Beta
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫

‘পূর্ব পাকিস্তানেই বাস করছি আমরা’

জাতীয় প্রেসক্লাবে নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতা, সংখ্যালঘু মানুষের নিরাপত্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
জাতীয় প্রেসক্লাবে নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতা, সংখ্যালঘু মানুষের নিরাপত্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

নির্বাচনের সময় যেসব হামলা হয়েছে তার দায় আওয়ামী লীগ এড়াতে পারে না বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল।

শুক্রবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতা, সংখ্যালঘু মানুষের নিরাপত্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন বাস্তবায়ন জাতীয় নাগরিক সমন্বয় কমিটির ব্যানারে এ অনুষ্ঠান হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামালের পরিচালনায় গোলটেবিল আলোচনায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মানবাধিকার কর্মী শামসুল হুদা।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে না আসায় সংখ্যালঘুরা কিছুটা হলেও ভেবেছিল বোধ হয় এ নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক শক্তির আক্রমণ তেমন প্রকট হবে না। যদিও নির্বাচন পূর্ববর্তী দিনগুলোতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছিল।

অনুষ্ঠানের আয়োজকরা বলছেন, এই নির্বাচনেও বহু স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিশ্চিন্তে থাকতে পারেনি। বাড়িঘরে হামলা হয়েছে, লুটপাট অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

হামলার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দাবিদার দল আওয়ামী লীগের একাংশের হাতেই বা ‘স্বতন্ত্র’ নামে হামলার শিকার হয়েছেন হিন্দু সম্প্রদায়সহ অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষও।

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, “দেশ স্বাধীন করেছি। কিন্তু বাংলাদেশ নামের পূর্ব পাকিস্তানেই বাস করছি আমরা। এটা তো দুর্ভাগ্যের। আমরা তো এমন চাইনি। এজন্য তো যুদ্ধ করেনি।

“একসময় বিএনপি জামায়াতের দিকে অভিযোগ আসত। কিন্তু এখন কি আওয়ামী লীগ এর থেকে পিছিয়ে আছে? এবার আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ নির্বাচন হয়েছে। সবাই তো আওয়ামী লীগ। বিরোধীদল নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।”

মেজবাহ কামাল বলেন, “নির্বাচনের সময় কারা হামলা করেছে? হয় নৌকা প্রতীকের লোক, নাহলে স্বতন্ত্রের লোক। আওয়ামী লীগ তো এর দায় এড়াতে পারে না?”

এসময় তিনি নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার জন্য রাষ্ট্রীয় তদন্ত কমিটি করারও দাবি জানান। তবে বলেন, “দাবি করলেও আওয়ামী লীগের ওপর আর ভরসা রাখতে পারছি না।”

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, “ধার্মিক লোকও অসাম্প্রদায়িক হতে পারে। সাম্প্রদায়িকতা হলো সেটা যেটা অন্য সম্প্রদায়কে ঘৃণা করে এবং আক্রমণ করে।”

তিনি বলেন, “শিক্ষা পদ্ধতি যতক্ষণ ঠিক হবে না, যতক্ষণ শিশুদেরকে অন্য ধর্মের প্রতি সম্মান করার শিক্ষা দিতে পারবেন না- ততক্ষণ এসব হামলা আপনি থামাতে পারবেন না।”

আওয়ামী লীগ এ কাজ করতে পারবে না মন্তব্য করে এম এম আকাশ বলেন, “বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ এটা না, এটা অন্য আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ বিএনপির ওপর যেমন হামলা করেছে। তা কিন্তু জামায়াতের ওপরে করে নাই। তার মানে কোনও কম্প্রোমাইজ সে করেছে। আওয়ামী লীগও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে কাজে লাগাতে চায় তার ক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্য।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অধ্যাপক রুবাইয়াত ফেরদৌস বলেন, “আক্রমণ শুধু হিন্দুদের ওপর না; যেকোনও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপরই হয়। আমরা গাইবান্ধার বাগদা ফার্মের ঘটনা জানি। সেখানে তিনজন সাঁওতালকে হত্যা করা হয়েছে। সেই হত্যার সাথে জড়িত জনপ্রতিনিধির নাম সামনে এসেছে। সে তো এবারও পাস করল। তো কীভাবে সরকার এই হামলা থামাবে?

হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, “এসব হামলায় আমাদের আইনজীবীদের দায় আছে। আমাদের সংবিধানে কীভাবে রাষ্ট্রধর্ম থাকে, আমরা কেন আদালতে ভূমিকা নিতে পারলাম না- এটা পরিবর্তনের জন্য।”

তিনি আরও বলেন, “অর্থ, প্রভাব-প্রতিপত্তি থাকলে আপনার ওপর হামলা হবে না। দেখেন, বরগুনার শম্ভু বা পংকজ দেব নাথদের ওপর কিন্তু হামলা হবে না।”

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, “নির্বাচনের আগেই সংখ্যালঘু মানুষের ওপর হামলা শুরু হয়েছে। একজন সংখ্যালঘু হিসেবে আমি লজ্জিত। কিন্তু এই লজ্জা আমার একার না, বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষেরই লজ্জা পাওয়া উচিত।”

আওয়ামী লীগের দিকে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত একটি হামলারও বিচার হয়নি। কেউ একজন হিংস্র লোক হামলা করতে পারে, তাই বলে সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে বিচার করবে, এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু এই স্বাভাবিক ঘটনাটিও বাংলাদেশে ঘটে না। এর জন্য আওয়ামী লীগকে কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে।”

সুলতানা কামাল তার বক্তব্যে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেন। বলেন, নির্বাচন পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু সহিংসতা প্রতিরোধে রাষ্ট্র শাসকদলসহ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তথা ও প্রশাসনের ভূমিকা কেমন ছিল তার দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে। নিষ্ক্রিয় ও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ প্রশসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীদের জবাবদিহিতার ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনে শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

সুলতানা কামাল বলেন, সব দলকেই নির্বাচন পূর্ব বা পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু নির্যাতনের পুনরাবৃত্তি রোধে কী কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, ঘটনার প্রতিকারে কী করবে তার উল্লেখ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যে সব নেতার বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলকে এখনই দলগত ও আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও ব্যক্তিদের পর্যাপ্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিও জানান সুলতানা কামাল।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত