসপিআই বেড়েছিল ২১ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট।

তৃতীয় দিন মঙ্গলবার ডিএসইএক্স ৫২ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ১৫০ দশমিক ২১ পয়েন্টে দাঁড়ায়। এদিন লেনদেন হয় ৯৩৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বেশি। সোমবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৬৬২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

চতুর্থ দিন বুধবার ডিএসইএক্স ৩ দশমিক ১২ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ১৫৩ দশমিক ৩৩ পয়েন্টে অবস্থান করে। লেনদেন বেড়ে দাঁড়ায় ৯৭৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

আস্থা ফেরায় নতুন করে বিনিয়োগ করছেন অনেকে, এক্ষেত্রে বড় মূলধনি কোম্পানি ঘিরে গত কয়েকদিন ক্রয়চাপ দেখা যায়।

হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, চার দিন- সোম, মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৩৫ পয়েন্টের বেশি বেড়েছে। সিএসইতেও এই ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা গেছে।

শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যসীমা তুলে নেওয়ার পর দুই দিন ভালোর ইঙ্গিত দিলেও পরে ফের দরপতন শুরু হয় বাজারে। টানা তিন কার্যদিবস দুই বাজারেই মূল্যসূচকের বড় পতন হয়। এই তিন দিনে ডিএসইএক্স কমে ২০০ পয়েন্টের মতো। এ সময় সিএসইতেও একই চিত্র দেখা যায়।

শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্যসীমা তুলে দেওয়ার পর গত সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার বড় দরপতনের পর দুই দিন সোম ও মঙ্গলবার বাজারে সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার আলো দেখা দিয়েছিল। সবাই ভেবেছিলেন বাজার বোধ হয় এবার ঘুরে দাঁড়াবে।

কিন্তু গত সপ্তাহের বুধ ও বৃহস্পতিবার এবং চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার বাজারে বড় পতন হয়। ফের হতাশ হয়ে পড়েন বিনিয়োগকারীরা। সবশেষ টানা চার দিন বাজারে চাঙাভাব দেখা যাওয়ায় আবার আশায় বুক বাঁধছেন তারা।

সুমন হাওলাদার নামের একজন ছোট বিনিয়োগকারী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ভয় কেটে গেছে। এখন সাহস পাচ্ছি। ফ্লোর পাইস উঠে যাওয়ার পর বাজার যেভাবে পড়তে শুরু করেছিল, ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তবে এখন স্বস্তি পাচ্ছি। জানি না আগামী দিনগুলো বাজার কেমন যাবে।”

বাজারের এমন হালচালে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাজার বিশ্লেষক শাকিল রিজভী। সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “সব ভয় কেটে গেছে। এখন বাজার স্বাভাবিক হবে, ভালো হবে।

“সর্বনিম্ন মূল্যস্তরের কারণে অনেকে দীর্ঘদিন শেয়ার বিক্রি করতে পারেননি। ফলে মূল্যস্তরে উঠে যাওয়ায় যাদের নগদ অর্থের বেশি প্রয়োজন ছিল, তাদের অনেকেই শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছিলেন। সে কারণে বাজার সমন্বয় হয়েছে। এখন স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। বাজার এখন ভালো হবে।”

ডিএসইর বর্তমান পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, “এটা ঠিক যে, ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পর বাজারের একটা ধাক্কা লেগেছিল। আমার মনে হচ্ছে, সেই ধাক্কা কেটে গেছে।

“বাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরছে। সূচকের পাশাপাশি লেনদেনও বাড়ছে। আমি মনে করি বাজার সঠিক পথেই আছে। ফ্লোর পাইস উঠে যাওয়ার পর বিক্রির চাপ বেড়েছিল। সে কারণে সূচক কমেছিল; এখন ঠিক হয়ে যাচ্ছে।”

‘বাজার এখন ভালোর দিকে যাবে’ মন্তব্য করে শাকিল রিজভী বলেন, “বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরতে হবে। দেখেশুনে বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের আমি বলবো—মূল্যসূচকের দিকে না তাকিয়ে শেয়ারের গতিপ্রকৃতি দেখে বিনিয়োগ করুন। আতঙ্কিত হয়ে কোনও শেয়ার বিক্রি করে দেবেন না। হুট করে কোনও সিদ্ধান্ত নিলে সেটা ভুল সিদ্ধান্ত হবে।”

বৃহস্পতিবারের বাজার

সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ডিএসইতে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬০ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২১৩ দশমিক ৯৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হয়েছে এক হাজার ১ হাজার ১২২ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা বেশি। বুধবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৯৮০ কোটি টাকা।

অন্য দুই সূচকের মধ্যে শরীয়াহ সূচক ডিএসইএস ১০ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৬২ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১২ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১১৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

ডিএসইতে ১ হাজার ১২২ কোটি ৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন বুধবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৯৭৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৯৪টি কোম্পানির শেয়ার, এর মধ্যে দর বেড়েছে ২৭১টির, কমেছে ৭১টির এবং অপরিবর্তিত ৫২টির দর।

অন্যদিকে, সিএসইতে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৯৮ দশমিক ১২ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন শেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৬২৬ পয়েন্টে।

সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৭৩টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৭৭টির, কমেছে ৬৬টির এবং অপরিবর্তিত ৩০টির দর।

এই বাজারে লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। বুধবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত