পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের জালে ধরা পড়ছে ছোট্ট একটি গ্রহাণু। এটি আগামী প্রায় দুই মাস চাঁদের মতো পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করবে।
রবিবার রাত থেকে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ শুরু করা এই গ্রহাণুকে তাই বলা হচ্ছে পৃথিবীর ‘দ্বিতীয় চাঁদ’। আগামী ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত এটি পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে ফের নিজের কক্ষপথে চলে যাবে।
নাসা সায়েন্স বলছে, ২০২৪ পিটি৫ নামের এই গ্রহাণুটিকে একটি অস্থায়ী ‘ছোট চাঁদ’ হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
কারণ হিসেবে তারা বলছে, “প্রাকৃতিকভাবে গঠিত কোনও কাঠামো যদি কোনও গ্রহকে প্রদক্ষিণ করে” তাহলে সেটিকে বিজ্ঞানে চাঁদ বলা হয়। সে হিসাবেই গ্রহাণুটিকে পৃথিবীর চাঁদ বলা হচ্ছে।
তবে পৃথিবীবাসীর কাছে এটি চাঁদের মতো দেখাবে না, কারণ এটি খালি চোখে দৃশ্যমান হবে না।
এমনকি এটি এতোটাই ছোট (প্রস্থে ৩৭ ফুট যা আনুমানিক একটি স্কুল বাসের সমান) এবং এত দূরে (সর্বনিম্ম ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে) থাকবে যে সাধারণ কোনও টেলিস্কোপ দিয়েও একে দেখা যাবে না।
এটি দেখতে একটি সিসিডি বা সিএমওএস ডিজিটাল ডিটেক্টরের সঙ্গে যুক্ত কমপক্ষে ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের একটি টেলিস্কোপ দরকার হবে। তার মানে মহাকাশ পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত পেশাদার টেলিস্কোপ লাগবে।
এমনটাই জানিয়েছেন স্পেনের মাদ্রিদের কমপ্লুটেন্স ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক কার্লোস দে লা ফুয়েন্তে মার্কোস। তিনি গ্রহাণুটির সহ-আবিষ্কর্তা। এটি প্রথম শনাক্ত করেন অপর স্প্যানিশ বিজ্ঞানী রাউল দে লা ফুয়েন্তে মার্কোস। তারা দুজনেই নাসায় কর্মরত।
গত ৭ আগস্ট টেরেস্ট্রিয়াল-ইমপ্যাক্ট লাস্ট অ্যালার্ট সিস্টেম (এটিএলএএস) দিয়ে তারা গ্রহাণুটি আবিষ্কার করেন। এটিএলএএস হাওয়াই থেকে চালিত নাসার একটি স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম, যা পৃথিবীর কাছাকাছি আসা গ্রহাণু নিরীক্ষণ করতে ব্যবহৃত হয়।
কার্লোস মার্কোস স্পেস ডটকমকে বলেন, “গ্রহাণুটি অর্জুন গ্রহাণু বেল্টের অন্তর্গত। এটি মহাকাশীয় পাথরের তৈরি একটি গৌণ গ্রহাণু বেল্ট যা পৃথিবীর মতোই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। বেল্টটি সূর্য থেকে গড়ে ১৫ কোটি কিলোমিটার দূর দিয়ে ঘোরে।
“অর্জুন গ্রহাণু বেল্টের বস্তুগুলো পৃথিবীর কাছাকাছি যেসব গ্রহাণু ও ধূমকেতু রয়েছে, সেগুলোরই অংশ।”
পৃথিবীর দ্বিতীয় চাঁদ পাওয়ার ধারণাটি অসাধারণ শোনালেও, এই ধরনের মহাকর্ষীয় ঘটনা বেশ সাধারণ এবং প্রায়ই ঘটে থাকে।
মার্কোস ব্যাখ্যা করেন, “অর্জুন গ্রহাণু বেল্টের কিছু বস্তু প্রায় ২৮ লাখ মাইল (৪৫ লাখ কিলোমিটার) কাছাকাছি পরিসরে এবং ঘণ্টায় ২ হাজার ২০০ মাইল (৩ হাজার ৫৪০ কিলোমিটার/ঘণ্টা) বেগে পৃথিবীর কাছে আসতে পারে।
“গ্রহাণু ২০২৪ পিটি৫ পৃথিবীর চারপাশে একটি সম্পূর্ণ কক্ষপথ অনুসরণ করবে না। অনেকটা জানালায় উঁকি দেওয়ার মতো করে চলে যাবে।”
পৃথিবীর চারপাশে সংক্ষিপ্ত ভ্রমণের পরে গ্রহাণুটি তার অর্জুন গ্রহাণু পরিবারে ফিরে যাবে এবং ফের ওই পরিবারের অংশ হিসাবে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে থাকবে।
অর্জুন গ্রহাণুপুঞ্জের নামটি দিয়েছেন এর আবিষ্কর্তা ম্যাকনট। মহাভারতের নায়ক অর্জুন পৌরাণিক কাহিনীতে তার সাহসিকতা, ধনুর্বিদ্যার দক্ষতা, প্রজ্ঞা এবং আধ্যাত্মিকতার জন্য পরিচিত।
গ্রহাণুপুঞ্জটিও সৌরজগতের মধ্য দিয়ে দ্রুত গতিতে প্রদক্ষিণ করে, যেমনি করে অর্জুনও অনেক দ্রুতগতিতে তীর ছুড়তে পারতেন। তেমনিভাবে অর্জুনের জটিল চরিত্রের মতোই গ্রহাণুপুঞ্জটির গতি-প্রকৃতিও আগে থেকে অনুমান করা যায় না।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন (আইএইউ) আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহাণুটির এই নামের অনুমোদন দিয়েছে।
অর্জুন ছাড়া সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহাণুপুঞ্জগুলো হল- অ্যাপোলো, আতিরা, আমোর ও অ্যাটেন।
২০২৪ পিটি৫ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের জালে ধরা পড়া প্রথম গ্রহাণু নয়। এর আগেও বিজ্ঞানীরা অন্তত দুবার এক সপ্তাহ ধরে এবং দুবার কয়েক মাস থেকে বছর ধরে এমন ঘটনা শনাক্ত করেছেন।
এমন ঘটনা প্রতি দশকে কয়েকবার ঘটতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের অনুমান। তবে সব ঘটনাই বিজ্ঞানীদের পক্ষে শনাক্ত করা সম্ভব হয় না।
চাঁদ আমাদের সঙ্গে আছে প্রায় ৪০০ কোটি বছর ধরে। তবে ‘দ্বিতীয় চাঁদের’ মতো অস্থায়ী ছোট চাঁদগুলো মাত্র কয়েক সপ্তাহ থেকে সর্বোচ্চ বছর খানেক থাকতে পারে।