ভোটের ১৫ দিন পর নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নির্বাচনী প্রচারের সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতাহের ভোটারদের মধ্যে টাকা বিতরণ করেছেন, এমন অভিযোগ ওঠায় অনুসন্ধান শেষে ইসির কমিটি সুপারিশ প্রতিবেদন দেয়।
এরপরই ইসির নির্দেশে পটিয়া উপজেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম সোমবার পটিয়ার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে মামলাটি করেন।
দেরিতে মামলার কারণ জানতে চাইলে আরিফুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, ‘‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন চলাকালে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশে, ইসির নির্দেশে মামলা করা হয়েছে। সুপারিশ প্রতিবেদন ইসিতে পাঠানোর পর কমিশনের অনুমোদন শেষেই মামলার নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্বাচন শেষ হলে মামলা করতে আইনী কোনও অসুবিধা নেই।’’
একইসঙ্গে পটিয়া উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খোরশেদ আলম ও স্থানীয় যুবলীগ কর্মী সাইফুল ইসলাম ওরফে বালু সাইফুলের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে আরও দুটি মামলা করেছেন আরিফুল ইসলাম।
কোন ধারায় মোতাহেরের বিরুদ্ধে মামলা হলো জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলার এক নির্বাচন কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, ‘‘নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে একজন সংক্ষুদ্ধ প্রার্থী বিধিমালার ১৭(১) ধারা অনুযায়ী নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটিতে অভিযোগ করেন। কমিটি অনুসন্ধান শেষে প্রতিবেদন দিলে মামলা করা হয়।
‘‘সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা- ২০০৮ অনুযায়ী আচরণবিধি লঙ্ঘন হলে জরিমানা ও জেল দুই ধরনের শাস্তির ব্যবস্থাই রয়েছে নির্বাচনী আচরণবিধিতে।’’
তিনি বলেন, ‘‘ভোটের মাঠে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাৎক্ষণিকভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রমাণ পেলে অভিযুক্তকে ছয় মাসের জেল ও ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারেন।
এর বেশি সাজা দিতে হলে নির্বাচন কমিশন গঠিত নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির কাছে যেতে হবে। সেই কমিটির প্রধান থাকেন একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। যেকোনো ব্যক্তি সেই কমিটিতে অভিযোগ করলে কমিটি আমলে নিয়ে সেটি তদন্ত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে পারবেন।’’
‘‘এক্ষেত্রে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা রয়েছে তাদের। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের বাঁশখালী থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর প্রার্থিতা বাতিলের রেকর্ড রয়েছে। তার বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিয়োগ ছিল।’’
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) সংসদীয় আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক হুইপ শামসুল হক চৌধুরী।
নির্বাচনী প্রচারের সময় গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর প্রকাশ্যে ভোটারদের মধ্যে টাকা বিতরণের অভিযোগ ওঠে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে, যা আচরণ বিধিমালার পরিপন্থী।
এর আগে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে মোতাহেরুল ইসলামকে শোকজ করে তলব করেছিল নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি।
মামলার বিষয়ে জানতে বর্তমান এমপি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কলা করা হলেও তিনি ধরেননি।