ঢাকার দুটিসহ চারটি সিটি করপোরেশন এলাকার সরকারি চাকরিজীবীদের ব্যক্তি পর্যায়ের আয়কর রিটার্ন অনলাইনে দাখিল বাধ্যতামূলক করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
একইসঙ্গে সারাদেশের সব তফসিলি ব্যাংক, মোবাইল টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানির কর্মীদেরও এই নির্দেশ মানতে হবে।
মঙ্গলবার এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান স্বাক্ষরিত এক বিশেষ আদেশ জারি করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার প্রেক্ষিতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনবিআরের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।
এনবিআরের আদেশে বলা হয়, ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে অবস্থিত আয়কর সার্কেলগুলোর অধিক্ষেত্রভুক্ত সরকারি কর্মচারিদের অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হলো।
এই আদেশে সব তফশিলি ব্যাংক, মোবাইল টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এবং বহুজাতিক কোম্পানি- ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড, ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, বাটা স্যু কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড, নেসলে বাংলাদেশ পিএলসিতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আয়কর রিটার্ন অনলাইনে দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
বর্তমানে দেশে মোট ৬১টি তফসিলি ব্যাংক রয়েছে; এসব ব্যাংকের কর্মীদেরও এই আদেশ মানতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চা্ইলে এনবিআরের আয়কর অনুবিভাগের সংশ্লিষ্ট এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এনবিআরের প্রতি চিফ অ্যাডভাইজার মহোদয়ের নির্দেশনা হচ্ছে- কোনও করদাতা যাতে ইনকাম ট্যাক্স অফিসে না আসে।
“প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেছেন, আমাদেরকে এমনভাবে ডিজিটালাইজড হতে হবে, যাতে কোনও করদাতাকে ইনকাম ট্যাক্স অফিসে আসতে না হয়।”
“সেটা তো আর একদিনে করা যাবে না, আমরা আস্তে আস্তে করার ব্যবস্থা করতেছি” যোগ করেন এনবিআরের ওই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “ইতিমধ্যে আমরা বহুজাতিক কোম্পানি এবং গ্রামীণফোনসহ মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আমরা বসছিলাম। আমরা দীর্ঘক্ষণ তাদের সাথে সভা করেছি। তারা বলেছে তাদের অফিস থেকেই অনলাইনে রিটার্ন দিতে পারবে। যদি তারা কোনও প্রব্লেম ফেইস করে এনবিআর তাদের হেল্প করবে।
“এই কোম্পানিগুলো এবং ব্যাংকগুলো যেহেতু ডিজিটালি ইকুইপড, তাদের অফিসগুলোও তারা ডিজিটালি চালায় এবং তাদের কর্মচারীদের হিসাবগুলি ডিজিটালি রাখে তারা। তাই তাদের পক্ষে অনলাইনে রিটার্ন দেওয়াটা খুব ইজি।”
এদিকে এনবিআর থেকে পাঠানো অন্য একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, চলতি ২০২৪-২০২৫ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিল ও কর পরিশোধ পদ্ধতি সহজীকরণের লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে করদাতাদের জন্য অনলাইন রিটার্ন দাখিল সিস্টেম উন্মুক্ত করেছে। www.etaxnbr.gov.bd ওয়েবসাইট ব্যবহার করে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা সহজে নিজের রিটার্ন তৈরি করে অনলাইনে দাখিল করতে পারছেন।
এ সিস্টেম হতে ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কার্ড পেমেন্ট (ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড) ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে করদাতারা দাখিলকৃত রিটার্নের কপি, প্রাপ্তি স্বীকারপত্র, আয়কর সনদ, টিআইএন সনদ ডাউনলোড ও প্রিন্টের সুবিধা পাচ্ছেন। এছাড়া পূর্ববর্তী বছরের দাখিলকৃত ই-রিটার্ন ডাউনলোড ও প্রিন্ট করতে পারছেন।
ই-রিটার্ন সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় করদাতাদের সহায়তা প্রদানের জন্য এনবিআর একটি কল সেন্টার স্থাপন করেছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ওই কল সেন্টারের ০৯৬৪৩ ৭১ ৭১ ৭১ নম্বরে অফিস চলাকালীন সময়ে ফোন করে করদাতারা ই-রিটার্ন সংক্রান্ত প্রশ্নের তাৎক্ষণিক সমাধান পাচ্ছেন।
এছাড়া, www.etaxnbr.gov.bd এর eTaxService অপশন হতে করদাতারা e-Return সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা লিখিতভাবে জানালে তার সমাধান পাচ্ছেন।
এনবিআর জানায়, ইতোমধ্যেই অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া আরও করদাতা বান্ধব করা হয়েছে। তবে এ জন্য করদাতাদের নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধিত বায়োমেট্রিক সিমের প্রয়োজন হয়।
*১৬০০১# নম্বরে ডায়াল করে বায়োমেট্রিক নিজের নামে কিনা তাও জানা যাবে। কারও সিম নিজের নামে না থাকলে নতুন সিম সংগ্রহ করে নিবন্ধন করতে পারবেন করদাতা, জানায় এনবিআর।
মঙ্গলবার পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ইতিমধ্যেই এক লাখ অতিক্রম করেছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় এক কোটি ৭ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) রয়েছে। এরমধ্যে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩৫ লাখ ৪০ হাজার টিআইএনধারী রিটার্ন দাখিল করেছেন।
এরমধ্যে অনলাইনে প্রায় সাড়ে ৫ লাখের মতো রিটার্ন দাখিল করেছেন বলে এনবিআর থেকে জানানো হয়।
এবার মোট রিটার্ন দাখিল ৫০ লাখ এবং অনলাইনে রিটার্ন দাখিল ১৫ লাখে উন্নীত করার টার্গেট রয়েছ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের।