Beta
বুধবার, ৯ জুলাই, ২০২৫
Beta
বুধবার, ৯ জুলাই, ২০২৫

ভাইরাল থেকে ‘নতুন মেসি’, এখন তিনি ম্যান সিটির

আর্জেন্টাইন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ক্লাউদিও এচেভেরি। ছবি: টুইটার
আর্জেন্টাইন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ক্লাউদিও এচেভেরি। ছবি: টুইটার
[publishpress_authors_box]

সোশাল মিডিয়ার এই যুগে ইতিবাচক-নেতিবাচক দুই ক্ষেত্রেই ‘ভাইরাল’ শব্দটা খুব ব্যবহার হয়। এই ‘ভাইরাল’ রাতারাতি একটা মানুষের জীবন বদলে দিচ্ছে। ইতিবাচক দিক থেকে দেখলে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে খোঁজ মিলছে প্রতিভাবানদের। যারা হয়তো কখনও আলোচনাতেই আসতেন না।

ফুটবলে এই ব্যাপারটা সবচেয়ে বেশি। সোশাল মিডিয়ার কল্যাণে পেশাদারি ফুটবল শুরুর আগেই অনেকে রাতারাতি তারকাখ্যাতি পেয়ে যাচ্ছেন দুর্দান্ত গোল কিংবা ব্যক্তিগত নৈপুন্যের ঝলক দেখিয়ে। এই জায়গায় সবচেয়ে বড় উদাহরণ হতে পারেন ক্লাউদিও এচেভেরি। ম্যানচেস্টার সিটির নতুন সাইনিং, আর্জেন্টিনার ‘নতুন মেসি’।

যেভাবে ভাইরাল

এচেভেরির বয়স তখন ১১। রিভার প্লেটের যুব দলের হয়ে ২০১৭ সালে নেমেছিলেন ভেনিস চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। আতলেতিকো মাদ্রিদ, আয়াক্স, ‍জুভেন্টাস ও চেলসিকে নিয়ে আয়োজিত সেভেন-এ-সাইড টুর্নামেন্টে রীতিমতো ভাইরাল এচেভেরি! ছয় ম্যাচে ৯ গোল করার পথে তার খেলা ছিল চোখজুড়ানো। প্রতিযোগিতাটিতে রিভার প্লেটকে চ্যাম্পিয়ন করাতে পারেননি, তবে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের সৌরভ ছড়িয়ে দেন গোটা বিশ্বে। তার গোল ও ফুটবল শৈলী যে ততদিনে সোশাল মিডিয়ার কল্যাণে ‘ভাইরাল’!

কিশোর বয়সেই প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছিলেন এচেভেরি। দিনে দিনে সেটি আরও উজ্জ্বলতা ছড়াচ্ছে। খেলার ধরন ও গোল করার সামর্থ্য তাকে বসিয়ে দিচ্ছে লিওনেল মেসির পাশে। আর্জেন্টিনার কোনও কিশোর ভালো খেললেই তাকে ‘নতুন মেসি’ নামে ডাকা হয়, বিষয়টা পুরনো। তবে এচেভেরির ক্ষেত্রে বিষয়টি আলাদা। গত দুই-তিন বছরে রিভার প্লেট ও আর্জেন্টিনার বয়সভিত্তিক দলে তার যে পারফরম্যান্স, তাতে ছোটবেলার মেসির স্মৃতিই মনে করিয়ে দিচ্ছেন তিনি।

জয়ী ম্যান সিটি

‘নতুন মেসি’- এই ট্যাগ লাগা খেলোয়াড়কে ইউরোপের বড় বড় দলগুলো তো চাইবেই। হাত বাড়িয়েছিল বেশ কয়েকটি ক্লাব। তবে এচেভেরিকে পাওয়ার লড়াইয়ে সবাইকে পেছনে ফেলে জয়ী ম্যান সিটি। ইংলিশ ক্লাবটি নিশ্চিত করেছে, ১৪.৬৫ মিলিয়ন ইউরোতে আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডারের ব্যাপারে রিভার প্লেটের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছে তারা।

গত ২ জানুয়ারি ১৮ পূরণ করেছেন এচেভেরি। কিছুদিনের মধ্যেই হলেন ইউরোপের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লিগের চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য। এখনই অবশ্য ম্যান সিটি যোগ দিচ্ছেন না, ইংলিশ চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে সাড়ে চার বছরের চুক্তি সেরে আপাতত ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত থাকছেন শৈশবের ক্লাব রিভার প্লেটেই।

ফুটবলের শুরু ও রিভার প্লেট যাত্রা

আর্জেন্টিনার উত্তর-পূর্বের প্রদেশ চাকোর রাজধানী রেসিস্তেনসিয়া। ২০০৬ সালে এখানেই জন্ম এচেভেরির। একেবারে ছোটবেলাতেই বাবার কাছে ফুটবলের বেসিক শিক্ষা নেওয়া। এরপর মা ও দুই ভাইয়ের সহযোগিতায় শুরু তার ফুটবল জার্নি। স্থানীয় ক্লাব দেপের্তিভো লুহান প্রথমবার সুযোগ দেয় তার প্রতিভা বিকশিত করার। ছোট থেকেই পায়ে ছিল ম্যাজিক, রিভার প্লেটের স্কাউট টিমের নজরে পড়তে তাই সময় লাগেনি। আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্লাবের ট্রায়ালে ডাক পড়ে। মনও জিতে নেন ক্লাব কর্তৃপক্ষের। রিভার ঘোষণা দেয়, এভেচেরিকে তারা দলে টানবে। কিন্তু বাগড়া বাধান এভেচেরি নিজেই!

সেই গল্পটা রিভারের সেই সময়কার রিক্রুমেন্ট ডিরেক্টর দানিয়েল ব্রিজুয়েলা শুনিয়েছেন এক সাক্ষাৎকারে, “আমরা সবাই মনুমেন্তালের (রিভারের স্টেডিয়াম) সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ওই সময় এচেভেরি এসে বলল, ‘আমি রিভারের বড় ভক্ত। এখানে অবশ্যই আসতে চাই। কিন্তু যদি আমার মা না চায় তাহলে আমি চাকোতে ফিরে যাব।”

ফিরতে হয়নি এচেভেরিকে। রিভারের তখনকার কোচ মার্সেলো গায়ার্দো ও সভাপতি রোদোলফো দি’ওনোফ্রিও হাতছাড়া করতে চাননি এই খেলোয়াড়কে। বুয়েনস এইরেসের এক ফ্ল্যাটে তার মায়ের থাকার বন্দোবস্ত করার পরই রিভারের ‍একাডেমিতে যোগ দেন এচেভেরি।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে রিভার প্লেটের রিজার্ভ দলে সুযোগ পাওয়ার দুই মাস পরই পেয়ে যান প্রথম পেশাদার চুক্তির প্রস্তাব। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে যেমন তিনি কার্যকর, তেমনি খেলতে পারেন লেফট উইংয়েও। এ কারণেই অনেকে তার মাঝে দেখেন মেসির ছায়া। তাছাড়া তার পায়ে বল ধরে রাখার ক্ষমতাও মেসির কথা মনে করিয়ে দেয়।

মেসিকে দেখার পর স্মরণীয় বিশ্বকাপ

গত বছরের মার্চে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ‘স্মরণীয় মুহূর্ত’ কাটিয়েছেন এচেভেরি। আর্জেন্টিনার মূল দল তখন জাতীয় দলের ক্যাম্পে। ‍অন্যদিকে আর্জেন্টিনার অনূর্ধ্ব-১৭ দলের বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে ছিলেন এচেভেরি। সেখানেই তার দেখা করার সুযোগ হয় মেসির সঙ্গে। তার কাছে ওটা ছিল ‘জীবনের অন্যতম সেরা সময়’।

অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে গিয়েও দারুণ সময় কাটিয়েছেন তিনি। ওই টুর্নামেন্টে পেরুর বিপক্ষে এচেভেরির পারফরম্যান্স নিয়ে আলোচনা হয়েছে গোটা ফুটবল বিশ্বে। আর্জেন্টিনা সেমিফাইনালে বাদ পড়লেও তিনি ছিলেন অনন্য। সাত ম্যাচে ৫ গোল, যার মধ্যে রয়েছে ব্রাজিলের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে তার করা তৃতীয় গোলটি মনে করিয়ে দিয়েছিল ২০২১ সালে ব্রাজিলের বিপক্ষে মেসির করা বিখ্যাত সেই গোলটির কথা- ক্ষীপ্রগতিতে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সের ভেতরে গোলকিপারকে কাটিয়ে লক্ষ্যভেদ। ‘নতুন মেসি’ তো আর এমনি ডাকা হচ্ছে না তাকে!

ইউরোপের কঠিন চ্যালেঞ্জ

অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপেই ইউরোপের বড় ক্লাবগুলোর নজরে পড়ে যান এচেভেরি। রিয়াল মাদ্রিদ, আতলেতিকো মাদ্রিদ, ম্যান সিটি, প্যারিস সেন্ত জার্মেই, জুভেন্টাস, ইন্টার মিলান, এসি মিলান ও বেনফিকার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। যদিও প্রাথমিকভাবে এচেভেরিকে পাওয়ার দৌড়ে এদের সবার চেয়ে এগিয়ে ছিল বার্সেলোনা। তবে বাস্তবে ঘটল অন্যকিছু। বার্সেলোনা নয়, আর্জেন্টিনার ‘নতুন মেসি’র ঠিকানা হলো ম্যান সিটি।

আর্জেন্টিনা ও ম্যান সিটির সাফল্যের রসায়নটা দারুণ। আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়ের ছোঁয়ায় ক্লাবটির অনেক সাফল্য জড়িয়ে আছে। পাবলো জাবালেতা, কার্লোস তেভেজ ও সের্হিয়ো আগুয়েরো নতুন দিনের পথে নিয়ে গেছেন ক্লাবটিকে। এখন পেপ গার্দিওয়ার অধীনে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা দলটির অন্যতম সদস্য হুলিয়েন আলভারেস। আর্জেন্টাইনদের এই পথ ধরে এচেভেরির ছোঁয়াতেও বাধভাঙা সাফল্য আসবে, এমন প্রত্যাশা নিশ্চয় থাকবে ম্যান সিটির সমর্থকদের।

ইউরোপের কঠিন ফুটবলের চ্যালেঞ্জ জিততে পারবেন তো? সেটা সময়ই বলে দিবে। তবে এই ছোট্ট ক্যারিয়ারে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে এচেভেরি বুঝিয়ে দিয়েছেন মাঠে তিনি কতটা ভয়ঙ্কর। এমনিতে তো আর তাকে আর্জেন্টিনায় ডাকা হয় না ‘এল দিয়াবলিতো’ নামে। যার অর্থ ‘ছোট শয়তান’!

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত