ঘড়ির কাঁটায় তখন বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টা। কমলপুরে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ২ নম্বর প্লাটফর্মে ইঞ্জিন চালু করে দাঁড়িয়ে ছিল উপকূল এক্সপ্রেস। ট্রেনটির ভেতর ঈদে ঘরমুখী যাত্রীতে প্রায় ঠাসা। এ অবস্থায় হঠাৎ করেই নোয়াখালীগামী এই ট্রেন থেকে নেমে প্লাটফর্মে ফ্যানের নিচে বসে পড়লেন শাহ আলম নামে এক যাত্রী। পঞ্চাশোর্ধ্ব এই যাত্রীর শরীর থেকে টপ টপ করে ঝরছে ঘাম। তার পরনে শার্টটি ঘমে সম্পূর্ণ ভিজে গেছে; চোখ-মুখে ক্লান্তির ছাপ।
ট্রেন থেকে নেমে আসার কারণ জানতে চাইলে শাহ আলম বলেন, “ভাই বেলা ৩টা ১০ মিনিটে উপকূল এক্সপ্রেসের ঢাকা ছাড়ার কথা। প্রায় আধ ঘণ্টা হতে চলল, ট্রেন ছাড়ার কোনও লক্ষ্মণই পাওয়া যাচ্ছে না। ট্রেনটির বেশিরভাগ বগিই (কোচ) নন-এসি। সব বগিতেই যাত্রীতে ঠাসা। ট্রেনের ভেতরে সেদ্ধ হয়ে যাচ্ছিলাম। তাই টিকতে না পেরে বাইরে চলে এসেছি।”
তিনি বলেন, “সব ট্রেনেই লেটে ছাড়ছে। রেল কর্তৃপক্ষ শিডউল মেইন্টেইন করতে পারছে না। আর পারবেই বা কী করে? ঢাকায় ট্রেনের প্রবেশ আর বের হওয়ার মাত্র দুটি লাইন। ক্লিয়ারেন্স না পেলে তো আর ট্রেন ছাড়া সম্ভব নয়।”
প্লাটফর্মে আরও প্রায় মিনিট বিশেক অপেক্ষার পর বিকাল পৌনে ৪টার দিকে উপকূল এক্সপ্রেস নোয়াখালী রওনা হয়। সময়ের হিসাবে ৩৫ মিনিট বিলম্বে ছাড়ে ট্রেনটি।
উপকূল এক্সপ্রেসের মতো ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঈদযাত্রার প্রথম দিনই শিডউল রক্ষা করতে পারেনি অধিকাংশ ট্রেন। ফলে দুর্ভোগে পড়ে হাজারো ঘরমুখো যাত্রী। প্রায় প্রতিটি ট্রেনই আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা, বা তারও বেশি সময় বিলম্বে গন্তব্যে রওনা হয়। সন্ধ্যা ৬টায় পর্যন্ত ১৫টিরও বেশি ট্রেন এই তালিকায় ছিল।
রেল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ঈদযাত্রার প্রথম দিন বুধবার কমলাপুরে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৬৬ জোড়া ট্রেন ছাড়বে। এর পাশাপাশি ঈদের বিশেষ ট্রেন রয়েছে একটি। ঈদ উপলক্ষে একাধিক ট্রেনের সঙ্গে ২৫টির মতো বাড়তি কোচ ( বগি) সংযুক্ত করা হয়েছে। গত ২ জুন যারা অগ্রিম টিকেট কিনেছিলেন বুধবার (১২ জুন) তাদের নিয়েই ট্রেনের ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে।
তবে শুরুর দিন সকাল থেকেই ট্রেনের বিলম্বিত যাত্রা শুরু হয়। দিনের প্রথম ট্রেন রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস (৭৬৯) ভোর ৬টায় ছাড়ার কথা ছিল। ট্রেনটি ছেড়েছে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে। দিনের দ্বিতীয় ট্রেন কক্সবাজারগামী পর্যটক এক্সপ্রেস (৮১৬) ভোর সোয়া ৬টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ছেড়েছে ৬টা ৫০ মিনিটে। তৃতীয় ট্রেন সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস (৭০৯) সকাল সাড়ে ৬টার বদলে কমলাপুর ছেড়ে গেছে সকাল সাড়ে ৮টায়।
এরপর মোহনগঞ্জগামী মহুয়া কমিউটার (৪৩) সকাল সোয়া ৮টায়, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী কমিউটার পৌনে ৯টায়, রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস (৭৭১) সকাল ৯টা ১০ মিনিটে ছেড়ে যেতে পারেনি। সবকটি ট্রেনই নির্ধারিত সময়ের প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পরে ছেড়েছে।
দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে ছাড়তে পারেনি, ছেড়েছে এক ঘণ্টা পর সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে। জামালপুর এক্সপ্রেস (৭৯৯) সকাল ১০টায়, পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস (৭০৫) সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও পারেনি।
ঈদের আগে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ১৩ জুন শেষ কর্মদিবস। এদিন সকাল থেকেই যাত্রীদের চাপ আরও বাড়বে। তাই ঈদযাত্রার বাকি দিনগুলোতে ট্রেনের শিডিউল রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তাদের মূল উদ্দেশ্য যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া। যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ট্রেনগুলো ১০-২০ মিনিট দেরিতে ছাড়তে পারে।
তিনি বলেন, “ঢাকায় আসার পর ট্রেনগুলো আবার ছেড়ে যায়। এখন ওইদিক থেকে যদি কোনও ট্রেন দেরিতে আসে তাহলে ট্রেনগুলো এখান থেকেও দেরিতে ছেড়ে যায়। কারণ ট্রেনগুলো ঢাকায় আসার পরে ক্লিনিং, ওয়াটারিং করা হয়। এজন্য প্রত্যেকটা ট্রেনে অন্তত এক ঘণ্টা সময় লাগে।”