Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

‘গৃহযুদ্ধ অনিবার্য’, যুক্তরাজ্যের দাঙ্গা নিয়ে মন্তব্য ইলন মাস্কের

যুক্তরাজ্যে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের ভয়াবহ অভিবাসী বিরোধী দাঙ্গা।
যুক্তরাজ্যে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের ভয়াবহ অভিবাসী বিরোধী দাঙ্গা।
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

যুক্তরাজ্যজুড়ে বিভিন্ন শহর ও নগরে চলছে অভিবাসনবিরোধী দাঙ্গা। এই দাঙ্গায় ইন্ধন জোগাতে একটি বড় ভূমিকা রাখছে সোশাল মিডিয়া।

এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের ইলন মাস্কের বিরুদ্ধেও এই দাঙ্গায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি টেসলা এবং মহাকাশযান কোম্পানি স্পেস এক্সের মালিক মাস্ক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সেরও (সাবেক টুইটার) মালিক।

ইলন মাস্ক রবিবার এক্সে এক পোস্টে মন্তব্য করেন, “গৃহযুদ্ধ অনিবার্য।” যুক্তরাজ্যে গণ অভিবাসন এবং উন্মুক্ত সীমান্ত বিরোধী সহিংস বিক্ষোভকে দায়ী করা একটি পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এই মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছে সিএনএস।

সোমবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর একজন মুখপাত্র মাস্কের মন্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “এর কোনও যৌক্তিকতা নেই।”

অভিবাসীবিরোধী বক্তব্য ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে মাস্কের ভূমিকা প্রমাণ করে, অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া মিথ্যা তথ্য বাস্তবেও সহিংসতাকে উস্কে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করছে। যুক্তরাজ্য সরকারও বিষয়টি নিয়ে ক্রমবর্ধমানভাবে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে।

যুক্তরাজ্য সরকার মঙ্গলবার এই দাঙ্গার জন্য দায়ীদের এবং পাশাপাশি তাদের অনলাইন চিয়ারলিডারদের বিচারের আওতায় আনার ঘোষণা দেয়। ওই ঘোষণার পরই সেই অনুযায়ী পদক্ষেপও নেওয়া শুরু হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস জানায়, মঙ্গলবার উত্তর ইংল্যান্ডের লিডসে ২৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানোর উদ্দেশ্যে হুমকিমূলক শব্দ ব্যবহার বা আচরণের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। সিপিএস-এর আইনি পরিষেবার পরিচালক নিক প্রাইস এক বিবৃতিতে বলেন, “অভিযোগটি ফেইসবুক পোস্ট” সংক্রান্ত।

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে দাঙ্গাবাজরা সরকারি ভবনগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, গাড়িতে আগুন দিয়েছে এবং পুলিশ অফিসারদের দিকে ইট-পাটকেল ছুঁড়েছে।

দাঙ্গাকারীরা উত্তর ও মধ্য ইংল্যান্ডের দুটি হলিডে ইন হোটেলেও আগুন ধরিয়ে দেয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। হোটেল দুটিতে বিভিন্ন দেশের আশ্রয়প্রার্থীরা সরকারের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছিল। এ ঘটনায় শতাধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত সপ্তাহে ডানপন্থী দলগুলো সোশাল মিডিয়ায় দাবি করে, একজন মুসলিম আশ্রয়প্রার্থী ছুরিকাঘাতে তিনজন শিশুকে হত্যা করেছে। অনলাইনে এই বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রতি ক্ষোভের জন্ম দেয়।

পুলিশ জানিয়েছে, অথচ ১৭ বছর বয়সী অ্যাক্সেল রুদাকুবানা নামের ওই সন্দেহভাজন হামলাকারী যুক্তরাজ্যেই জন্মগ্রহণ করেছেন।

কিন্তু ছুরি হামলা সম্পর্কিত ওই মিথ্যা দাবি দ্রুত অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি পুলিশ সত্য ঘটনা কী তা জানানোর পরও ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ব্রিটেনে এর আগে আর কখনো শিশুদের ওপর এমন ভয়াবহ হামলার ঘটনার নজির নেই।

ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগ নামের একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্কের হিসাব মতে, হামলার পরদিন ৩০ জুলাই দুপুরের মধ্যে কথিত হামলাকারীর একটি মিথ্যা নাম সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। শুধুমাত্র এক্সে ১৮ হাজারেরও বেশি অ্যাকাউন্ট থেকে ৩০ হাজার বার পোস্টটি মেনশন করা হয়।

আইএসডি এক বিবৃতিতে বলেছে, “সন্দেহভাজন হামলাকারীর মিথ্যা নামটি ইউজাররা যেমন প্রচার করেছে, তেমনি প্ল্যাটফর্মটির অ্যালগরিদমও পোস্টটি ইউজারদের সাজেস্ট করে।

“এমনকি পুলিশ নামটি মিথ্যা ছিল বলে নিশ্চিত করার পরেও সোশাল মিডিয়াগুলো সেটি আরও ছড়িয়ে দেয়। এতে তা আরও বেশি মানুষের নজরে পড়ে এবং ক্ষোভ সৃষ্টি করে।”

যুক্তরাজ্য সরকারের মতে, রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত কোনও ব্যক্তিরাও বটের মাধ্যমেও এইকাজ করে থাকতে পারে।

‘অনলাইন অপরাধ’ মোকাবেলা

সোশাল মিডিয়া কোম্পানিগুলো নিজস্ব অভ্যন্তরীণ নীতির কারণেই তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে ঘৃণাত্মক বক্তব্য এবং সহিংসতার প্ররোচনা রোধ করে। তবে নীতিগুলো তারা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারছে না।

আইএসডি-র প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ইসাবেল ফ্রান্সেস-রাইট সিএনএনকে বলেছেন, “সমস্যাটি সবসময়ই নীতি বাস্তবায়নে। বিশেষ করে সংকট এবং সংঘাতের সময়ে প্রচুর কনটেন্ট আপলোড হওয়ায় ইতোমধ্যে ভঙ্গুর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরও ভেঙে পড়ে।”

আর ইলন মাস্কের মতো ব্যক্তিত্ব এক্সে উস্কানিমূলক কনটেন্ট প্রচার করায় অন্যরাও উৎসাহিত হয় বলে মত ইসাবেলের।

ইউরোপীয় নিয়ন্ত্রকরা গত মাসে অভিযোগ করেন, এক্সে প্রচুর ভুয়া ইউজার রয়েছে, যারা বিভ্রান্তিকর এবং প্রতারণামূলক কনটেন্ট ছড়ায়।

ইলন মাস্ক নিজেকে একজন নিরঙ্কুশ বাকস্বাধীনতাবাদী বলে আখ্যায়িত করেন।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ওপর হামাসের হামলা এবং গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরই তিনি প্রকাশ্যে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের মধ্যে জনপ্রিয় একটি ইহুদিবিরোধী ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে সমর্থন করেন। তবে পরে এর জন্য তিনি ক্ষমা চান এবং তার ওই পোস্টকে সবচেয়ে বাজে পোস্ট বলে অখ্যায়িত করেন।

ইলন মাস্ক এক্সের মালিক হওয়ার পর এর কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ নীতিমালাগুলো শিথিল করেন। এ ছাড়া আগে ব্লক করা অনেক অ্যাকাউন্টও পুনরায় খুলে দেন। এসবের মধ্যে রয়েছে টমি রবিনসনের মতো অতি-ডানপন্থী ব্যক্তিত্ব। এরা শিশুদের ওপর হামলার কড়া সমালোচনা করে যুক্তরাজ্যের বিক্ষোভকে আরও উস্কে দেন।

যুক্তরাজ্য সরকার এই সপ্তাহে ‘অনলাইন অপরাধের’ বিচার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সোশাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোকে চাপ দিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েভেট কুপার সোমবার বলেন, “সামাজিক মাধ্যম শুধু ভুল তথ্য ছড়ানো নয় বরং সহিংসতায়ও ব্যাপকভাবে উস্কানি দেয়।”

তিনি বিবিসি রেডিও ফাইভ লাইভকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “এটা একটা ভয়াবহ ব্যাপার। আমরা এভাবে চালিয়ে যেতে পারি না। পুলিশের অনলাইন এবং অফলাইন অপরাধ দুটোই মোকাবেলা করা দরকার।

মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠক চলাকালে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, দাঙ্গায় জড়িতরা ব্যক্তিগতভাবে এবং অনলাইনে আইনের পূর্ণ শক্তি অনুভব করবেন। তাদেরকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হবে।

একই সভায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী পিটার কাইল বলেন, সোশাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথোপকথনে তিনি “ঘৃণামূলক মিথ্যা তথ্য এবং উসকানি বন্ধ করতে সহায়তার জন্য তাদের দায়িত্ব স্পষ্ট করেছেন।”

এক্স, ফেইসবুকের মালিক মেটা ও টিকটক এই বিষয়ে মন্তব্যের জন্য সিএনএনএর অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

তবে দাঙ্গায় সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর ভূমিকার জন্য তাদের দায়বদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে রয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়।

গত বছর গৃহীত যুক্তরাজ্যের অনলাইন নিরাপত্তা আইন সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য নতুন দায়বদ্ধতা তৈরি করেছে। এই আইনে অবৈধ কনটেন্ট সরিয়ে নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এ ছাড়া এই আইনে ‘তুচ্ছ নয় এমন ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে’ অনলাইনে মিথ্যা তথ্য পোস্ট করাকে একটি ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

কিন্তু আইনটি এখনও কার্যকর করা হয়নি। কারণ আইনটি প্রয়োগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফকম এখনও অনুশীলনের কোড এবং নির্দেশিকা নিয়ে পরামর্শ করছে।

সোমবার এক বিবৃতিতে অফকম বলেছে, অনলাইনে অবৈধ কনটেন্ট মোকাবেলা করা একটি ‘প্রধান অগ্রাধিকার’। তাদের প্রত্যাশা, নতুন আইনের অধীনে অবৈধ কনটেন্ট সম্পর্কিত নীতিমালা চলতি বছরের শেষ থেকে কার্যকর হবে।

আইনটি কার্যকর হলে অফকম সোশাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোকে তাদের বিশ্বব্যাপী আয়ের ১০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবে।

তিনি বলেন, “প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে আমাদের বিস্তৃত সম্পৃক্ততার অংশ হিসেবে, আমরা ইতোমধ্যে এই নতুন নিয়মগুলোর প্রস্তুতির জন্য তারা কী পদক্ষেপ নিচ্ছে তা বোঝার জন্য কাজ করছি।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত