আনন্দ আর সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে এসেছে ঈদ। কারও স্বাচ্ছন্দ্যে যেমন ঈদ এসেছে, তেমনই এসেছে দারিদ্রেও। যেমন হাওয়া বেগমের কথাই ধরা যাক।
ঢাকার তেজগাঁও ১৪ নম্বর এলাকা। এখানে বিজয় স্মরণী-তেজগাঁও ফ্লাইওভারের নিচে প্রায় অর্ধশত গৃহহীন মানুষের বাস। তাদের কেউ পলিথিন আর বাঁশ দিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই বানিয়েছে, আবার কারও জন্য ফ্লাইওভারটাই ছাদ। এদেরই একজন হাওয়া বেগম।
নামটা বলতে পারলেও বয়স আর ঠিকঠাক হিসাব করে বলতে পারেন না। ফ্লাইওভারের পিলারের সঙ্গে পলিথিন ছড়িয়ে কোনও রকমে থাকার জায়গা বানিয়েছেন তিনি। এভাবেই কাটিয়ে দিয়েছেন ১০ বছরেরও বেশি সময়। হাওয়া বেগমের মনেও আজ লেগেছে ঈদের আনন্দের ছোঁয়া।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সড়কের পাশেই মাটির চুলায় রান্না করছিলেন তিনি। রান্নার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন পথে পথে কুড়ানো কাপড় আর কাগজের টুকরো। ‘কী রান্না হচ্ছে আজ?’ কাছে গিয়ে প্রশ্ন করতেই হাসিমুখে বলেন, “খাসির গোস্ত রানতেছি।”
সড়কে পড়ে থাকা প্লাস্টিকের বোতল, কাগজ কুড়িয়ে জীবন চালান তিনি। দুর্মূল্যের বাজারে খানিকটা খাসির মাংস যোগাড় করতে পারায় স্বস্তি তার চোখেমুখে। জানালেন, বুধবার নাখালপাড়ায় বোতল কুড়ানোর সময় একজন তার সন্তানের আকিকার মাংস দিয়েছিলেন। সেটাই এনে রেখে দিয়েছিলেন। ঈদের দিন হওয়ায় রান্না করছেন।
একসময় হাওয়া বেগমের বাড়ি ছিল, পাশে ছিল স্বামী। সেসবই এখন অতীত। জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামে একসময় বাস ছিল তার। বাবা সব বিক্রি করে দেওয়ায় এখন আর কোনও ভিটেমাটি নেই। বিয়ের পর স্বামী ইমন মিয়ার সঙ্গে ঢাকায় এসেছিলেন। কারওয়ান বাজারে মালামাল টানার কাজ করতেন ইমন।
শুরুতে কিছুদিন সুখেই ছিলেন। তারপর স্বামীর অসুস্থতায় আবার কপাল পোড়ে তার। অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে ঠাঁই হয় রাস্তায়। এরপর থেকে হাওয়া বেগমের জীবন কাটছে কাগজ আর বোতল কুড়িয়ে।
৪ বছর আগে স্বামীকে হারান তিনি। এখনও স্বামীর কথা মনে হলে আবেগপ্লুত হয়ে পড়েন। হাওয়া বেগম বলেন, “অসুখে মানুষটা ম্যালা কষ্ট করছে, কিন্তু ট্যাকার লাইগ্যা ডাক্তার দেখাবার পারি নাই।”
হাওয়া বেগমের পাশের একটি ছাউনিতে থাকেন মালা। সঙ্গে থাকে স্বামী আর দুই মেয়ে। এবারের ঈদে দুই মেয়েকে লাল জামা কিনে দিয়েছেন তিনি। সকাল থেকে সেই জামা পরে আনন্দে মেতেছে দুই বোন।
জানা গেল, মালার স্বামী জলিল মোল্লা শ্রমিকের কাজ করেন। বড় মেয়ে খাদিজার বয়স সাড়ে ৫ বছর আর জান্নাতুনের বয়স ৩ বছর।
ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই লাল রঙের জামার বায়না করেছিল খাদিজা আর জান্নাতুন। মালা বলেন, “সকাল থাইকাই জামা পইরা ঘুইরা বেরাইতেছে ওরা। এই গরমেও খুলতেছে না। ওগো খুশি দেইখ্যা ভালো লাগতেছে।”