প্রার্থিতা বাতিলে কপাল পুড়ল চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর। আর তাতেই কপাল খুলে গেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমানের।
এই আসনে জিততে নিজের সব ক্ষমতা, কৌশল প্রয়োগ করেন মোস্তাফিজ। গোল বাধে ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন। এদিন বাঁশখালী থানায় ওসির কক্ষে বসে ওসিকে হুমকি দেন। সেই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পায় নির্বাচন কমিশনও (ইসি)।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার মাত্র ১৫ মিনিট আগে নজিরবিহীনভাবে মোস্তাফিজের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত জানায় ইসি।
বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাশাপাশি আইন-শৃখলা বাহিনীর প্রতি হুমকি প্রদর্শন করেছেন।
এরপর তার পক্ষে অর্থাৎ নৌকায় দেওয়া সব ভোটই বাতিল হয়। এমনকি বিধি অনুযায়ী সেসব ভোট গণনাও করেনি নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা।
এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনে থাকা প্রার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন স্মার্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর ঈগল প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৮৯৯ ভোট। তার নিকটতম আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটন পেয়েছেন ৩২ হাজার ২২০ ভোট।
তবে এভাবে বিপাকে ফেলার চেষ্টা ‘পরিকল্পিত’ বলে মনে করছে মোস্তাফিজুরের পরিবার। তাদের মতে, এতে বিজয়ী প্রার্থী মুজিবুরের ‘হাত’ রয়েছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, এক সমর্থককে আটক করায় বাঁশখালী ওসি তোফায়েলকে শাসাচ্ছেন মোস্তাফিজুর। ওসি ও এমপির মাঝখানে দাঁড়িয়ে তার শ্যালক হাসান মুরাদ চৌধুরী মামুন। পুরো পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান থানায় প্রবেশের পর এক পুলিশ সদস্য ও এক সাংবাদিককে ভিডিও করতে দেখা যায়। পরে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামুন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, ‘‘বিষয়টি অবশ্যই পরিকল্পিত ছিল। এমপি সাহেব প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশসহ সাংবাদিকরা ভিডিও ধারণ শুরু করে।
‘‘তখনও এমপি ওসি সাহেবকে কিছু বলেননি। প্রথমে এমপি সাহেবকে উত্তেজিত করা হয়েছে, পরে সেই অংশটুকুই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি এমপি থানা থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই।’’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য বারবার চেষ্টা করেও মোস্তাফিজুর রহমানকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার পরিবারের কেউ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
তবে তারা চাইলে নির্বাচন কমিশনের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন।
চট্টগ্রামের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ওই প্রার্থীর আপিল করার সুযোগ আছে। আপিল করবেন কি না সেটি তার এখতিয়ার।
মোস্তাফিজের হারে ‘মেঘ না চাইতে বৃষ্টি’র মতো অবস্থা হয়েছে বিজয়ী মুজিবুর রহমানের। এর আগে একাধিকবার নৌকার মনোনয়ন চেয়েও পাননি তিনি।
আর বিএম ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনাও মুজিবুরকে দৌঁড়ে পিছিয়ে দেয় অনেকখানি। এবার তাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন এই শিল্পপতি।
মোস্তাফিজের পরাজয়ের হাত ধরে আসা নিজেদের জয়ে মুজিবুর শিবিরে এখন খুশির জোয়ার।