ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের ওপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে। বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের এই ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন।
রবিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানকে ২০১৮ সালে দুদকের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করা হয়েছিল। ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে এক চুক্তিতে বিনা পারিশ্রমিকে একটি তথ্যচিত্রও করেন তিনি। ওই সময় দুদকের ১০৬ কমপ্লেইন হটলাইন উদ্বোধন উপলক্ষে তথ্যচিত্র করা হয়েছিল।
রবিবার সমসাময়িক বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে আসেন দুদক চেয়ারম্যান। এ সময় এক সাংবাদিক জানতে চান, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান দুদকের বিজ্ঞাপন চিত্রে কাজ করেছেন। তার বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
এ সময় দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের আশঙ্কা, এমনও হতে পারে যে, সাকিব আল হাসান দুদকের আসামিও হতে পারেন।”
এমন আশঙ্কার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটি (অর্থ পাচারের অভিযোগ) আমাদের অনুসন্ধান পর্যায়ে আছে। অনুসন্ধানের পরে বোঝা যাবে।”
সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে ২০২২ সালে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর থেকে তাকে বাদ দেয় দুদক।
জাতীয় ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গত বছরের ২৮ আগস্ট দুদকে একটি আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মিলহানুর রহমান নাওমী।
আবেদনে সাকিবের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, নিষিদ্ধ জুয়ার ব্যবসা ও জুয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, স্বর্ণ চোরাচালানে সম্পৃক্ততা, প্রতারণার মাধ্যমে কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের অর্থ আত্মসাৎ, ক্রিকেট খেলায় দুর্নীতি ও নির্বাচনী হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়।
আর গত বছরের ৮ নভেম্বর সাকিব আল হাসানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার কথা জানায় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
গত বছরের ৫ আগস্ট আদাবরে পোশাক কারখানার কর্মী মো. রুবেল হত্যার ঘটনায় তার বাবা রফিকুল ইসলামের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আরও অনেকের সঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য সাকিবকে আসামি করা হয়।
এছাড়া চেক প্রতারণার এক মামলায় তার সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেয় আদালত। মামলার বাদীর আবেদনে গত ২৪ মার্চ ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জিয়াদুর রহমান ওই আদেশ দেন।
ক্রিকেটার সাকিব নানা ব্যবসায় জড়িত থাকলেও তার সম্পদের পরিমাণ কত, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সময় সাকিব তার সম্পদের যে বিবরণ দিয়েছিলেন, তাতে দেখা যায় তার বার্ষিক গড় আয় ৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। অস্থাবর সম্পদ হিসাবে ব্যাংকে তার জমানো অর্থের পরিমাণ ১১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এছাড়া ২৪ হাজার ২৬১ ডলার বৈদেশিক মুদ্রাও তার হাতে রয়েছে।
পুঁজিবাজারে ৪৩ কোটি ৬৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮৭৪ টাকা বিনিয়োগ থাকার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। ২৫ ভরি সোনা এবং আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী মিলিয়ে ১৩ লাখ টাকার সম্পত্তির কথাও তিনি জানিয়েছিলেন।
পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংকে ৩১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ঋণের তথ্যও নির্বাচন কমিশনকে দিয়েছিলেন এই ক্রিকেটার-ব্যবসায়ী।