ঈদের ছুটির এক সপ্তাহ পরও পুরোপুরি জমে ওঠেনি রাজধানী ঢাকার কাঁচা বাজারগুলো। বিক্রেতারা বলছেন, ঢাকার বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে শুরু করবে আগামী রবিবার ২১ এপ্রিল। এ কারণে এখনও অনেক অভিভাবক ছেলে-মেয়ে নিয়ে গ্রামে রয়েছেন। ফলে অন্য সময়ের তুলনায় নিত্যপণ্যের চাহিদাও কম। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। বিভিন্ন বাজারে ক্রেতাদের পাশাপাশি বিক্রেতাদের উপস্থিতিও কম দেখা গেছে। সবমিলিয়ে ঈদপরবর্তী কাঁচা বাজারের এখনও প্রাণ ফেরেনি।
ক্রেতা স্বল্পতা থাকায় অনেককে তিন-চার দিনের বাসি সবজি নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। বাজারে বাসি ও টাটকা সবজির দামে পার্থক্য ছাড়া তেমন কোনও অস্থিরতা দেখা যায়নি। মাছের সরবরাহ কম, দামে তেমন পার্থক্য দেখা যায়নি। মুরগির দামও ঈদের সময়ের মতোই রয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে কলা, আনারসের মতো মৌসুমী ফল নষ্ট হওয়ার চিত্রও পাওয়া গেছে।
সরকার ভোজ্যতেলের দাম ৪ টাকা বাড়ালেও খুচরা বাজারে আগের দামে তেল পাওয়া গেছে শুক্রবারও। বিক্রেতারা বলছেন, পুরনো তেল মজুদ থাকায় এখনও আগের দামে বিক্রি করতে পারছেন তারা।
ঢাকার বৃহৎ পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারের মেঘনা ফার্মের মালিক নজরুল ইসলাম। মৌসুমী ফলের এই আড়ৎদার সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, ঈদের পর এখনও পাইকাররা তেমন আসতে শুরু করেনি। এ কারণে অল্প কিছু পণ্য বেচাকেনা হচ্ছে। আগে এক পিকআপ ভ্যান আনারস নামালে মুহূর্তেই নিয়ে যেত খুচরা বিক্রেতারা। এখন সেগুলো বিক্রি হচ্ছে না।
একারণে তিন-চারজন আড়ৎদার এক আড়তে বসে ব্যবসা করছে বলে জানান এই ব্যবসায়ী।
এদিকে এসব ফল কিনে এক সপ্তাহও বিক্রি করতে না পেরে আফসোস করছেন খুচরা বিক্রেতারা। তারা জানান, বিক্রি করতে না পারায় অনেক ফল নষ্ট হয়ে গেছে। এখন একটু একটু করে ক্রেতা বাড়ছে। সামনের সপ্তাহে চাহিদা বাড়তে পারে।
সব মিলে ফল-সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম আগামী সপ্তাহে কিছুটা বাড়তি থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা।
শুক্রবার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গ্রীষ্মকালীন সবজি প্রতিকেজি কচুরমুখী ৮০ টাকা, বেগুন ৫০-৬০ টাকা, করলা ৬০-৮০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা ও শসা ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি পেঁপে ৫০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, সজনে ১৬০ টাকা এবং কাঁচা আম প্রকারভেদে ৮০ থেকে ১২০ টাকায় পাওয়া গেছে এদিন। আর প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়।
শীতকালীন কিছু সবজি এখনও পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিকেজি মুলা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, শিম ৭০-৮০ টাকা, পাকা টমেটো ৪০-৬০ টাকা ও গাজর ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি পিস ফুলকপি ৪০-৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০-৫০ টাকা ও ব্রোকলি ৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
লেবুর হালি ২০ টাকা থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত আছে। ধনেপাতার কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা। কাঁচাকলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। মিষ্টি কুমড়া ৪০-৫০ টাকা ও কাঁচা মরিচ ৮০-১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতি আঁটি লাল শাক ১০-১৫ টাকা, লাউ শাক ৩০ টাকা, মুলা শাক ১৫ টাকা, পালং শাক ১০-১৫ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে এদিন।
ঈদের কয়েক দিন আগেই মুরগির দাম কিছুটা বাড়ে, যা এখনও রয়েছে। বাজারে ব্রয়লার মুরগি ২২৫-২৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সোনালি মুরগি ৩৭০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ৩৬০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০-৬৮০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩৫০ টাকা এবং সাদা লেয়ার ৩৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭৫০-৭৭০ টাকা, গরুর কলিজা ৭৫০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০-৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এক ডজন লাল ডিম ১২৫ টাকায় ও হাঁসের ডিম ১৮০ টাকায় পাওয়া গেছে। আর দেশি মুরগির ডিমের হালি ছিল ৮৫ টাকা।
ঢাকার নর্দার মোড়ক কাঁচাবাজারের বিক্রেতা মো. আলম জানান, তিনি গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় ফিরেছেন। শুক্রবার পাইকারি বাজার থেকে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, আলু কিনে এনেছেন বিক্রির জন্য। ঈদের আগেও যে দামে বিক্রি করছিলেন, এখনও সেই দামেই বিক্রি করছেন।
তার ধারণা, সামনের সপ্তাহে দাম কিছুটা বাড়তে পারে। কারণ পণ্যের চাহিদা বাড়তির দিকে থাকবে।
নর্দার এই বাজারে এদিন প্রতিকেজি আলু ৪৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৫৫-৬০ টাকায় পাওয়া গেছে। আর দেশি রসুন ১২০ টাকা ও বিদেশি রসুন ২২০ টাকা কেজি পড়েছে। আদার কেজি ছিল ২০০-২২০ টাকা।