এবারের ঈদ দেশের সাধারণ মানুষের কাছে ‘দুঃখ ও কষ্ট’ নিয়ে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার সকালে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় শেষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এবারকার ঈদ বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটা দুঃখ নিয়ে এসেছে, কষ্ট নিয়ে এসেছে।
ঈদে আমরা কী করি– এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “ঈদে সাধারণত ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী-বাচ্চাদেরকে কাপড় দেই… সেই কাপড় আমরা দিতে পারছি না। ভালো খাবার দেই… সেই খাবার আমরা দিতে পারছি না। সাধারণ মানুষ তাদের ছেলে-মেয়েদের সেই খাবার দিতে পারছে না।”
এই ‘দুরবস্থার’ জন্য সরকারকে দায়ী করে মির্জা ফখরুল বলেন, “সুপরিকল্পিতভাবে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে একেবারে ধবংস করে দেশকে পরনির্ভরশীল করার জন্যই বর্তমান সরকার এসব করছে।”
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে দেশবাসীকে এ সময় ‘ঈদ মোবারক’ জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খানসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদেরকে নিয়ে শেরে বাংলা নগরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর ফাতেহা পাঠ ও পুস্পস্তবক অর্পন করেন বিএনপি মহাসচিব। পরে প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাতে অংশ নেন বিএনপি নেতারা।
এ সময়ে বিএনপির আহমেদ আজম খান, আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, রফিকুল ইসলাম জামাল, আবেদ রাজা, রফিক শিকদার, মহানগরের আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, হাবিবুর রশীদ হাবিব, যুব দলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্না, নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, ইয়াসীন আলীসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রতি ঈদে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার স্বামী জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করতেন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড হওয়ার পর থেকে দলের মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এ ধারাবাহিকতা অনুসরণ করছেন।
‘কঠিন দুঃসময় চলছে’
বিএনপি অনেক নেতাকর্মীর কারাগারে থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে এক কঠিন দুঃসময় চলছে। আমাদের দল শুধু নয়, সারাদেশে বিরোধী দলের অসংখ্য নেতাকর্মী এখনও কারাগারে। আমাদের নেতারা এখনও কারাগারে।
“আপনারা জানেন, এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম করেছে, হত্যা করেছে, নিপীড়ন-নির্যাতন করেছে, কারাগারে নিক্ষেপ করেছে। তারপরেও এদেশের মানুষ গণতন্ত্রের জন্য, নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে সংগ্রাম করে চলেছে, লড়াই করে চলেছে,” বলেন তিনি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘ডামি নির্বাচন’ আখ্যা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “বিগত যে নির্বাচন হলো, যেটা কোনও নির্বাচনই ছিলও না, আসলে এটা ছিল সম্পূর্ণভাবে ডামি নির্বাচন।”
তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের আন্দোলন কখনও ব্যর্থ হতে পারে না। জনগণ অবশ্যই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভয়াবহ এই ফ্যাসিস্ট দখলদার সরকার, যারা জোর করে বাংলাদেশের অর্থনীতি-রাজনীতি সব কিছুকেই ধবংস করে দিচ্ছে, অবশ্যম্ভাবীভাবে তার পরিণতি তারা নিয়ে আসবে… পরিণামে তাদেরকে জনগণের কাছে পরাজিত হতে হবে।”
‘সুপরিকল্পিতভাবে অর্থনীতিকে ধবংস করেছে’
সরকারের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের অভিযোগ এনে মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে এই সরকার সুপরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতিকে ধবংস করেছে… এখানে বিশদ বলার কিছু নেই। শুধু এটুকু বলতে চাই, এভাবে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে রাজনৈতিক একেবারে দেউলিয়াত্বপনার কারণে আওয়ামী লীগ আজকে তারা একটা দেউলিয়া রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আজকে আওয়ামী লীগ এখন আর আওয়ামী লীগ নেই, আওয়ামী লীগ এখন সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল একটি দলে পরিণত হয়েছে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমরা বিশ্বাস করি, এই অবস্থার পরিবর্তন আসবে। আমরা আান্দোলন করছি,সংগ্রাম করছি… এদেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব।”
‘অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে এগোচ্ছে সরকার’
বান্দরবানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যাংক ও থানায় হামলার ঘটনা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘এই সরকার ক্ষমতায় এসেছেই একটা মাত্র অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে। সেই অ্যাসাইনমেন্ট হচ্ছে বাংলাদেশকে পরনির্ভরশীল করে দেওয়া।”
তিনি বলেন, “প্রথমে পিলখানায় বিডিআরের ঘটনা, সেখানে থেকে শুরু হয়েছে… বিডিআরের সৈনিকরা এখন পর্যন্ত জেল থেকে বেরুতে পারেনি। প্রায় সাতশ বিডিআরের সৈনিক ১৬ বছর ধরে বিচারের অপেক্ষায় কারাগারে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
“ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়া, বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে পরনির্ভরশীল করে দেওয়া, ধ্বংস করে দেওয়া… এই অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে তারা এগোচ্ছে।”
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বাসায় বিএনপি মহাসচিব
জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতের পরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালামকে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব ঢাকার আসাদ গেইটে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বাসায় যান।
তারা টুকুর সহধর্মিনী রুমানা মাহমুদসহ পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নেন, তাদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে সাবেক বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।