ঢাকায় হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের প্রধান এই জামাত শুরু হয়। নামাজ শেষে মোনাজাতে দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনার পাশাপাশি মজলুম ফিলিস্তিনিদের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করা হয়।
ঈদের নামাজ আদায়ের পর করমর্দন ও কোলাকুলি করে সবাই নিজেদের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের প্রধান জামাত শুরু হলেও তার আগেই দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে ঈদগাহ চত্বর। ঈদ জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন।
নানান বয়সী মানুষ এদিন নামাজ পড়তে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে আসেন। তেমনই একজন রায়েরবাগের মাহবুব আলম। তিনি জানালেন, সাধারণত গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জেই ঈদ করেন, তবে এবার কাজের কারণে বাড়ি যাওয়া হয়নি। তাই সকালে দুই ছেলেকে নিয়ে চলে আসেন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে।
সকাল সন্ধ্যাকে মাহবুব বলেন, “আমি তো নামাজ পড়ি দেশে (গ্রামের বাড়িতে)। এবার দেশে যাইনি। তাই ভাবলাম ছেলেদের নিয়ে আসি এখানে।”
বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নানান বয়সী মানুষের সঙ্গে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাতে শরীক হয়েছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও। এ কারণে নিরাপত্তাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে ছিল সর্বোচ্চ গুরুত্ব।
এ প্রসঙ্গ টেনে মাহবুব আলম বলেন, “বাংলাদেশের সকল জ্ঞানী-গুণী মানুষ এখানে নামাজ পড়তে আসেন। তাদের সাথে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার সুযোগ তো সব সময় হয় না। তাই ছেলেদের নিয়ে এসেছি।”
সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। মাহবুব বলেন, “সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। ভেতরে ঢোকা এবং বের হওয়া সবকিছুই নিয়ম মেনে হয়েছে। আরামেই নামাজ পড়তে পেরেছি।”
এবার জাতীয় ঈদগাহে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৩০ জন নামাজ আদায় করেছেন। তাদের মধ্যে ২৫০ জন পুরুষ ও ৮০ জন নারীর পৃথকভাবে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়। অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ময়দানের সামনের অংশে ছিলেন। জায়গাটি বাঁশ দিয়ে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয়। আর সাধারণ মানুষদের মধ্যে ৩১ হাজার পুরুষ আর সাড়ে ৩ হাজার নারী ময়দানে নামাজ আদায় করেন।
নারীদের জন্য নামাজের পৃথক ব্যবস্থা থাকার কারণে জীবনে প্রথমবারের মত স্ত্রীকে নিয়ে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাতে অংশ নেন শনির আখরার বাসিন্দা মো. আবুল কাশেম। বর্তমানে অবসর জীবন কাটানো ইন্সুরেন্স কোম্পানির সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, “এই প্রথমবার এলাম এখানে। নারীদের আলাদা করে নামাজ পড়ার সুযোগ আছে। তাই বউকে নিয়ে চলে এলাম। ভালো ব্যবস্থাপনা এখানে থাকবে– এই চিন্তা করে চলে এসেছি।”
জাতীয় ঈদগাহের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় খুশি আবুল কাশেম বলেন, “এখানে অনেক মানুষ নামাজ পড়ে। এখানে নামাজ পড়লে বেশি সোয়াব হবে। আর সব কিছু এখানে ঠিকঠাক ছিল। শান্তিতেই নামাজ পড়া গেছে।”
জাতীয় ঈদগাহ মাঠে গরমের কথা মাথায় রেখে ৭০০টি সিলিং ফ্যান ও ১০০টি স্ট্যান্ড ফ্যানের ব্যবস্থা করা হয়। আলোর স্বল্পতা এড়াতে লাগানো হয় ৭০০ টিউবলাইট।
বংশাল ছুড়ীটোলার ৭ বছর বয়সী রিহান বাবার সঙ্গে আসে জাতীয় ঈদগাহে। খুশি মনে সকাল সন্ধ্যাকে সে বলে, “ভেতরে ফ্যান ছিল। তাও আমার একটু গরম লেগেছে।”
গরম লাগলেও ঈদগাহে নামাজ পড়ে খুশি রিহান। সে বলল, “এত মানুষ এসেছে এখানে। আমি তো দেখি নাই একসাথে এত মানুষ।”
আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় ঈদগাহে এবার প্যান্ডেল তৈরি করতে ৪৩ হাজার বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। ১৫ টনের বেশি রশির প্রয়োজন হয়েছে। বৃষ্টি থেকে মুসল্লিদের রক্ষা করতে ১ হাজার ৯০০টি ত্রিপল টাঙানো হয়েছে।