বাংলাদেশের আরও পাঁচটি পোশাক কারখানাকে সবুজ কারখানা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনাইটেড স্টেটস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি)।
এ নিয়ে দেশে সবুজ কারখানার সনদ পাওয়া মোট পোশাক কারখানার সংখ্যা দাঁড়াল ২৬৮টিতে। এর মধ্যে প্লাটিনাম মানের কারখানা ১১৪টি ও গোল্ড মানের ১৩৫টি। অর্থাৎ বাংলাদেশের এই কারখানাগুলো সর্বোচ্চ মানের পরিবেশবান্ধব কারখানার শর্ত পূরণ করতে পারছে।
বাকি ১৯টি কারখানার মধ্যে সিলভার সনদপ্রাপ্ত কারখানা ১৫টি এবং সার্টিফায়েড সনদপ্রাপ্ত কারখানা ৪টি।
বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি সর্বোচ্চ রেটিংপ্রাপ্ত সবুজ কারখানার মধ্যে বাংলাদেশেরই ৬৮টি। এটা বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য গৌরব বলে জানিয়েছে পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ।
পরিবেশবান্ধব সনদ পাওয়া নতুন কারখানাগুলো হচ্ছে- সাভারের পাকিজা নিট কম্পোজিট, টঙ্গী বিসিকের ফ্যাশন প্লাস, ঢাকা ইপিজেডের গাভা প্রাইভেট লিমিটেড, চট্টগ্রামের ভিজুয়াল নিটওয়্যারস ও টালিসম্যান পারফরম্যান্স লিমিটেড।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) থেকে এই পরিবেশবান্ধব সনদ পেয়েছে এই পাঁচটি কারখানা। এ সনদ পাওয়ার জন্য কিছু শর্ত পরিপালন করতে হয়। মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে কোনও কারখানা ৮০-এর বেশি পেলে ‘লিড প্লাটিনাম’, ৬০-৭৯ পেলে ‘লিড গোল্ড’, ৫০-৫৯ নম্বর পেলে ‘লিড সিলভার’ ও ৪০-৪৯ নম্বর পেলে ‘লিড সার্টিফায়েড’ সনদ দেওয়া হয়।
নতুন সনদ পাওয়া পাঁচ কারখানার মধ্যে তিনটি লিড প্লাটিনাম আর দুটি লিড গোল্ড পেয়েছে। প্লাটিনাম সনদ পেয়েছে পাকিজা নিট কম্পোজিট, ফ্যাশন প্লাস ও গাভা প্রাইভেট লিমিটেড। অন্যদিকে ভিজুয়াল নিটওয়্যারস ও টালিসম্যান পারফরম্যান্স লিমিটেড পেয়েছে লিড গোল্ড সনদ।
বিশ্বের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি)। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউএসজিবিসি যে সনদ দেয়, তার নাম ‘লিড’।
লিডের পূর্ণাঙ্গ রূপ হলো লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন। এ সনদ পেতে প্রতিটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে স্থাপনা নির্মাণের কাজ থেকে শুরু করে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে মান রক্ষা করতে হয়।

সাজ্জাদুর রহমানের হাত ধরে শুরু
পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তা সাজ্জাদুর রহমান মৃধার হাত ধরে ২০১২ সালে প্রথম পরিবেশবান্ধব কারখানার যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশে। পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডে তিনি স্থাপন করেন ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও। তার দেখানো পথ ধরেই দেশে একটার পর একটা পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা গড়ে উঠছে। উজ্জ্বল হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা স্থাপনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। ২০১৪ সালে সবুজ কারখানা স্থাপন করা হয় ৩টি। ২০১৫ সালে হয় ১১টি। ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে স্থাপন করা হয় যথাক্রমে ১৬, ১৮ ও ২৪টি।
২০১৯ সালে আরও ২৮টি সবুজ পোশাক কারখানা স্থাপন করেন পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। ২০২০ ও ২০২১ সালে ২৪টি করে আরও ৪৮টি কারখানা গড়ে উঠেছে দেশে।
২০২২ সালে আরও ৩০টি সবুজ পোশাক কারখানা স্থাপন করেন পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। ২০২৩ সালে ২৪টি ‘গ্রিন’ কারখানা গড়ে উঠে দেশে। গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে আরও ২৬টি সবুজ পোশাক কারখানা স্থাপন করেন উদ্যোক্তারা।
চলতি বছর এ পর্যন্ত ৩১টি পোশাক কারখানা সবুজ কারখানার সনদ পেয়েছে।
আর এভাবেই সব মিলিয়ে দেশে মোট পরিবেশবান্ধব সবুজ পোশাক কারখানার সংখ্যা এখন ২৫৮টিতে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া ৫০০টি পোশাক কারখানা পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানার সনদ পেতে ইউএসজিবিসির অধীনে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ।
সনদটি পেতে একটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। ভবন নির্মাণ শেষ হলে কিংবা পুরনো ভবন সংস্কার করেও আবেদন করা যায়।
লিড সনদের জন্য মোট ১১০ পয়েন্ট আছে। এর মধ্যে ৮০ পয়েন্টের ওপরে হলে ‘লিড প্লাটিনাম’, ৬০-৭৯ হলে ‘লিড গোল্ড’, ৫০-৫৯ হলে ‘লিড সিলভার’ এবং ৪০-৪৯ হলে ‘লিড সার্টিফায়েড’ সনদ মেলে।
সাধারণত অন্যান্য স্থাপনার চেয়ে পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় ৫-২০ শতাংশ খরচ বেশি হয়। তবে বাড়তি খরচ করলেও দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাওয়া যায়।
ইউএসজিবিসি লিড সনদ পেতে স্থাপনা নির্মাণে ৯টি শর্ত পরিপালন করতে হয়।
তার মধ্যে আছে এমন নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করতে হয়, যাতে কার্বন নিঃসরণ কম হয়। এ জন্য পুনরুৎপাদনের মাধ্যমে তৈরি ইট, সিমেন্ট ও ইস্পাত লাগে। বিদ্যুৎ খরচ কমাতে সূর্যের আলো, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাতি ও সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হয়। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পাশাপাশি পানি সাশ্রয়ী কল ও ব্যবহৃত পানি প্রক্রিয়াজাত করে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করতে হয়।
এছাড়া স্থাপনায় পর্যাপ্ত খোলা জায়গা রাখার বাধ্যবাধকতা আছে। সব মিলিয়ে পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় ২৪-৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ, ৩৩-৩৯ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ এবং ৪০ শতাংশ পানি ব্যবহার কমানো সম্ভব। তার মানে দেশে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সংখ্যা যত বেশি হবে, ততই তা পরিবেশের ওপর চাপ কমাবে।



