Beta
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

কী কী ঝুঁকিতে দেশের অর্থনীতি

ss-Bangladesh-economy-311024
[publishpress_authors_box]

বিগত দেড় দশকে প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের যে দাবিগুলো ছিল, তার পেছনে লুকিয়ে থাকা বাস্তবতা বলছে নানা সংকটে সঙিন বাংলাদেশের অর্থনীতি।

বিদ্যমান পরিস্থিতি উন্মোচনে দেখা যাচ্ছে—সরকারি ঋণ বেড়ে যাওয়া, জ্বালানি স্বল্পতা, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া, মূল্যস্ফীতি, সম্পদ ও আয়বৈষম্য এবং বেকারত্বের মতো বড় বড় ঝুঁকি রয়েছে, যা সামলাতে হিমশিম অন্তর্বর্তী সরকার। দেশের অর্থনীতির বর্তমান দুরবস্থার কারণ খুঁজতে নেমে গোলকধাঁধায় রয়েছেন অর্থনীতিবিদরাও।   

বাংলাদেশের জিডিপি ২০০৯-১০ অর্থবছরে মাত্র ৭৯ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪৫৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার দাবি ছিল বিগত সরকারের; সেই কৃতিত্ব নিচ্ছিলেন শেখ হাসিনা। তবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, রপ্তানি আয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সূচকও যে বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছিল, তা বিগত সরকারের আমলেই স্বীকার করে নেওয়া হয়।  

আর আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদী শাসনকালে ব্যাপক দুর্নীতি, বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের প্রান্তে নিয়ে গেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার বিদায় তার সরকারের দুর্বল নীতিই প্রকাশ্যে এনেছে। এত দিনের নাজুক অর্থনীতি উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্বের চাপ সামলাতে পারেনি। সেই আগুনে ঘি ঢেলেছে ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতি আর শেখ হাসিনার স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব; যার পরিণতিতে তাকে বিদায় নিয়ে দেশ ছাড়তে হয়েছে।

গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারত চলে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দেশ হয়ে পড়ে সরকারবিহীন। তিন দিন পর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।

এখন বাংলাদেশকে তার ভবিষ্যৎ পথ ঠিক করতে হবে। ঠিক করতে হবে- কোন পথে যাবে অর্থনীতি।

এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১০ আগস্ট বলেছিলেন, “বিভিন্ন কারণে দেশের অর্থনীতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। আমাদের লক্ষ্য হবে অর্থনীতিকে যত দ্রুত সম্ভব গতিশীল করা। কারণ, অর্থনীতি স্তব্ধ হয়ে গেলে সেটা চালু হওয়া বেশ কঠিন। আমরা অর্থনীতিকে স্তব্ধ হতে দিতে চাই না।”

তবে অন্তর্বর্তী সরকার যাত্রার পর থেকে এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।  

এর মধ্যে গত সোমবার (২৮ অক্টোবর) উদ্বেগজনক তথ্য প্রকাশ করেছে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। তবে বিবিএস যে তিন মাসের (এপ্রিল-জুন) অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) তথ্য প্রকাশ করেছে, তখন কিন্তু দেশে কোনও রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল না; ছিল না জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড।

বিবিএস বলছে, গত অর্থবছরের শেষ বা চতুর্থ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। অথচ তার আগের অর্থবছরের একই প্রান্তিকে এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল দুই অঙ্কের (ডাবল ডিজিট) ঘরে, ১০ দশমিক ১৬ শতাংশ।

অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি তলানিতে নেমে আসার কারণেই গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৩ দশমিক ৯১ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই প্রান্তিকে এর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল।

এপ্রিল-জুন প্রান্তিক শেষ হওয়ার পর পরই অর্থাৎ জুলাই মাসের শুরু থেকেই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনে দমন-পীড়ন-হত্যা শুরু হয়। দেশে চরম অস্থিরতা দেখা দেয়। আগস্টে ক্ষমতার পালা বদলের পর থেকে এখনও দেশের অস্থিরতা থামেনি।

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বেশ কিছুদিন অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ থাকার পরও এসব শিল্প ঘিরে এখনও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

এদিকে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে গিয়ে নীতি সুদহার বাড়ানোয় ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়েই চলেছে। দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি কমে এক অঙ্কের ঘরে (সিঙ্গেল ডিজিট) নেমে এসেছে। নতুন বিনিয়োগের অন্যতম প্রধান নির্দেশক মূলধনি যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারি) আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। শিল্পের কাঁচামাল আমদানিও কমেছে। ফলে শিল্প স্থাপনের নতুন উদ্যোগ ও ব্যবসা সম্প্রসারণ স্থবির হয়ে আছে।

দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ থাকার পরও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে অর্থাৎ এপ্রিল-জুন সময়ে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধিতে ধস নেমেছিল। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরু থেকেই, অর্থাৎ ১ জুলাই শুরু হয় আন্দোলন। এরপর চার মাস (জুলাই-অক্টোবর) গেলেও এখনও দেশের আইন-শৃংখলা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি আসেনি।

আর এ সময়ে দাতাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ-সহায়তার আশ্বাস পাওয়া গেলেও এখন অবধি এক ডলারও দেশে আসেনি। ফলে সংকটে নিমজ্জিত অর্থনীতি সচল হওয়ার যে আশা তৈরি হয়েছিল, তার দেখা মেলেনি।

সাম্প্রতিক বন্যার কারণে কৃষিসহ অনেক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিল্প-কারখানায় স্বাভাবিক উৎপাদন পুরোদমে শুরু হয়নি।

এ পরিস্থিতিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) জিডিপি প্রবৃদ্ধি কতটা হবে—তা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। কারণ, স্বাভাবিক অবস্থার মধ্যেই গত অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) অর্থনীতিতে ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

নানা ঝুঁকিতে সঙিন অর্থনীতিতে একটার পর একটা ধাক্কা লেগেই আছে।

সাড়ে চার বছর আগে ২০২০ সালের মার্চে কোভিড-১৯ মহামারীর ধকল কাটতে না কাটতে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও সেই ধাক্কা লাগে। এরপর এসেছে মধ্যপাচ্যের যুদ্ধের ধাক্কাও। তবে অভ্যন্তরীণ দুর্বল নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণেও সংকটে পড়েছে দেশের অর্থনীতি।

সাম্প্রতিক বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে পোল্ট্রি ফার্ম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্যাঘাত ঘটে ডিম সরবরাহে। তাতে গত সেপ্টেম্বর থেকে বাড়তে শুরু করে ডিমের দাম । ছবি-হারুন-অর-রশীদ
সাম্প্রতিক বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে পোল্ট্রি ফার্ম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্যাঘাত ঘটে ডিম সরবরাহে। তাতে গত সেপ্টেম্বর থেকে বাড়তে শুরু করে ডিমের দাম। ছবি-হারুন-অর-রশীদ

আগে থেকেই সংকটে থাকা রপ্তানি আয়, রেমিটেন্স, রিজার্ভ, ব্যাংক খাত, পুঁজিবাজার ও মূল্যস্ফীতি—নিয়ে এখনও স্বস্তি ফেরেনি। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে আছে। পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার বিষয়টি বক্তৃতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। এ অবস্থায় দিন যতো যাচ্ছে, অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা ততোই বাড়ছে।  

বাংলাদেশ চেম্বারের বর্তমান সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ সকাল সন্ধ্যাকে বলেছেন, “অর্থনীতির বারোটা বেজে যাচ্ছে। বিনিয়োগ নেই; কর্মসংস্থান হচ্ছে না। সর্বত্র অনিশ্চয়তা-অস্থিরতা; কোথাও স্বস্তি নেই।। দিন যতো যাচ্ছে—পরিস্থিতি ততোই খারাপের দিকে যাচ্ছে।

“করোনা মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের দর বৃদ্ধি, মধ্যপাচ্যের যুদ্ধ—একের পর এক ধাক্কায় বেশ কিছুদিন ধরেই আমাদের অর্থনীতি চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। এরই মধ্যে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর লেগেছে আরেক ধাক্কা। পোশাক শিল্পের অস্থিরতা আমাদের আরেক চিন্তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়েই চলেছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে।”

পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক এই সভাপতি বলেন, “ক্যাপিটাল মেশিনারি, শিল্পের কাঁচামাল আমদানিসহ সব কিছুর আমদানিই কমে গেছে। এমনটা চলতে থাকলে আমাদের কপালে কী আছে কে জানে। আমাদের পরিণতি শ্রীলঙ্কার মতো হবে কী না—কে জানে?”

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা যখন দেখছি এবং একই সাথে এর জন্য আশার আলো দেখতে চাই, আমরা যেন কোনও হীনমন্যতায় না ভুগি যে, গত ৫৩ বছরে আমাদের দেশে অর্জন কিছু নাই।

“আমাদের অনেক কিছুরই অর্জন আছে—বিশেষ করে অর্থনীতি, সমাজ এবং নারীর উন্নয়নে আমাদের অগ্রগতি ঘটেছে। এই অর্জনগুলোকে ছোটো করার কোনও সুযোগ নেই। তবে যে বিষয়টি বলা জরুরি—গত ৫৩ বছরে শাসকদের দ্বারা প্রগতিশীল, জনভিত্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বাংলাদেশমুখী রাজনীতির অনুপস্থিতিতে আমাদের দেশ আরও অনেক বড় কিছু অর্জন থেকে বঞ্চিত হয়েছে।”

“যত দিন গেছে এই বঞ্চনার পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। এর অর্থ হচ্ছে—যদি দেশে এই গণঅভ্যুত্থান উত্তর সময়ে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন না আসে, তবে দেশ এই বঞ্চনার চক্র থেকে মুক্তি পাবে না।”

“এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে যে করেই হোক মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা। আর এ জন্য যা যা করা প্রয়োজন, সবই করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে” বলেন সেলিম রায়হান।

জিডিপি প্রবৃদ্ধি

২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষ হয়েছে চার মাস আগে ৩০ জুন। পরিসংখ্যান ব্যুরো গত ২৮ অক্টোবর ওই অর্থবছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের জিডিপির তথ্য প্রকাশ করেছে।

তাতে দেখা যায়, এপ্রিল-জুন সময়ে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। তা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চার প্রান্তিকের মধ্যে সবচেয়ে কম এবং আগের অর্থবছরের একই প্রান্তিকের চেয়ে প্রায় অর্ধেক।

২০২২-২৩ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে দেশে ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল। মূলত শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধিতে ধসের কারণেই জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) শিল্প খাতে ১০ দশমিক ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। গত অর্থবছরের একই প্রান্তিকে তা কমে ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশে নেমে এসেছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) শিল্প, সেবা ও কৃষি—সব খাতের প্রবৃদ্ধিই কমেছে। এই প্রান্তিকে সবচেয়ে বেশি ৫ দশমিক ২৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে কৃষি খাতে। শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আর সেবা খাতে ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। শিল্প খাতে হয়েছিল ১০ দশমিক ১৬ শতাংশ। ৫ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সেবা খাতে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শ অনুযায়ী বিবিএস গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) থেকে প্রথমবারের মতো ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে জিডিপির হিসাব করা শুরু করেছে।

আইএমএফের ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণের তিন কিস্তি ২৩১ কোটি (২.৩১ বিলিয়ন) ডলার পেয়েছে সরকার। এই ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল তিন মাস পরপর জিডিপির হালনাগাদ হিসাব প্রকাশ করতে হবে। সেই শর্ত পূরণের অংশ হিসেবেই বিবিএস প্রান্তিকভিত্তিক জিডিপির হিসাব প্রকাশ করছে।

এতদিন পুরো এক বছরের হিসাব দিয়ে দুই বার জিডিপির তথ্য প্রকাশ করত বিবিএস। সংশ্লিষ্ট অর্থবছরের প্রথম ছয়-সাত মাসের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রথমে জিডিপির আকার, প্রবৃদ্ধিসহ সাময়িক হিসাব দেওয়া হতো। পরে পুরো বছরের তথ্য নিয়ে প্রকাশ করা হত জিডিপির চূড়ান্ত হিসাব।

সে হিসাবেই গত ২১ মে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জিডিপির সাময়িক হিসাব প্রকাশ করে পরিসংখ্যান ব্যুরো। তাতে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা বলা হয়। অর্থবছরের সাত মাস (গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি) পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকের তথ্য প্রকাশ করেছিল বিবিএস।

অর্থবছর শেষ হয়েছে চার মাস আগে; কিন্তু এখনও জিডিপির চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করেনি পরিসংখ্যান ব্যুরো। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ছিল।

বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকও (এডিবি) বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। কয়েকদিন আগে বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশে নেমে আসবে। আইএমএফ বলেছে, ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হবে। এডিবি বলেছে, ৫ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছিল ‍বিদায়ী শেখ হাসিনা সরকার।

বিনিয়োগে বেহাল দশা

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রথম প্রান্তিকে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্থ ব্যয় হয়েছে মোট বরাদ্দের মাত্র ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ; আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যা ছিল ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ।

গত ২৮ অক্টোবর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এডিপি বাস্তবায়নের এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

জুলাই ঘিরে আন্দোলন, অগাস্টের তিন দিন সরকারবিহীন সময়ের নৈরাজ্য এবং এরপর ক্ষমতার পালাবদলের পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে থমকে যাওয়া উন্নয়ন কাজের প্রভাবে এডিপি বাস্তবায়নের হার ১৫ অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিন্মে নেমেছে।

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর গত ১৯ জুলাই সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

আইএমইডির ওয়েবসাইটে ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে তথ্য পাওয়া যায়। এতে দেখা যায়, ওই অর্থবছর থেকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এর থেকে কম এডিবি বাস্তবায়ন হয়নি।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার চলতি অর্থবছরে এডিপিতে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখে বাজেট পাস করেছিল। তবে তাদের কাজেও ছিল না গতি। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার শুধু অগ্রাধিকার প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেয়।

বিদেশি বিনিয়োগও কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২৯ অক্টোবর বিদেশি বিনিয়োগের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ১৬১ কোটি (১.৬১ বিলিয়ন) নিট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে দেশে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ কম।

গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই তিন মাসে ১৪৭ কোটি (১.৪৭ বিলিয়ন) ডলারের নিট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল।

অন্যদিকে দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি এক অঙ্কের ঘরে (সিঙ্গেল ডিজিট) ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এই প্রবৃদ্ধি ছিল দুই অঙ্কের ঘরে (ডাবল ডিজিট) ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ।

রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে সরকারের রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সর্বশেষ হিসাবে দেখা গেছে, এই তিন মাসে সার্বিকভাবে শুল্ক ও কর আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ২৫ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর—কোনও মাসেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি এনবিআর।

এনবিআরের হিসাব অনুসারে, অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এনবিআরের মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৯৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৭০ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা। এ সময়ে ঘাটতি হয়েছে ২৫ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা।

গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে সব মিলিয়ে ৭৫ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকার শুল্ক-কর আদায় হয়েছিল।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে। শতাংশ হিসাবে এই তিন মাসে রাজস্ব আদায় কমেছে ৬ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ।

প্রায় ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে শেষ হয়েছিল গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর।

রেমিটেন্সে উল্লম্ফন

দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে এ মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের পর চলতি অক্টোবর মাসেও বেশি রেমিটেন্স দেশে পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের চতুর্থ মাস অক্টোবরের প্রথম ২৬ দিনেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রায় ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার দেশে এসেছিল। দ্বিতীয় মাস আগস্টে এসেছিল ২২২ কোটি ৪১ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন)।

অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৬৫৪ কোটি ২৭ লাখ (৬.৫৪ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি।

সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তিন মাস ২৬ দিনে এসেছে ৮৪৪ কোটি ২০ লাখ (প্রায় সাড়ে ৮ বিলিয়ন) ডলার।

৪ আগস্ট ধানমন্ডিতে পোশাকের ব্র্যান্ড ইয়েলোর শোরুমে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

রপ্তানি আয়

রপ্তানি আয়ের হিসাবে বড় ধরনের গরমিল ধরা পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এর পর চার মাস কোনও রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করেনি ইপিবি।

এর পর গত ৯ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে চার মাসের তথ্য একসঙ্গে প্রকাশ করেন ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন।

তিনি জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ১ হাজার ১৩৭ কোটি (১১.৩৭ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে এই আয়ের অঙ্ক ছিল ১ হাজার ৮২ কোটি (১০.৮২ বিলিয়ন) ডলার।

তবে চলমান অস্থিরতার মধ্যে আগামী মাসগুলোতে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা যাবে কি না—তা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছেন রপ্তানিকারকরা।

রিজার্ভও বাড়ছে না

রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বাড়লেও বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না।

গত ২৪ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংক যে ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।

এক সপ্তাহ আগে ১৬ অক্টোবর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, সপ্তাহের ব্যবধানে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমেছে ১৩ কোটি ডলার।

গত ৯ সেপ্টেম্বর আকুর জুলাই-আগস্ট মাসের ১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ১৯ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। আকুর দেনা শোধের আগে ৫ সেপ্টেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার।

রেমিটেন্স বাড়ায় এবং আমদানি ব্যয় কমায় গত দেড় মাসে রিজার্ভ ১৯ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। কিন্তু এই সপ্তাহে সেই রিজার্ভ কমে ফের কমেছে।

সবশেষ গত আগস্ট মাসের আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, ওই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সে হিসাবে ১৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার দিয়ে সাড়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়। সেই হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ এখন কাঁটায় কাঁটায় আছে।

নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের বিল পরিশোধ করতে হবে; তখনও রিজার্ভ কমবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে গিয়ে নীতি সুদহার বাড়ানোয় ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়েই চলেছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগ

সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে এক অঙ্কের ঘরে (সিঙ্গেল ডিজিট) ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে নেমেছে। তবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে (ডাবল ডিজিট) ১০ দশমিক ৪০ শতাংশে অবস্থান করছে।

আগের মাস আগস্টে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে উঠেছিল।

৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ গড় মূল্যস্ফীতি নিয়ে শেষ হয়েছিল ২০২৩-২৪ অর্থবছর।

সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো—গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, এই বছরের সেপ্টেম্বরে সেই পণ্য বা সেবা পেতে ১০৯ টাকা ৯২ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।

সরকারি হিসাবে, এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে গত জুলাইয়ে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখেছিল বাংলাদেশ। অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রা শুরুর দুই মাসেই মূল্যস্ফীতি কমার তথ্য আসে।

বিবিএসের মূল্যসস্ফীতির তথ্য নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন তুলে আসছেন দেশের অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশেষ করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে এই প্রশ্ন বারবার তুলেছেন তারা।

দেশের প্রায় সব অর্থনীতিবিদ বলেছেন, পরিসংখ্যান ব্যুরো মূল্যস্ফীতির যে তথ্য প্রকাশ করে বাস্তবে তা আরও বেশি। বিবিএসের মূল্যস্ফীতির তথ্যের সঙ্গে বাজারের জিনিসপত্রের দামের বাস্তব প্রতিফলন নেই।

গত ৯ মে খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ে চালঞ্চ্যকর তথ্য দিয়েছিল সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)। ওই সময় প্রতিষ্ঠানটি বলেছিল, বর্তমানে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশ।

আমদানি কমছেই

চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পণ্য আমদানির এলসি (ঋণপত্র) খোলার তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, এই তিন মাসে বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য মোট ১ হাজার ৫৫৯ কোটি ১১ লাখ (১৫.৫৯ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ কম। নিষ্পত্তি কমেছে ২ দশমিক ৪০ শতাংশ।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই তিন মাসে ১৬ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। গত অর্থবছরের পুরো সময়ে এলসি খোলার পরিমাণ কমেছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে নতুন শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি কমেছে ৪০ দশমিক ৯০ শতাংশ; নিষ্পত্তি কমেছে ২৫ শতাংশ।

শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্য (ইন্টারমেডিয়েট গুডস) আমদানির এলসি কমেছে ৭ দশমিক ২২ শতাংশ; নিষ্পত্তি কমেছে ১৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

জ্বালানি তেল আমদানির এলসি কমেছে ২৬ শতাংশ; নিষ্পত্তি কমেছে ৭ দশমিক ১৬ শতাংশ।

এই তিন মাসে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি কমেছে ৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

বিদেশি ঋণের চেয়ে পরিশোধ বেশি

বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে অন্তর্বর্তী সরকার মোটা অঙ্কের ঋণ-সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। কিন্তু সেই ঋণের এক ডলারও এখনও দেশে আসেনি।

এরই মধ্যে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পার হয়ে গছে। এই তিন মাসে বিদেশি ঋণ প্রাপ্তির অবস্থা খুবই খারাপ; যে ঋণ পাওয়া গেছে, তার চেয়ে আগে নেওয়া ঋণের সুদ-আসল বাবদ অনেক বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, এই তিন মাসে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে মাত্র ৮৪ কোটি ৬১ লাখ ডলারের ঋণ-সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। এর বিপরীতে আগে পাওয়া ঋণের সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ১১২ কোটি ৬৫ লাখ (১.১৩ বিলিয়ন) ডলার।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে যতো ঋণ-সহায়তা পাওয়া গেছে তার চেয়ে ২৮ কোটি ডলারের বেশি পরিশোধ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত