চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল ১৫ লাখে উন্নীত হওয়ার আশা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, কর আদায় ব্যবস্থায় দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে সরকার অনলাইনে আয়কর আদায়ে জোর দিচ্ছে।
মঙ্গলবার অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।
রাজধানীর আগারগাঁয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান, এনবিআর সদস্য মো. মাসুদ সাদিক, সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদ ও মো. আলমগীর হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আমরা নানা ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে এবার যথা সময়েই অনলাইন রিটার্ন গ্রহণ শুরু করেছি। আমি আশা করছি, এবার অনলাইনে রিটার্ন দাখিল ১৫ লাখে উন্নীত করতে পারব। আমরা আশা করি, এবার ১৫ লাখ অতিক্রম করে যাবে।”
২০২১ সালে দেশে প্রথমবার অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের সিস্টেম চালু করার পর ২০২১-২২ করবর্ষে ৬১ হাজার ৪৯১ জন, ২০২২-২৩ কর বর্ষে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৪৮১ জন এবং ২০২৩-২৪ করবর্ষে ৫ লাখ ২৬ হাজার ৪৮৭ জন করদাতা ই-রিটার্ন দাখিল করেন। বর্তমানে দেশে প্রায় ১ কোটি ২১ লাখের বেশি করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর- টিআইএন নম্বর রয়েছে।
কর আদায় ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে অনলাইনে আয়কর আদায়কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “আমরা অনলাইন রিটার্নে বিশেষ জোর করে জোর দিচ্ছি, যাতে কর অফিসারের (আদায়কারীর) চেহারা যেন (করদাতা) না দেখে। যাতে করদাতা স্বচ্ছন্দ অনুভব করেন। আর চেহারা দেখা মানে কী জানেন তো, অনেক রকম…।”
এ সময় তিনি তার কানাডা প্রবাসকালীন সময়ের উদাহরণ টেনে বলেন, “আমি অনেক বার ট্যাক্স দিয়েছি। কিন্তু একদিনও শুনি নাই কোনও ট্যাক্স অফিসারের চেহারা দেখা যায়। কোথায় ট্যাক্স অফিসার তাও জানি না। ট্যাক্স অফিস কোথায় তাও জানে না করদাতারা।
“স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি বা অনলাইনে ট্যাক্স দিলে সরাসরি সরকারের কোষাগারে চলে যায়। মাঝখানে কোনও মিডলম্যান না থাকায় কোনও লিকেজ বা দুর্নীতি হওয়ার কোনও সুযোগ থাকে না।”
যেসব নাগরিকের করযোগ্য আয় নেই, তাদের কাছ থেকে জোর করে ট্যাক্স না নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “সবার কিন্তু ট্যাক্স দেওয়ার ক্যাপাসিটি নাই। যার আয় ট্রেশহোল্ডের নিচে, জোর করে তার কাছ থেকে যেন ট্যাক্স আদায় না করা হয়।”
এর আগে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, “ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় কয়েক বছর আগে থেকে আমরা ই-রিটার্ন দাখিল কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। এটাকে আমরা জনপ্রিয় করতে চাই।
“আমরা কাজ করছি, ভবিষ্যতে আমরা এনবিআরের সকল কার্যক্রমকেই আমরা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির আওতায় নিয়ে আসব। তখন কোম্পানির করদাতারাও অনলাইনে ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।”
তিনি বলেন, “এ বছর আমরা সোমবার বা ৯ নভেম্বর থেকে ই-রিটার্ন পদ্ধতি চালু করেছি। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আগামী অর্থবছর থেকে আমরা ১ জুলাই থেকে এই পদ্ধতি চালু করব। এ জন্য এনবিআর এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। একটি করদাতাবান্ধব কর-সংস্কৃতি চালু করা আমাদের উদ্দেশ্য।”
এর আগে এনবিআর সদস্য (কর নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, রিটার্ন দাখিল ও কর পরিপালন সহজ করতে অনলাইন রিটার্ন দাখিল সিস্টেম উন্মুক্ত করা হয়েছে। www.etaxnbr.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা সহজে নিজের রিটার্ন তৈরি করে অনলাইনে দাখিল করতে পারছেন।
তিনি বলেন, এ সিস্টেম থেকে ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কার্ড পেমেন্ট (ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে করদাতারা কর পরিশোধ করতে পারছেন। অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করলে রিটার্নের কপি, প্রাপ্তি স্বীকারপত্র, আয়কর সনদ, টিআইএন সনদ ডাউনলোড ও প্রিন্টের সুবিধা পাচ্ছেন। এছাড়া আগের বছরের দাখিলকৃত ই-রিটার্নও করদাতা ডাউনলোড ও প্রিন্ট করতে পারছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার থেকে করদাতারা কল সেন্টার সেবা পাবেন। কল সেন্টারে ০৯৬৪৩ ৭১ ৭১ ৭১ নম্বরে কল করে করদাতারা রিটার্ন দাখিল সংক্রান্ত প্রশ্নের তাৎক্ষণিক সমাধান পাবেন।