Beta
বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০২৫

একুশের সেই গান যদি লেখা না হতো?

ekushe feb songs
[publishpress_authors_box]

‘আমার ভাইয়ের রক্ত রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?’

বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখে এই গান শোনেনি এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। তবে যদি ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি আব্দুল গাফফার চৌধুরী এই গান লিখে না ফেলতেন?

সেদিন ভাষা-শহীদ রফিকউদ্দিনের মরদেহ দেখে কলেজপড়ুয়া আব্দুল গাফফার লিখে ফেলেন একটি কবিতা। একুশের প্রথম লিফলেটে ছাপাও হয় কবিতাটির কিছু লাইন। লিফলেটের শিরোনাম ‘বিপ্লবের কোদাল দিয়ে আমরা অত্যাচারী, শাসকগোষ্ঠীর কবর রচনা করব’।

পরে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘একুশে ফেব্রুয়ারী’ সংকলনে আব্দুল গাফফার চৌধুরীর ‘একুশের গান’ শিরোনামে কবিতাটি প্রকাশ হয়। এই গানে প্রথম সুর বসিয়েছিলেন আব্দুল লতিফ।

১৯৫৪ সালে প্রখ্যাত সুরকার আলতাফ মাহমুদ গানটিতে নতুন করে সুর দেন। সেই সুরটিই এখন আমরা শুনতে পাই।

তবে বাঙালির ভাষার দাবি নিয়ে আরও অন্তত দুটি গান আছে- ‘তোরা ঢাকার শহর রক্তে ভাসাইলি’ অথবা ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’। এসব গানও ভাষা আন্দোলন আর শহীদদের স্মরণে দেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কিংবা রাজনৈতিক সভাগুলোতে গাওয়া হয়।

এই গানগুলোও ধারণ করে ভাষা আন্দোলনের চেতনা এবং আবেগ।

ঢাকার শহর রক্তে ভাসাইলি

গানটি শুনতে উপরের প্লে বোতামে ক্লিক করুন

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনও করিলিরে বাঙ্গালী

তোরা ঢাকার শহর রক্তে ভাসাইলি

অনেকে মনে করেন এই গানটি ভাষা আন্দোলন নিয়ে রচিত প্রথম গান। ‘রাষ্ট্র ভাষা গান’ নামে পরিচিত এই গানের রচয়িতা কবি শেখ শামসুদ্দীন। তবে এটিই যে ভাষা আন্দোলনের প্রথম গান এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না।

জানা যায়, ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বাগেরহাট এ, সি, লাহা টাউনক্লাবের এক সমাবেশে কবি শামসুদ্দীন নিজ কণ্ঠে এই গান গেয়েছিলেন।

জারি গানের সুরে রচিত এ গানে উঠে এসেছে ব্রিটিশ শাসনের যাতনা, উঠে এসেছে পাকিস্তান পর্বে বাঙালির পুনর্বার শোষিত হবার বেদনা। ভাষা শহীদদের গানে চিত্রিত করা হয়েছে বাংলা মায়ের চিরায়ত পুত্র বিয়োগের স্থান থেকে। 

এই বিয়োগ ব্যথা সুরে সুরে আমাদেরও আচ্ছন্ন করে রাখে। গানের কথা আমাদের বার বার স্মরণ করিয়ে দেয় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত ঢাকার রাজপথের কথা। আমরা ফিরে যাই যেন ৫২ সালের ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখে। 

ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়

গানটি শুনতে উপরের প্লে বোতামে ক্লিক করুন

‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’ গানটিও ভাষা দিবসের একটি উল্লেখযোগ্য গান। 

গণসঙ্গীত শিল্পী আবদুল লতিফ এই গানটি অবশ্য লিখেছিলেন ১৯৫১-এর শেষ ভাগে। তবে গানটি ৫২ সালের পরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। গানটির সুরকারও তিনি। 

বাউল সুরের এই গানে দ্রোহ যেমন আছে তেমনি এই গানটিতে পাওয়া যায় গ্রাম বাংলার গানের বহুবৈচিত্রের রেফারেন্স। যেমন-

“ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায়

ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায়

ওরা কথায় কথায় শিকল পরায় আমার হাতে-পায়ে

ওরা কথায় কথায়

ওরা কথায় কথায় শিকল পরায় আমাদেরই হাতে-পায়ে

ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায়

ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায়”

একই সাথে-

“যে শুইনাছে আমার দেশের গাঁওগেরামের গান

নানান রঙয়ের নানান রসে, ভইরাছে তার প্রাণ

যে শুইনাছে আমার দেশের গাঁওগেরামের গান

নানান রঙয়ের নানান রসে, ভইরাছে তার প্রাণ

যপ-কীর্তন, ভাসান-জারি, গাজীর গীত আর কবি সারি

যপ-কীর্তন, ভাসান-জারি, গাজীর গীত আর কবি সারি

আমার এই বাংলাদেশের বয়াতিরা নাইচা নাইচা কেমন গায়”

আমাদের ভাষা এবং সংস্কৃতি বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। একটি আক্রান্ত হলে অপরটিও হবে স্বাভাবিক নিয়মে। শিল্পী আব্দুল লতিফ মূলত এই বিষয়টির সাথে শ্রোতাদের সংযোগ ঘটাতেই এই গানে দ্রোহ এবং নানা বৈচিত্রের কথা নিয়ে এসেছেন।

ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ, দুপুর বেলার অক্ত

গানটি শুনতে উপরের প্লে বোতামে ক্লিক করুন

রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে বিতর্কিত কবি আল মাহমুদের একটি কবিতাও রূপান্তরিত হয়েছে গানে। তার ‘ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ,দুপুর বেলার অক্ত’ গানটিতে সুরারোপ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের গণসংগীত শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়। 

ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ, দুপুর বেলার অক্ত

ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ

দুপুর বেলার অক্ত

বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায় ?

বরকতের রক্ত।

হাজার যুগের সূর্যতাপে

জ্বলবে এমন লাল যে,

সেই লোহিতেই লাল হয়েছে

কৃষ্ণচূড়ার ডাল যে !

প্রভাতফেরীর মিছিল যাবে

ছড়াও ফুলের বন্যা

বিষাদগীতি গাইছে পথে

তিতুমীরের কন্যা।

চিনতে না কি সোনার ছেলে

ক্ষুদিরামকে চিনতে ?

রুদ্ধশ্বাসে প্রাণ দিলো যে

মুক্ত বাতাস কিনতে ?

পাহাড়তলীর মরণ চূড়ায়

ঝাঁপ দিল যে অগ্নি,

ফেব্রুয়ারির শোকের বসন

পরলো তারই ভগ্নী।প্রভাতফেরী, প্রভাতফেরী

আমায় নেবে সঙ্গে,

বাংলা আমার বচন, আমি

জন্মেছি এই বঙ্গে।

আবদুল গাফফার চৌধুরী যদি সেদিন ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ না লিখতেন, তাহলে এই তিন গানের কোনওটিই কি স্থায়ী হয়ে যেত বাংলাদেশের মানুষের মনে?

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত