দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর কুড়িয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনারদের অকুণ্ঠ প্রশংসা, ‘দক্ষতার পুরস্কার’ হিসাবে পেয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের পদ; রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গ্রেপ্তার হলেন সেই মো. জাহাংগীর আলম।
তাকে মঙ্গলবার ঢাকার গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়েছে।
কী অভিযোগে জাহাংগীর গ্রেপ্তার হয়েছেন, সে বিষয়ে কিছু বলেনি পুলিশ। তবে এই সময়ে জাহাংগীরের মতো আরও অনেককে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে নিহতের ঘটনায় কোনও মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পটুয়াখালীর সন্তান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী জাহাংগীর বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ত্রয়োদশ ব্যাচের কর্মকর্তা হিসাবে ১৯৯৪ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে যুগ্ম সচিব এবং অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্ব পালনের পর ২০২২ সালে তিনি পদোন্নতি পেয়ে সচিব হন এবং নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে আসেন।
তার মেয়াদের মধ্যেই এই বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের বর্জনের মধ্যে এই নির্বাচন করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জও ছিল ইসির সামনে।
সেই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় নিয়ে টানা চতুর্থ বার সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ; যদিও সমালোচনা ছিল ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে।
ভোটের ১০ দিন পর কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানাতে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিলেন। সেখানই সচিব জাহাংগীরের প্রশংসা ঝরে নির্বাচন কমিশনারদের মুখে।
তৎকালীন সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, “বিশাল কর্মযজ্ঞের সিংহভাগ কাজ করতে হয়েছে ইসি সচিবালয়কে। সচিবের সঙ্গে আমি দীর্ঘ চার বছর সহকর্মী হিসেবে একসঙ্গে কাজ করেছি। আশ্বস্ত ছিলাম কাজগুলো দক্ষতার সঙ্গে তুলে আনতে পারবে। সেটা তিনি প্রমাণ করেছেন।”
তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেছিলেন, “আমাদের কনিষ্ঠ সহকর্মী উনি (সচিব)। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন।
“আমরা জানি, উনি ভালো একজন অফিসার। উনি আরও বড় দপ্তরে কিছুদিনের মধ্যে চলে যাবেন বলে গুঞ্জন আছে বিভিন্ন জায়গায়।”
সেই বৈঠকের চার মাসের মধ্যে গত মে মাসে জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছিল জাহাংগীরকে।
তবে তার দুই মাস পর জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন গণবিস্ফোরণে রূপ নেয়। তাতে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের।
এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হওয়ার পর গত ১৪ আগস্ট বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় জাহাংগীরকে। তার দেড় মাস পর গ্রেপ্তার হলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন ইসিও পদত্যাগ করেছে।