অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হওয়া মানেই অ্যাশেজের উত্তাপ। এর ছায়া থাকল বিশ্বকাপেও। ব্রিজটাউনের সেই লড়াইয়ে ‘অ্যাশেজ’ জিতল অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ডকে তারা হারাল ৩৬ রানে। রান খরার বিশ্বকাপে শুরুতে ব্যাট করা অস্ট্রেলিয়া পায় ৭ উইকেটে ২০১ রানের পুঁজি। জবাবে ইংল্যান্ড থামে ৬ উইকেটে ১৬৫ রানে।
স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের প্রথম ম্যাচ ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। অস্ট্রেলিয়া প্রথম ম্যাচে উড়িয়ে দেয় ওমানকে। আজকের হারে ইংল্যান্ডের জন্য জটিল হয়ে পড়ল সুপার এইটের অঙ্ক। আর অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় রাউন্ডের পথে এগিয়ে গেল অনেকটা।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সবশেষ ৮টি টি-টোয়েন্টিতে জস বাটলারের ইনিংসগুলো ৪৬, ৬১, ৪৪, ৭৭*, ৭১*, ৬৮, ১৭, ৬৫*। আজও ফিল সল্টের সঙ্গে বাটলার ওপেনিংয়ে গড়েন ৭৩ রানের জুটি। ২৮ বলে ৪২ করে অ্যাডাম জাম্পার শিকার তিনি। জাম্পা ফেরান ২৩ বলে ৩৭ করা ফিল সল্টকেও।
দুই ওপেনার দ্রুত আউট হওয়ার পর মিডলঅর্ডার আর চাপ সামলাতে পারেনি। উইল জ্যাকস ১০ রান, জনি বেয়ারস্টো ৭ আর মঈন আলী ফিরে যান ২৫ রানে। শেষ দিকে হ্যারি ব্রুক (২০*) ও লিয়াম লিভিংস্টোন (১৫) পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়েছে শুধু।
রান খরার এই বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার ৩.৪ ওভারেই করেন ফিফটি। পিচে যে কোনও জুজু নেই বোঝা যায় তাতেই। পাওয়ার প্লে’তে অস্ট্রেলিয়া ২ উইকেট হারিয়ে তোলে ৭৪ রান, যা তাদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেরা। আগের সেরা ছিল ২০২১ বিশ্বকাপে দুবাইয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২ উইকেটে ৬৭।
২ উইকেটে ৭৪ শুধু অস্ট্রেলিয়ার নয়, পাওয়ার প্লেতে এবারের বিশ্বকাপেরই সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড। ঝড়ো শুরু করা ডেভিড ওয়ার্নার ১৬ বলে ২ বাউন্ডারি ৪ ছক্কায় ৩৯ করে বোল্ড হন মঈন আলীর বলে। ১৮ বলে ২ বাউন্ডারি ৩ ছক্কায় ৩৪ করা ট্রাভিস হেডকে বোল্ড করেন জোফরা আর্চার।
১০ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল ২ উইকেটে ১০২। দুই ওপেনারের দেখানো পথে অধিনায়ক মিচেল মার্শ খেলেন ২৫ বলে ৩৫ রানের ইনিংস। অফ ফর্ম কাটিয়ে রানে ফিরলেও ম্যাচের গতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারেননি গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ২৫ বলে ২৮ করে আদিল রশিদের বলে ফিল সল্টকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন তিনি।
ওমানের বিপক্ষে ৩৬ বলে ৬৭* করা মার্কাস স্টয়নিস শেষ দিকে ঝড় তোলেন আরও একবার। খেলেন ১৭ বলে ৩০ রানের ইনিংস। তাতেই অস্ট্রেলিয়া পায় ৭ উইকেটে ২০১ রানের পুঁজি। এবারের বিশ্বকাপে ২০০ ছাড়ানো প্রথম ইনিংস এটাই।
স্লো ওভার রেটের জন্য ফিল্ডিং পেনাল্টি হয় ইংল্যান্ডের। শেষ ওভারে বৃত্তের মধ্যে বাড়তি একজন ফিল্ডার নিয়ে খেলতে হয় তাদের। রান উৎসবের ইনিংসে আর্চার ৪ ওভারে মাত্র ২৮ রানে নেন ১ উইকেট। ক্রিস জর্ডান ৪ ওভারে ৪৪ রানে নেন ২ উইকেট।
ওমানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে পানি টেনেছিলেন টেস্ট ও ওয়ানডের অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড হওয়ায় নাথান এলিসের বদলে আজ খেলানো হয় কামিন্সকে। ৪ ওভারে ২৩ রানে ২ উইকেট নেন তিনি। অ্যাডাম জাম্পা ২৮ রানে ২টি ও জস হ্যাজেলউড ২৮ রানে নেন ১ উইকেট।
টার্নিং পয়েন্ট
অস্ট্রেলিয়া পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে করেছিল ২ উইকেটে ৭৪ রান। আর ইংল্যান্ড প্রথম ৭ ওভারে বিনা উইকেটে ৭১। দুই ওপেনার বিধ্বংসী ছন্দে থাকায় ২০১ রান তাড়া করার পথে ভালোভাবেই ছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু এরপর ২৩ বলের ব্যবধানে মাত্র ২৩ রানে ফিল সল্ট, জস বাটলার ও উইল জ্যাকসকে হারিয়ে ফেলে তারা। দ্রুততম সময়ে ৩ উইকেট হারানোয় মিডলঅর্ডার আর চাপটা নিতে পারেনি।
সেরা পারফর্মার
রান উৎসবের ম্যাচে আলাদা করে নজর কেড়েছেন ব্যাটাররা। ২৪৩.৭৫ স্ট্রাইকে রেটে ডেভিড ওয়ার্নার করেছেন ২২ বলে ৩৯। ট্রাভিস হেড ১৮৮.৮৮ স্ট্রাইক রেটে করেন ৩৪। তবে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। অষ্টম ওভারে ৭৩ রানের ওপেনিং জুটি তিনি ভাঙেন ফিল সল্টকে বোল্ড করে। পরের ওভারে প্যাট কামিন্সের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান জস বাটলারকেও। এরপরই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ আসে অস্ট্রেলিয়ার হাতে।
দুই রেকর্ড
কোনও ফিফটি ছাড়াই ২০১ রানের পুঁজি পায় অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপে কোনও ফিফটি ছাড়া এটাই কোনও দলের সবচেয়ে বেশি রানের স্কোর। আগের সেরা ছিল ২০০৭ বিশ্বকাপে ডারবানে ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ৬ উইকেটে ২০০।
পাওয়ার প্লেতে অস্ট্রেলিয়া করেছিল ২ উইকেটে ৭৪। বিশ্বকাপে পাওয়ার প্লেতে এটা তাদের সেরা। আগের সেরা ছিল ২০২১ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২ উইকেটে ৬৭।