Beta
বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪

৭ জানুয়ারির নির্বাচনের যে ফাঁক খুঁজে পেয়েছে এনডিআই-আইআরআই

৭ জানুয়ারি ঢাকার একটি ভোটকেন্দ্রের দৃশ্য।
৭ জানুয়ারি ঢাকার একটি ভোটকেন্দ্রের দৃশ্য।
[publishpress_authors_box]

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি সংস্থা।

শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) ও ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) টেকনিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট মিশন (টিএএম) প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।

তারা বলছে, ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন সব মিলিয়ে গুণগত মানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি।

দু্ই মাস আগে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় বসেছে আওয়ামী লীগ। তাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ফলে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া দলীয় নেতাদের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়।

ওই নির্বাচন চলাকালীন ও আগে-পরের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশে এসেছিল বেসরকারি সংস্থা আইআরআই ও এনডিআইর প্রতিনিধিরা। তারা সম্মিলিতভাবে গত ৩০ বছরে বিশ্বের ৫০টির বেশি দেশে ২০০টির বেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে।

টিএএম মিশনের অংশ হিসেবে চারজন বিশ্লেষকের একটি দল গত ২০ ডিসেম্বর থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের নির্বাচনী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে।

তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রচার ও নির্বাচনের দিনসহ অন্য সময়ে শারীরিক ও অনলাইন সহিংসতা কম হয়েছে।

এক্ষেত্রে সংস্থা দুটি আগের নির্বাচনগুলোর পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করেছে। তবে সহিংসতা কম হওয়ার কারণ হিসেবে তারা নির্বাচনী প্রতিযোগিতার অনুপস্থিতি এবং দেশের নিরাপত্তায় সরকারের বাড়তি নজরকে চিহ্নিত করেছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনী সহিংসতা মূলত দুটি প্রাথমিক রূপে দেখা দেয়। প্রথমটি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে এবং দ্বিতীয়টি বিরোধী দলের বয়কট প্রচেষ্টার মাধ্যমে।

প্রান্তিক গোষ্ঠী, বিশেষ করে নারী ও হিন্দুরাও নির্বাচনী সহিংসতার শিকার হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।

মিশনটি আরও খুঁজে পেয়েছে যে, বাংলাদেশের আইনি কাঠামো লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা সম্পূর্ণরূপে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েছে, বিশেষ করে নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে।

“নারী প্রার্থীরা মিশনকে জানিয়েছে, জনসমাগমে ও অনলাইনে তাদের অপমান ও হুমকির শিকার হতে হয়েছে। বিশেষ করে পুরুষ প্রতিপক্ষ ও তাদের সমর্থকদের কাছ থেকে। এছাড়া রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তারা তাদের অভিযোগের কোনও সাড়া দেননি।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারির নির্বাচনের গুণগত মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে শাসক দল ও বিরোধীদের সহিংসতা, প্রাক নির্বাচনী পরিবেশ, রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সহিংসতা, নাগরিক স্বাধীনতার সংকোচন এবং বাক স্বাধীনতা ও সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতার অবনতির কথা।

মিশন থেকে নির্বাচনী সহিংসতা মোকাবেলায় ২৮টি সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে নিরাপত্তা কর্মীদের জন্য আচরণবিধি প্রতিষ্ঠা, নির্বাচনী সহিংসতা সম্পর্কিত মামলাগুলো দ্রুত ও স্বাধীন বিচার ও পর্যালোচনার জন্য আইনি কাঠামো, রাজনৈতিক নেতাদের দলে অহিংসতার সংস্কৃতি গড়ে তোলা, সংখ্যালঘু ও নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার মতো বিষয়গুলো রয়েছে।

নির্বাচনের সময় সোশাল মিডিয়ার ঘটনাবলীও পর্যবেক্ষণ করেছেন মিশনের সদস্যরা।

তাদের মতে, নির্বাচনের সময় সোশাল মিডিয়ায় হিংসাত্মক বক্তব্য অব্যাহত ছিল। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি, উভয় দলের দিক থেকেই সোশাল মিডিয়ায় হিংসাত্মক বক্তব্য দেওয়া হয়। তবে আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই বেশি আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ছিল।

সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে মিশনকে অংশীজনরা জানিয়েছেন, সরকারের প্রতিশোধের ভয়ে সংবাদমাধ্যম সেল্ফ সেন্সরশিপে ছিল। সাংবাদিকরা নির্বাচনী প্রচার ও বিক্ষোভের সময় ক্ষমতাসীন ও বিরোধী উভয় দলের সহিংসতার শিকার হয়েছে।

নির্বাচনী নিরাপত্তার জন্য বাজেট বাড়ানোসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকিতে সরকারের সমন্বিত ইউনিট গঠনের বিষয়ও প্রতিবেদনে জায়গা পেয়েছে।

তবে সংস্থা দুটির অভিযোগ, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুবিধা দিতে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা পরিষেবা ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান অসমভাবে নির্বাচনী বিধি প্রয়োগ করেছে।

বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও বিরোধী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহতের জন্য সরকারের প্রচেষ্টা ন্যায়সঙ্গত ছিল না, এমনটাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশে অবস্থানকালে মিশনের সদস্যরা বিশ্লেষক, সরকারি কর্মকর্তা, নিরাপত্তা কর্মী, রাজনৈতিক দলের নেতা, সাংবাদিক, নাগরিক সমাজের সংগঠনসহ যুবক, নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি স্বীকৃত আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মিশনের সঙ্গে বৈঠক করে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত