Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সিইসির ভাবনায় পদত্যাগ নেই

ইসির পদত্যাগের দাবি সম্বলিত এই ব্যানার ঝুলছে নির্বাচন ভবনে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ইসির পদত্যাগের দাবি সম্বলিত এই ব্যানার ঝুলছে নির্বাচন ভবনে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
Picture of খাইরুল বাশার

খাইরুল বাশার

দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের পদত্যাগের হিড়িক চলছে; সাংবিধানিক পদের প্রধানও বাদ যাচ্ছে না। ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে নির্বাচন কমিশনারদের পদত্যাগের দাবি সম্বলিত একটি ব্যানার ঝুলছে। তবে নির্বাচন কমিশনে কোনও হেলদোল দেখা যাচ্ছে না।

সরকার পতনের এক সপ্তাহ পর সোমবার নির্বাচন ভবনে সিইসিসহ সব নির্বাচন কমিশনাররা এক বৈঠকে বসলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে যে তারা পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। তবে পরে নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় যে এমন কোনও সিদ্ধান্ত তারা এখনও নেননি।

পদত্যাগের বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়েছে কি না- এই প্রশ্নে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “না, না। সবাই আসে না তো। অনেকদিন পর সবাই একসঙ্গে এসেছেন। চা-সিঙ্গারা খেয়েছি, গল্প করেছি। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ করেছি। পদত্যাগ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি আমরা।”

নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমানও পদত্যাগের গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “এটা সঠিক না। আমরা এনিয়ে কিছুই আলোচনা করি নাই। পদ্ধতিগত বিষয় আছে। পদ্ধতি মেনেই সব হবে।”

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট দেশ ছাড়ার পর গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।

এর আগে ১৯৯০ সালে, ১৯৯৬ সালে এবং ২০০৬ সালে আন্দোলন-অস্থিরতার মধ্যে সরকার পরিবর্তনের পর প্রথমেই নির্বাচন কমিশনারদের পদত্যাগ করতে হয়েছিল।

নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা। ফাইল ছবি

এবার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের চাপে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারও বিদায় নিয়েছেন। স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরাও পদত্যাগ করছেন।

শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পরদিনই রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আন্দোলনকারী বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের চাপে সংসদ বিলুপ্ত করেন।

সংবিধান অনুযায়ী, সংসদ ভেঙে যাওয়ার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হয়। যদি দৈব দুর্বিপাকে তা না করা যায়, তাহলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে।

তবে সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা না থাকলেও জরুরি পরিস্থিতির প্রয়োজনে যে ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন যে সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, তারা কতদিন থাকবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছেন- জানতে চাইলে সিইসি বলেন, “ওসব ব্যাপারে এখন কোনও মন্তব্য করব না। পরে কথা বলবো। ফর্মালি আপনারা আসেন, তারপর।”

নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, “তিন মাসে নির্বাচন হবে না, সেটা সবাই বোঝে। ছয় মাসে হয় কি না, সন্দেহ।

“কমিশনের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের যোগাযোগ হয়নি। কমিশন পুনর্গঠনের দাবি সবারই আছে, এটা সবাই বোঝে। ওই রেজিমের কেউ থাকবে না। কিন্তু স্যারদের বাধ্য করা বা চাপ দেওয়া হয়নি।”

নির্বাচন নিয়ে প্রশ্নে আনিছুর রহমান বলেন, “আমাদের কিছু ভাবার নাই। আমরা অপেক্ষায় আছি, সামনে কিছু আসে কি না “

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গত ৮ অগাস্ট বঙ্গভবনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েও অনুপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনাররা। ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় পুলিশ না থাকায় ইচ্ছা থাকার পরও তারা যেতে পারেননি বলে ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়।

এরপর কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন পূর্ণাঙ্গ কমিশন সোমবারের আগে একসাথ হয়নি। এদিন সবাই মিলে ঘণ্টাব্যাপী অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেন বলে ইসি কর্মকর্তারা জানান।

সিইসির একান্ত সচিব রিয়াজ উদ্দিন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আজকে কমিশনের সবাই উপস্থিত ছিলেন। সিইসি স্যার তো বৃহস্পতিবার থেকে অফিস করতেছেন। আহসান (আহসান হাবিব) স্যার আরও আগে থেকে অফিস করতেছেন। আলমগীর (মো. আলমগীর) স্যার মাঝখানে অফিস করেছেন। কালকে আসে নাই আজকে আসছেন। আনিছ (আনিছুর রহমান) স্যার আজকে আসছেন। এই কারণে আজকে ফুল হয়েছে।”

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনা সরকারের সহযোগী সবাইকে পদ থেকে হটানোর আহ্বান রয়েছে। বর্তমান ইসি ‘সরকারের আজ্ঞাবহ’ ছিল বলে সমালোচনাও রয়েছে।

তবে ইসির পদত্যাগ দাবিতে নির্বাচন ভবনে পিভিসি ব্যানার কারা লাগিয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। ব্যানারের নিচে লেখা রয়েছে ‘ছাত্র জনতা’।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউনূস সরকারের শপথের দিন প্রথমে একটি ব্যানার লাগানো হয়। পরে ধাপে ধাপে ব্যানারের সংখ্যা বাড়তে থাকে। নির্বাচন ভবনের সামনে যে চত্বর রয়েছে, সেখানেও একই ব্যানার দেখা যায়।

ব্যানারে লেখা রয়েছে যে, “স্বৈরাচারী গণহত্যাকারী হাসিনার দোসর নির্লজ্জ, বেহায়া ও ঘৃণিত ছিঃ ইসি এবং নির্বাচন কমিশনারদের পদত্যাগ চাই।”

২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেয় কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি। সাংবিধানিক এই সংস্থায় পাঁচ বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছে তারা।

অন্য কমিশনাররা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান, অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব আনিছুর রহমান।

এই কমিশনের অধীনে এই বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়। তবে সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত