কোরবানি ঈদ শেষ হয়েছে হয়েছে দিন দশেক হলো। কিন্তু ঈদের আমেজ এখনও কাটেনি। অনেকেই ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফেরেননি। যাদের না ফিরলেই নয়, তারাই ফিরে এসেছেন কোলাহলের এই নগরীতে।
নগরবাসী না ফেরায় ঢাকার বাজারগুলো এখনও জমে ওঠেনি। গত পুরো সপ্তাহই বেশ ঢিমেতালে গেছে।
শুক্রবারও কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতা সমাগম চোখে পড়েনি। তবে বিক্রেতারা বলছেন, গত কয়েকদিনের তুলনায় বেশি মানুষ এসেছে। আগামী সপ্তাহ থেকে বাজার আবার আগের রূপ ফিরে পাবে, এমন প্রত্যাশাও তাদের।
তবে ঈদের আমেজ শেষ না হলেও বেড়েছে বেশকিছু পণ্যের দাম। যেমন গরুর মাংস কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা, প্রতিটি ডিমের দাম বেড়েছে বাজারভেদে অন্তত দুই টাকা।
অবশ্য মুরগি ও মাছের দাম তুলনামূলক কম। তাই, সেখানেই স্বস্তি খুঁজছেন অনেক ক্রেতা।
যেমন ছিল বাজারদর
শুক্রবার ঢাকার গোড়ান, খিলগাঁও তালতলা ও মহাখালীর বাজার ঘুরে দেখা গেল, গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজিতে। গত সপ্তাহেও যা ছিল ৭৩০-৭৫০ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়।
এদিন প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। দেশি মুরগি ৭০০-৭৩০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকা কেজি। প্রতি কেজি সোনালি মুরগি পড়েছে ৩০০-৩২০ টাকা।
মাছের বাজার রয়েছে কিছুটা স্বস্তিতে। গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে দাম কিছুটা কমের দিকে।
বাজারে বড় চিংড়ি মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়, যেখানে গত সপ্তাহেও ছিল ৭০০ টাকা। শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি।
এছাড়া পাঙ্গাস ১৫০-১৬০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০-২২০ টাকা, কার্প মাছ ২৫০-২৬০ টাকা, রুই মাছ ৩২০-৩৫০ টাকা, মলা মাছ ২৫০-২৮০, কই ২০০-২২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
মাছের মধ্যে দাম বেড়েছে পাবদার। গত সপ্তাহে পাবদা মাছের কেজি ছিল ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা। শুক্রবার কেজি পড়েছে ৪৫০-৪৬০ টাকা।
সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে মুরগির ডিমের। ঈদের পরেও এই ডিম পাওয়া গেছে ডজন ১২০ টাকায়। শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতিটি ডিমের দাম পড়ছে সাড়ে ১৩ টাকা।
হাসের ডিমের দাম আগের মতোই আছে, ১৮০-২০০ টাকা ডজন। এ হিসাবে একটি হাসের ডিম পড়ছে ১৫ টাকার বেশি।
গরুর মাংসের দামে ঊর্দ্ধগতি কেন
কোরবানি ঈদের পর সাধারণত দেখা যায়, মাংসের দাম কিছুটা কমে আসে। কিন্তু এবার মুরগির দাম কিছুটা কমলেও বাড়ছে গরুর মাংসের দাম।
গোড়ান বাজারের মাংস ব্যবসায়ী নূরুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এখনও তো বাজার ভালো মতে বসে নাই। মানুষ কম। হাটেও গরুর দাম এখন একটু বেশি। সামনে বাজার ঠিকঠাক শুরু হলে বোঝা যাবে দাম কেমন দাঁড়ায়।”
কোরবানি ঈদের পর দাম না কমে বাড়ছে কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার কোরবানির গরুর দামও বেশি ছিল। অনেকের কোরবানির গরুর মাংসের দাম কেজিতে ১০০০ টাকারও বেশি পড়েছে। গরুর দাম বেশি থাকলে মাংসের দামও বাড়বে।
খিলগাঁও তালতলা বাজারের মুরগির ব্যবসায়ী মো. রুবেল বললেন, ঈদের সময় বাজারে মুরগির ক্রেতা কম থাকে। দেখা যায় যারা কোরবানি দেয়নি বা দিতে পারেনি তারাই মুরগি কেনে। ফলে দামও কিছুটা কম, বিক্রিও কম হয়েছে।
তবে শহরে মানুষ বাড়লে বিক্রি বাড়বে বলে প্রত্যাশা তার।
ডিমের দাম নিয়ে ধোঁয়াশা
ডিমের দাম হুট করে এমন বেড়ে যাওয়া নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যেই রয়েছে মতবিরোধ। একেকজন একেক কথা বলছেন।
কেউ বলছেন, সরবরাহ কম থাকার কারণেই বেড়েছে ডিমের দাম। আবার কেউ কেউ বলছেন মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণেই বাড়ছে দাম।
খিলগাঁও তালতলা বাজারের ডিম ব্যবসায়ী সুমন মৃধা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমরা যখন পাইকারি বাজার থেকে ডিম আনি বা দোকানে দিয়ে যায় তারা ডিমের বাড়তি দামের কিছু কারণ বলছে। আসলে অতিরিক্ত গরমের কারণে ডিমের উৎপাদন কম হয়েছে, ফলে বাজারে সরবরাহ কমেছে। এতে দাম বেড়েছে।”
তিনি বলেন, “তীব্র গরমে মুরগি মরে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে আগেভাগেই মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন খামারিরা, আর এতে করে ডিমের উৎপাদন কম হচ্ছে। তাই ডিমের দাম বাড়ছে।”
মধ্যস্বত্বভোগীরা ডিমের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়েছে- এমন কথা বলছেন মহাখালী কাঁচাবাজারের ডিম ব্যবসায়ীরা।
তাদের একজন মো. রফিক বলেন, “দাম তো আমরা ঠিক করি না। কিছুদিন আগেও ১০০ ডিম কিনছি ১ হাজার ৩০ টাকায়। এখন সেই দাম ১১০০ টাকার উপরে উঠে গেছে। সকালে এক রেট বিকালে আরেক রেট।
“আমরা তো মাঝখানের লোকজনের কাছ থেকে ডিম আনি। খামার থেকে তো আমরা আনতে পারি না। এই মাঝখানেই সব সমস্যা। এরাই দাম বাড়ায় আবার কমায়।”
স্বস্তি মিলছে মুরগি-মাছে
গরুর মাংস, ডিমের বাড়তি দামের মধ্যে মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে মুরগি আর মাছ।
বন্ধের দিনে যারা বাজার করতে এসেছিলেন তাদের একজন তাসবিনুল গণি।
সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “গরুর মাংসের দাম কিছুদিন আগেও কম দেখলাম, আজকে এসে দেখি ৮০০ টাকা হয়ে গেছে। এভাবে এক সপ্তাহে ৫০ টাকা বেড়ে গেল! ডিমের কথা তো বাদই। ডিম এক সময় প্রত্যেক দিনই খাওয়া হতো। এখন এটাও বিলাসী দ্রব্য হয়ে উঠছে।”
মুরগির দাম কিছুটা কম আছে জানিয়ে তাসবিনুল গণি বলেন, “এখন চাহিদা কম, তাই হয়ত দাম কম। কিন্তু চাহিদা বাড়লে আবার দাম বেড়ে যাবে। আমাদের এখানে তো এমনই হয়।”
মাছ কিনতে দরদাম করছিলেন নিলুফার আক্তার। জানালেন দুদিন আগে গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরেছেন। সকালে বাজারে মাছ কিনতে এসেছিলেন।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “মাছের দাম কিছুটা কমই মনে হচ্ছে। এসময় অবশ্য মাছের দাম একটু কমই থাকে। ঈদ মাত্র শেষ হলো। বাজারে কিছুটা কম মাছ আছে বলেও আমার মনে হয়েছে।”