অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলছে, সেজন্য যেসব সংস্কার করার কথা রয়েছে সেগুলো করে ফেলার তাগিদ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার ঢাকার তেজগাঁও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে খুব বেশি সময় নেই। আমরা ইতোমধ্যে সাত মাস পার করে এসেছি। আমরা বলছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। কাজেই কি কি সংস্কার করতে চাই করে ফেলতে হবে।”
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনার দেড় দশকের শাসন অবসানের তিন দিন পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন ড. ইউনূস। তার কয়েক সপ্তাহ পর থেকে দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও জানিয়েছিলেন, আগামী ডিসেম্বরের দিকে নির্বাচন হতে পারে। ছয় মাস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে দায়িত্ব পালন করে এসে নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়কের দায়িত্ব নেওয়া নাহিদ ইসলামও বলেছিলেন, ডিসেম্বরে নির্বাচনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত আছেন।
এরপরও নির্বাচন ঠিক কখন হবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বাংলাদেশে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সফরে এলে তাকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো যদি ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ নিয়ে একমত হয়, তবে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে পারে। তারা যদি ‘বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ’ গ্রহণ করে, তাহলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে।”
এরপর সোমবার তিনি আবার ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানেরই ইঙ্গিত দিলেন। এজন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত করার কথাও বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারাও সংস্কারের কথা বলেছেন। কারও জন্য অপেক্ষা করে কোনও ফায়দা হবে না। কাজটা করতে হবে এবং সেটা আমাদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।”
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ভেঙে পড়া পুলিশ বাহিনীকে পুনরায় সংগঠিত করার প্রক্রিয়ায় সোমবার সারাদেশের মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের ঢাকায় নিজের কার্যালয়ে এনে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা।
দীর্ঘ ভাষণে তিনি সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে পুলিশকে ধারণা দেন, পাশাপাশি এই বাহিনীর মনোবল চাঙা করতে দেন নানা দিক-নির্দেশনা। ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার সুযোগ ব্যবহার করতে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সরকার যা কিছুই করতে চায়, শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাত দিয়েই করতে হয়। তবে তারা সব করে দেয় না, তারা পরিবেশটা সৃষ্টি করে। যে পরিবেশটা না থাকলে কোনও কাজই আর হয় না।”
আগামী সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে যে সরকার নির্বাচিত হবে, সেটি হবে আইনের শাসনের সরকার, তাই পুলিশকে সে অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে হবে।”
দেশ বদলাতে হলে একক নির্দেশে নয়, বরং সবাইকে নিয়ে এক একটি টিম হয়ে কাজ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন,“বাংলাদেশে যত টিম আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিম হলো পুলিশ। আমরা পুলিশকে অবহেলা করে দেশ গড়তে পারব না। তারাই সম্মুখসারির মানুষ। তারা ক্ষেত্র প্রস্তুত করলেই বাকি জিনিসগুলো হয়। আইনশৃঙ্খলা না থাকলে যত বড় বড় চিন্তাই হোক, যত টাকাই থাকুক, কোনও কাজে আসবে না।”
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কাজ করতে পুলিশের অত্যন্ত বেগ পেতে হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এগুলো সমাধানের চেষ্টা করব।”