স্থানীয় সরকারের উপজেলা পরিষদ ভোটের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ৪ মে থেকে শুরু করে চার ধাপে এই ভোট শেষ করতে চায় কমিশন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২৫ মে শেষ হবে উপজেলা পরিষদ ভোটের কর্মযজ্ঞ।
মঙ্গলবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ২৭তম কমিশন সভা শেষে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন চার কমিশনার।
সভায় জাতীয় সংসদের ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের ভোটের তারিখও ঠিক করা হয়। সচিব জানান, আগামী ১৪ মার্চ এই ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
চারধাপে উপজেলা ভোট
চার ধাপের উপজেলা ভোটের তারিখ জানালেও কবে কোন উপজেলায় ভোট সে সম্পর্কে এখনও বিস্তারিত তথ্য দেয়নি কমিশন। এসব তথ্য জানতে অপেক্ষা করতে হবে আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত।
এই ভোট কোন পদ্ধতিতে হবে অর্থাৎ ব্যালট নাকি ইভিএম ব্যবহার করে তা জানা যাবে পূর্নাঙ্গ তফসিল ঘোষণার পর।
ইসি সচিবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ধাপে ভোট হবে ৪ মে। দ্বিতীয় ধাপে ১১ মে, তৃতীয় ধাপে ১৮ মে এবং চতুর্থ ধাপে ভোট হবে ২৫ মে।
কোন উপজেলা কোন ধাপে পড়বে সে প্রসঙ্গে ইসি সচিব বলেন, “উপজেলার শপথ গ্রহণ শেষে প্রথম যে সভা সে তারিখ অনুযায়ী চূড়ান্ত করে কমিশনের ওয়েবসাইটে দিয়ে দেওয়া হবে। আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকে ওয়েবসাইটে এই তালিকা দেখতে পাওয়া যাবে।”
ভোটগ্রহণের পদ্ধতি এখনও চূড়ান্ত হয়নি জানিয়ে সচিব বলেন, তফসিল চূড়ান্ত হলে সিদ্ধান্তও জানানো হবে।
দেশে বর্তমানে ৪৯৫টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। ২০১৯ সালের ১০ মার্চ ভোট শুরু হয়ে পাঁচ ধাপে জুনে গিয়ে শেষ হয়।
আইন অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদের মেয়াদ শুরু হয় প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। আর নির্বাচন করতে হয় মেয়াদপূর্তির আগের ১৮০ দিনের মধ্যে। সে অনুযায়ী এরই মধ্যে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়ে গেছে।
সংরক্ষিত নারী আসনে ভোট
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনে আগামী ১৪ মার্চ ভোট করতে চায় কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন।
নারী আসনের ভোটের তফসিল ঘোষণা করলেও মূলত এ ভোট আয়োজন করতে হয় না। কারণ প্রার্থিতা প্রত্যাহারের দিনই চূড়ান্ত হয়ে যায় যে, সংরক্ষিত আসনে কোন কোন নারী বসতে যাচ্ছেন।
জাহাংগীর আলম জানান, সংসদের ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি পদপ্রার্থীরা মনোনয়পত্র দাখিল করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে। সময় সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪ টা। রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করবেন ১৯-২০ ফেব্রুয়ারি।
বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের ২২ ফেব্রুয়ারি। আপিল নিষ্পত্তি হবে ২৪ ফেব্রুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ২৭ ফেব্রুয়ারি।
ভোটগ্রহণ হবে ১৪ই মার্চ। সেদিন সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত সংসদে ভোটগ্রহণ চলবে।
সংরক্ষিত আসনের এই ভোটে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবে নির্বাচন কমিশন সচিবলায়ের অর্থ ও প্রশাসন অনুবিভাগের যুগ্মসচিব মো. মনিরুজ্জামান। তাকে সহায়তা করার জন্য একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং একজন পোলিং কর্মকর্তা থাকবেন।
বর্তমান সংসদের ২৯৯ আসনের প্রজ্ঞাপনের প্রসঙ্গ টেনে জাহাংগীর আলম বলেন, “সংসদে আওয়ামী লীগের আসন ২২৩টি, স্বতন্ত্র ৬২ টি। তারা একত্রে অর্থাৎ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের অংশের নারী সদস্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে দিয়েছেন। জাতীয় পার্টি ১১টি আসনের হিসেবে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে। ফলে আইন অনুযায়ী প্রাপ্যতার হিসেবে জাতীয় পার্টি পাবে দুটি আসন। আওয়ামী লীগ, স্বতন্ত্র এবং তাদের ১৪ দলীয় জোট মোট ৪৮ টি আসন পাবে। এ বিভাজন অনুযায়ী মনোনয়পত্র দাখিল ও বাছাই পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হবে।”
সংসদের সংরক্ষিত ৫০ নারী আসন বণ্টিত হয় সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে, সরাসরি ভোটে জয়ী দলগুলোর আসন সংখ্যার ভিত্তিতে।
আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসন পাওয়ার পাশাপাশি তাদের জোট শরিক দল জাসদ একটি এবং ওয়ার্কার্স পার্টি একটি আসনে জেতে। জাতীয় পার্টি পায় ১১টি আসন। স্বতন্ত্ররা ৬২ আসন।
সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নারী আসনের ৫০টির মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৮টি, জাতীয় পার্টি দুটি ও স্বতন্ত্ররা ১০টি আসনের দাবিদার হয়।
আইন অনুযায়ী, ৬২ জন স্বতন্ত্রদের নিজেরা জোট গঠন করে সংরক্ষিত আসনের ১০টি নেওয়ার সুযোগ ছিল। একাদশ সংসদে স্বতন্ত্ররা জোট করে একটি আসন নিয়েছিল।