সুন্দরবনের শেষ সীমানায় বঙ্গোপসাগরের তীরে দুবলার চর। কুঙ্গা ও মরা পশুর নদের মাঝে এক বিচ্ছিন্ন চর এটি। প্রতি বছর প্রায় ৩৫ হাজার জেলে জীবিকার সন্ধানে আসেন এখানে। অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত ছয় মাসের বসতি গড়েন।
এই সময়ে খুলনা, বাগেরহাট, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে আসা জেলেরা সাগর থেকে শুঁটকি আহরণ করেন। তারপর দুবলার চরে শুকিয়ে বিক্রি করেন। যা থেকে প্রতি বছর বন বিভাগের আয় হয় কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
অথচ স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ নানা সমস্যায় দিন কাটে এসব জেলেদের। চরে বাস করা এই বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর জন্য নেই কোনও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা। প্রয়োজনীয় ওষুধও কিনতে হয় অতিরিক্ত দামে।
বাগেরহাটের জেলে সুনীল বলেন, “এখানে হাতুড়ে কিছু ডাক্তার আছে। অসুখ বিসুখ হলে তাদের কাছ থেকে চিকিৎসা নিতে হয়। বড় কিছু হলে বোটে করে এলাকায় পাঠিয়ে দেয়।”
সুনীলের ভাই সুজিত জানান, এখানে ওষুধসহ চিকিৎসায় খরচও তাদের বেশি হয়। লোকালয়ের তুলনায় তাদের কাছ থেকে বেশি দাম রাখা হয়।
বন বিভাগের তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুবলার চর থেকে ৫ হাজার ১০০ টন শুঁটকি উৎপাদন হয়। যার বিপরীতে রাজস্ব আয় হয় ৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব আয় ছিল ৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা আর শুঁটকি উৎপাদন ছিল ৬ হাজার ৫০০ টন।
অথচ সমস্যার যেন শেষ নেই জেলেদের। প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র নেই, দুর্যোগে নিজেদের বাঁচানোর মতো আশ্রয়কেন্দ্র নেই। পাশাপাশি নতুন করে শুরু হয়েছে ভারতীয় ফিশিং জাহাজের দৌরাত্ম্য।
দাকোপের জেলে জুয়েল হাসান জানান, গভীর সমুদ্রে তারা তাদের কাঠের ট্রলার নিয়ে যেতে পারেন না। ভারতীয় ফিশিং বোটগুলো বাংলাদেশের সীমানায় এসে মাছ ধরে। মাঝে মাঝে বাংলাদেশের জেলেদের জাল ছিঁড়ে নিয়ে যায় তারা। প্রতিবাদ করলে মারধরও করে।
প্রতি বছর মাছ ধরতে দুবলার চরে আসেন বিষ্ণুপদ রায়। কিন্তু এবার তেমন মাছ পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, সমুদ্রের গভীরে ছাড়া কাছাকাছি মাছ নাই। সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে ও নদীতে বিষ দিয়ে মাছ মারার কারণে এমন হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, “বাংলাদেশে মাছ ধরা বন্ধের সময়ে ভারতীয় ফিশিং জাহাজ বাংলাদেশ সীমানায় এসে মাছ ধরে নিয়ে যায়।”
বিষয়গুলো নিয়ে কথা হয় দুবলার চরের ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে।
তিনি বলেন, “এখানে একটি অস্থায়ী হাসপাতাল করার কথা ছিল। কথা ছিল সেটা শুধু মাছ ধরার মৌসুমে এখানে থাকবে। কিন্তু আজও তা হয়নি। দুর্যোগকালে জেলেদের জন্য এখানে আশ্রয়কেন্দ্র নেই। যে চার পাঁচটি ছিলো সেগুলোও এখন ব্যবহার অনুপোযোগী।”
এদিকে ভারতীয় জাহাজের ব্যাপারে কোস্টগার্ড, বন বিভাগকে জানানা হলেও তারা কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
তবে ভারতীয় জাহাজের ব্যাপারে জানা নেই বলে জানিয়েছেন বন বিভাগ। বন সংরক্ষক মিহির রঞ্জন হালদার বলেন, “প্রাথমিক চিকিৎসার বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবেন তারা। তবে ভারতীয় ফিশিং জাহাজের বিষয়টি জানা নেই।”