Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

জলাবদ্ধ সিলেটে দুর্ভোগের ঈদ 

ভারি বৃষ্টিতে সিলেট নগরীর অনেক এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এতে নির্ধারিত অনেক স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি।
ভারি বৃষ্টিতে সিলেট নগরীর অনেক এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এতে নির্ধারিত অনেক স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি।
Picture of আঞ্চলিক প্রতিবেদক, সিলেট

আঞ্চলিক প্রতিবেদক, সিলেট

ভারি বৃষ্টিতে সিলেট নগরের প্রায় অর্ধেক এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ায় নির্ধারিত অনেক স্থানে ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। অনেক মসজিদে ঈদের জামাতের সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়। পশু কোরবানি দিতেও দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নগরবাসীর ঈদ-আনন্দ ফিকে হয়ে গেছে।

রবিবার দিবাগত রাত ২টার পর থেকে সিলেটে ভারি বৃষ্টি শুরু হয়। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। কোথাও হাটু সমান, কোথাও কোমর সমান পানিতে ডুবে আছে নগর।

সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও নগরের বৃষ্টির পানি নামতে না পারায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শাহী ঈদগাহে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৮টায়। এখানে ঈদের নামাজ আদায় করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। প্রতি ঈদে লাখো মুসল্লি এখানে ঈদের নামাজ আদায় করলেও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এবার জামাতে উপস্থিতি ছিল কয়েক হাজার মুসল্লি।

হযরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহ মসজিদ এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ায় ঈদের জামাত মসজিদগুলোতে নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হতে পারেনি।

নগরের অনেক এলাকা পানি নিমজ্জিত থাকায় অনেকেই ঈদের নামাজও আদায় করতে পারেননি। মহানগরের অনেক এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে গেছে।

পানি ঢুকে ঘরে জিনিসপত্র নষ্ট হচ্ছে।

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও পানি ঢুকেছে। জলমগ্ন এলাকাগুলোর বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় ঈদের আয়োজন বিশেষ করে কোরবানি আদায় নিয়ে বিপাকে পড়েছেন নগরবাসী। 

সিলেটের দরগামহল্লা এলাকার বাসিন্দা সলমান আহমদ চৌধুরী বলেন, “সিটি করপোরেশনের অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে আমাদের ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে গেছে। সমস্ত এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় পশু জবাই করার মতো জায়গা খুঁজে পাচ্ছি না।”

সিলেট শাহজালাল উপশহরের এ ব্লকের বাসিন্দা সালেহ আহমদ সেলিম জানান, তার বাসার ভেতর পানি ঢুকেছে। গ্যারেজে রাখা কোরবানির পশু পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে। পানি কমলে পশু জবাইয়ের ব্যবস্থা করবেন তিনি।  

পশু কোরবানি নিয়েও দুশ্চিন্তা।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক গোলাম সোবহান চৌধুরী দীপন বলেন, বিগত বছরগুলোতে নগরজুড়ে চলা অপরিকল্পিত কর্মকাণ্ডের ফল এখন নগরবাসীকে ভোগাচ্ছে। গায়ের জোরে কাজ হয় না, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্যে যে পরিকল্পনা ও দক্ষতার প্রয়োজন পড়ে, একথা পূর্বতন কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি। মানুষ এখন অভিযোগ করছেন যে, হাজার কোটি টাকার কাজে দুর্নীতি হয়েছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, রবিবার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ১৭৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার। সোমবার সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৮৬ মিলিমিটার।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, সিলেটে ভারি বৃষ্টির কারণে নগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে নদ-নদীর পানিও দ্রুত গতিতে বাড়ছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। তিনি জানান, ১৫ জুন সকাল ৯টা থেকে ১৬ জুন সকাল ৯টা পর্যন্ত পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ৪৪১ মিলিমিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ১২৬ মিলিমিটার।

কোথাও হাটু সমান, কোথাও কোমর সমান পানিতে ডুবে আছে নগর।

পাউবোর সোমবার সকাল ৯টায় রেকর্ড করা তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা সকাল ৬টায় ছিল ৫৯ সেন্টিমিটার। কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা সকাল ৬টায় ছিল ৬৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে। সারিঘাটে সারি নদীর পানি বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা সকাল ৯টায় ছিল বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার উপরে। জেলার অন্যান্য পয়েন্টে পানি বাড়লেও বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি।

সিলেটে ভারি বৃষ্টিতে নগরের শাহজালাল উপশহর, দরগামহল্লা, সুবিদবাজার বনকলাপাড়া, কাজলশাহ, মেডিকেল রোড, এয়ারপোর্ট রোড, বাগবাড়ি, কালীবাড়ি, হাওলাদারপাড়া, সোবহানীঘাট, যতরপুর, তেরোরতন, সোনারপাড়া, কেওয়াপাড়া, সাগরদিঘিরপার, পাঠানটুলা, মিয়া ফাজিলচিশত, জালালাবাদ, হাউজিং এস্টেট, ঘাসিটুলা, হাওয়াপাড়া, মীরাবাজার, শিবগঞ্জ, মাছিমপুর, জামতলা, তালতলা ও শেখঘাট এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ঈদের দিন জলাবদ্ধতার কারণে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, এজন্য খুবই মর্মাহত। সিটি করপোরেশনের কর্মীরা বৃষ্টির মধ্যেও পানি নিষ্কাশনের জন্য কাজ করছে। বৃষ্টি কমায় আশা করি নগরের পানিও নেমে যাবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত