Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

নিরাপত্তার অভাবে পাহাড়ে এবার হচ্ছে না কঠিন চীবর দানোৎসব

রাঙ্গামাটির মৈত্রী বৌদ্ধ বিহারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের সভাপতি ভদন্ত শ্রদ্ধালংকার মহাথের। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
রাঙ্গামাটির মৈত্রী বৌদ্ধ বিহারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের সভাপতি ভদন্ত শ্রদ্ধালংকার মহাথের। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

বিদ্যমান পরিস্থিতি ও নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কায় এবছর রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কঠিন চীবর দানোৎসব উদযাপন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্মিলিত ভিক্ষু সংঘ। 

রবিবার দুপুরে রাঙ্গামাটির মৈত্রী বৌদ্ধ বিহারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের সভাপতি ভদন্ত শ্রদ্ধালংকার মহাথের।

একইভাবে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান উদযাপন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজবন বিহারও। সংবাদ সম্মেলন শেষে বনভান্তে শিষ্য সংঘের সহসভাপতি সৌরজগৎ মহাথের জানান, রাজবন বিহারের যতগুলো শাখা বনবিহার আছে সেগুলোতেও এবার চীবর দান অনুষ্ঠান উদযাপন না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

খাগড়াছড়িতে একটি মোটরসাইকেল চুরি ও চোর সন্দেহে পিটুনিতে এক বাঙালি তরুণ নিহতের ঘটনায় গতমাসের মাঝামাঝি সময়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পার্বত্যঞ্চল। এ ঘটনার পরদিন ১৯ সেপ্টেম্বর বিকালে দীঘিনালায় প্রতিবাদ মিছিল বের করেন বাঙালিরা। সেসময় পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে, নিহত হন ধনঞ্জয় চাকমা নামে এক ব্যক্তি।

এর ধারাবাহিকতায় সেদিন আগুন দেওয়া হয় লারমা স্কয়ারের দোকানপাটে, রাতে স্বনির্ভর এলাকায় গুলিতে আরও দুই ত্রিপুরা ও চাকমা তরুণের মৃত্যু হয়। ২০ সেপ্টেম্বর সেই সংঘর্ষ ছড়ায় রাঙ্গামাটিতেও, যেখানে পিটিয়ে হত্যা করা হয় অনিক চাকমা নামে এক কলেজছাত্রকে।

এরপর ১ অক্টোবর খাগড়াছড়ির টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সিভিল কন্সট্রাকশন অ্যান্ড সেফটি বিভাগের ইন্সট্রাকটর আবুল হাসনাত সোহেলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তার বিরুদ্ধে এক আদিবাসী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ছিল। এ ঘটনায় আবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা জেলা, বাধে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৪৪ ধারা জারি করতে হয় প্রশাসনকে।

সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রসঙ্গ টেনেছেন ভদন্ত শ্রদ্ধালংকার মহাথের। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় এসব সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “এ যাবৎকালে যতগুলো সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে, তার কোনও সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয়নি। সরকার লোক দেখানো তদন্ত কমিটি করে, যা আলোর মুখ দেখে না। এর মাধ্যমে ঘটনাগুলোকে বারবার ধাপাচাপা দেওয়া হয়।”

এসব ঘটনায় প্রশাসনের প্রতি আস্থা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, গোটা বৌদ্ধ সমাজ ও ভিক্ষুসংঘ উদ্বিগ্ন-শঙ্কিত। এমন অনিশ্চিত ও নিরাপত্তাহীন পরিবেশে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যাপারে তারা উৎসাহ পাচ্ছেন না।

“তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দায়ক-দায়িকা ও ভিক্ষু সংঘের মধ্যে আলোচনাক্রমে চলতি বছরে কঠিন চীবর অনুষ্ঠান না করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছি।”

বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় গেরুয়া কাপড়কে বলা হয় চীবর। নিয়ম অনুযায়ী, ভিক্ষুরা তিনমাস বর্ষাবাস শেষে ফিরলে তাদের চীবর দান করেন সাধারণ গৃহীরা। এক্ষেত্রে নিয়ম হলো, এসব চীবর বা পোশাক ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে চরকায় সুতা কেটে, সুতা রং করে আগুনে শুকিয়ে সেই সুতায় তাঁতে কাপড় বুনে তৈরি করতে হবে।

বাঙালি বৌদ্ধ সমাজে কঠিন চীবর দান একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিহারগুলোয় আড়ম্বরের সঙ্গে এই উৎসব পালন করা হয়। ভিক্ষুদের চীবর দানের এই সুযোগ পেতে বছরভর অপেক্ষা করেন গৃহী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।

রবিবারের সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বনভান্তে শিষ্য সংঘের সহসভাপতি সৌরজগৎ মহাথের, পার্বত্য ভিক্ষু পরিষদ বান্দরবানের সাধারণ সম্পাদক তেজপ্রিয় মহাথের, কাপ্তাই চিৎমরম রাজনিকায় মার্গের সহসভাপতি জ্ঞানবংশ মহাথের, ত্রিরত্ন ভিক্ষু অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আগ্গাশ্রী মহাথের, খাগড়াছড়ি শাসনা ভিক্ষু সংঘের সভাপতি সুমনা মহাথের, বৌদ্ধ শাসনা ভিক্ষু কল্যাণ পরিষদের সভাপতি সুরিয়েন্টা মহাথের, খাগড়াছড়ি ভিক্ষু অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আগাসার থেরসহ অন্যরা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত