Beta
শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

নিবন্ধন হারানোর ঝুঁকি গা করছেন না কাদের সিদ্দিকী

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।
[publishpress_authors_box]

অতিরিক্ত সময়েও সংসদ নির্বাচনের দলীয় ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে জমা না দেওয়ায় নিবন্ধন হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।

তবে বিষয়টি আমলে নিতে চাইছেন না প্রবীণ এই রাজনীতিক। তিনি বলছেন, ৭ জানুয়ারির ভোটে দলীয়ভাবে এক টাকাও খরচ হয়নি তাদের। আয়-ব্যয়ের হিসাব আবার কি- পাল্টা এমন প্রশ্নও সকাল-সন্ধ্যার কাছে তুলেছেন দুই বারের সংসদ সদস্য কাদের সিদ্দিকী।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা বলছেন, ভোটে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যে এক টাকাও খরচ হয়নি- এটা বাস্তবসম্মত নয়। এক টাকাও খরচ না হলেও সে হিসাব কমিশনে দেওয়া বাধ্যতামূলক। না দিলে কমিশন চাইলে আইন অনুযায়ী দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে।   

কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, ১৫ দিন অতিরিক্ত সময় দিয়ে ১০ হাজার টাকা জরিমানার শর্তে নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব দেওয়ার সুযোগ দিয়েছিল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ তিনটি দলকে।

কমিশনের দেওয়া এই সুযোগ লুফে নিয়ে শেষ দিন বুধবার ১০ হাজার টাকা জরিমানাসহ ব্যয়ের হিসাব বিবরণী জমা দিয়েছে মাছ প্রতীকের দল গণফ্রন্ট এবং কুঁড়েঘর প্রতীকের বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি। তাই দল দুটি নিবন্ধন হারানোর ঝুঁকি থেকে বেঁচে গেছে।

কমিশনের দেওয়া শেষ এই সুযোগ লুফে না নেওয়ায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ -১৯৭২ (আরপিও) অনুযায়ী নিবন্ধন হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছে কাদের সিদ্দিকীর দল- কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।

৭৭ বছর বয়সী কাদের সিদ্দিকী দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে। ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ ছেড়ে নতুন দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গড়েন তিনি।

দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ৪৪টি। গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৮টি দল অংশ নেয়। বিএনপিসহ সমমনা ১৬টি দল ভোট বর্জন করে। দ্বাদশ ভোটে অংশ নেওয়া ২৮টি দলের মধ্যে ২৫টি দল ব্যয়ের হিসাব জমা দেয় নিয়ম মেনেই।

কী বলছে আরপিও

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ৪৪গগগ(১) ও (৫) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন সমাপ্ত হওয়ার ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যয় বিবরণী নির্বাচন কমিশনে দাখিল করার বিধান রয়েছে।

আরপিওর নির্বাচনী ব্যয় অধ্যায়ের বিধি ৫-এ বলা হয়েছে, সংসদ নির্বাচনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনও রাজনৈতিক দল নির্বাচনী ব্যয় জমা না দিলে কমিশন এক মাস সময় দিতে পারে।

সেই এক মাসের মধ্যেও হিসাব জমা না দিলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে, পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে হিসাব জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। কোনও দল অতিরিক্ত এ সময়ের মধ্যেও হিসাব জমা না দিলে সে দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে নির্বাচন কমিশন।

কত ব্যয় করতে পারে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ -১৯৭২ নির্বাচনী ব্যয় অধ্যায়ে বলা আছে, রাজনৈতিক দলগুলো মনোনীত প্রার্থীর জন্য কমিশনের নির্ধারিত ব্যয়ের বাইরে নির্বাচনী ব্যয় করতে পারবে না। প্রার্থী প্রতি সর্বোচ্চ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারে দলগুলো।

প্রার্থী ২০০ জনের বেশি হলে ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবে দল। কোনও দলের ১০০ জনের বেশি, কিন্তু ২০০ জনের কম প্রার্থী থাকলে তারা নির্বাচনে খরচ করতে পারবে ৩ কোটি টাকা। প্রার্থী ৫০ জনের বেশি বা ১০০ জনের কম হলে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করা যাবে দলীয়ভাবে। আর ৫০ জনের বেশি না হলে ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবে দলগুলো।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গামছা প্রতীকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ৩০ জন প্রার্থী লড়েন। মাছ প্রতীক নিয়ে গণফ্রন্টের ২১ জন প্রার্থী ছিলেন ভোটের মাঠে। আর কুঁড়েঘর প্রতীকে বাংলাদেশ ন্যশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ এর ৫ নেতা ভোটযুদ্ধে অংশ নেন।

এই তিন দলের ৫৬ প্রার্থীর কেউই নির্বাচনে জয়ের দেখা পাননি। তিনটি দলের প্রার্থীই ছিল ৫০ জনের কম। আরপিওর দলীয় ব্যয়ের হিসাব অনুযায়ী কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ খরচ করতে পারত। গণফ্রন্ট খরচ করতে পারত ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এবং ন্যশনাল আওয়ামী পার্টি ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

দলীয় খরচের বাইরে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, প্রার্থী নিজে নির্বাচনী ব্যয় করতে পারেন সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা। সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় ভোটারপ্রতি ১০ টাকা ব্যয় করতে পারেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুটি দলের জরিমানাসহ আয়-ব্যয়ের হিসাব তারা পেয়েছেন। যে দলের কোনও খরচ হয়নি তারাও জানাবে যে তাদের কোনও খরচ হয়নি। কৃষক শ্রমিক দলের কেউ কমিশনে ব্যয় বিবরণী নিয়ে আসেননি। এ সংক্রান্ত একটি ফাইল কমিশনে উপস্থাপন করা হবে। কমিশন চাইলে নিবন্ধন বাতিল করতে পারে।

যা বলছেন কাদের সিদ্দিকী

নির্ধারিত সময়ে আয়-ব্যয়ের হিসাব জামা না দেওয়ায় অতিরিক্ত ১৫ দিন সময় দিয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকেও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছিল কমিশন।

অতিরিক্ত সময়েও হিসাব জমা না দেওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে দলটির সভাপতি কাদের সিদ্দিকী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এ বিষয়ে আমার জানা নেই।”

কিন্তু গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ -১৯৭২ অনুযায়ী দলগুলোর আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেওয়ার একটা বিধান রয়েছে। আপনি কি জমা দিয়েছেন?

সকাল সন্ধ্যার এ প্রশ্নে অনেকটা বিরক্ত হয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, “আমার তো দলীয়ভাবে এক টাকাও খরচ হয়নি। আয়-ব্যয়ের হিসাব আবার কি? দেশে কোনও ন্যায় নেই। যার ফলে তারা যা খুশি করতে পারে। তারা যদি জেরা করে করুক।”

গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অনুপম শাহজাহানের কাছে প্রায় ২৯ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরে যান কাদের সিদ্দিকী।

এই আসনে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন তিনি। তবে ১৯৯৯ সালে পদত্যাগ করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে একই আসনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন তিনি।

ঝুঁকিমুক্ত গণফ্রন্ট ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি

জরিমানা দিয়ে নিবন্ধন হারানোর ঝুঁকি কাটিয়েছে মাছ প্রতীকের দল গণফ্রন্ট ও কুঁড়েঘর প্রতীকের দল বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি।

এক প্রশ্নের জবাবে গণফ্রন্টের মহাসচিব আহমেদ আলী শেখ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “হ্যাঁ। আমরা আয়-ব্যয়ের হিসাব জরিমানার টাকাসহ জমা দিয়েছি। আজকেই বোধ হয় জমা দিয়েছে।”

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি আইভি আহমেদ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমাদের ইলেকশন কমিশনের সঙ্গে সব রফাদফা হয়ে গেছে। আমাদের যা যা করণীয় তা আমরা করেছি। হ্যাঁ। আমরা তো আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিয়েছি।”

কমিশন থেকে যে চিঠিটা আসার কথা ছিল সেটা সময়মতো পৌঁছায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রথম এবং দ্বিতীয় চিঠি দুটোই আমাদের হাতে দেরিতে এসেছে। তাই চিঠির জন্য আমাদের এমন হয়েছে।”

নির্বাচন কমিশন যা বলছে

কাদের সিদ্দিকী দাবি করেছেন তার দলীয়ভাবে কোনও খরচ হয়নি।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “দলীয়ভাবে খরচ না করলেও উল্লেখ করতে হবে দলীয়ভাবে আমরা এক পয়সাও খরচ করিনি। আইনে আছে খরচ না করলেও সে হিসাবটা দিতে হবে।”

যদি না দেয় তাহলে কি হবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আইন অনুযায়ী তাহলে নিবন্ধন বাতিল হবে। নিবন্ধন ফেরত পেতে চাইলে কোর্টে যেতে হবে। আইন মেনে নির্বাচন কমিশনের কাজ নির্বাচন কমিশন করবে।”

নির্বাচনে দলীয়ভাবে এক টাকাও খরচ হয়নি- কাদের সিদ্দিকীর এই দাবি বাস্তবসম্মত নয় বলেও মন্তব্য করেন নির্বাচন কমিশনের এই অতিরিক্ত সচিব।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত