ম্যাচ শেষে গ্যালারির সামনে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে হাততালি দিচ্ছিলেন ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেট। ইংলিশ ফুটবলাররা একটু দূরে দাঁড়ানো তখন। ওই সময় গ্যালারি থেকে বৃষ্টির মতো ছুটে এলো খালি বোতল। আর কেউ নন, ইংল্যান্ডের সমর্থকেরাই বোতল ছুড়ে মেরেছেন সাউথগেটের দিকে!
কারণ একটাই- ইংল্যান্ডের বাজে পারফরম্যান্স। যাদের ঘিরে ইউরো জয়ের স্বপ্ন, সেই দলটিই কিনা স্লোভেনিয়ার সঙ্গে গোল করতে পারেনি। তারকাখচিত দল নিয়ে গোলশূন্য ড্র করেছে। এরপরও ‘সি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে ইংল্যান্ড।
পারফরম্যান্স যাই হোক, ইংলিশরা তবু গ্রুপসেরা হতে পেরেছে। ফ্রান্স তো তাও পারেনি। পোল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে ‘ডি’ গ্রুপের রানার্স-আপ হয়ে নকআউট পর্বে পা রেখেছে ফরাসিরা। তাদের ড্রয়ের সুযোগ কাজে লাগিয়ে চমক দেখিয়েছে অস্ট্রিয়া। নেদারল্যান্ডসকে ৩-২ গোলে হারিয়ে ‘ডি’ গ্রুপের সেরা হয়ে শেষ ষোলোতে ‘ডাস টিম’।
ইংল্যান্ডের হতাশা
ইংল্যান্ডের শিরোপা জয়ের স্বপ্ন বরাবরই দেখেন দেশটির সমর্থকেরা। তবে এবার প্রত্যাশা আরও বেশি। ক্লাব ফুটবলে চমৎকার মৌসুম কাটিয়ে ইউরোর লড়াইয়ে নেমেছেন দলটির খেলোয়াড়রা। জুড বেলিংহাম-হ্যারি কেইনদের ঘিরে উচ্চাশা থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু গ্রুপ পর্বের লড়াইয়ে শ্রেষ্ঠত্ব জয়ের চিহ্নমাত্র নেই।
ডেনমার্কের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্রয়ের পর স্লোভেনিয়ার সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছে গোলশূন্য ড্রয়ে। প্রথম ম্যাচে সার্বিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়টাই তাদের বানিয়েছে ‘সি’ গ্রুপের সেরা। ৩ ম্যাচে তাদের ৫ পয়েন্ট।
স্লোভেনিয়ার সঙ্গে তেমন ভালো কোনও সুযোগ তৈরি করতে পারেনি ইংল্যান্ড। হ্যারি কেইন ও ফিল ফডেন যে সুযোগগুলো তৈরি করেছেন, তা প্রতিহত করতে গোলকিপার ইয়ান ওবলাকের কোনও সমস্যাই হয়নি। উল্লেখযোগ্য বলতে প্রথমার্ধে বুকায়ো সাকার গোল, যেটি অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায়। বল দখল কিংবা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বেশিরভাগ সময় ইংল্যান্ডের কাছেই ছিল, তবে গোলমুখে শট নিতে পেরেছে মাত্র চারটি।
এই গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় হয়ে শেষ ষোলোতে পৌঁছে গেছে ডেনমার্ক। সার্বিয়ার সঙ্গে ডেনিশরাও করেছে গোলশূন্য ড্র। ডেনমার্ক গ্রুপের তিন খেলাতেই ড্র করে পেয়েছে ৩ পয়েন্ট। তাদের সমান পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় সেরা দল হিসেবে নকআউট নিশ্চিত করেছে স্লোভেনিয়া।
একযুগ পর ফ্রান্সের এই অবস্থা
এদিকে আগের ম্যাচে ফ্রান্সও ড্র করেছে। পয়েন্ট ভাগাভাগি করে কপালও পুড়েছে তাদের। ১২ বছর পর বড় কোনও টুর্নামেন্টে গ্রুপসেরা হতে পারল না ফরাসিরা। কোচ দিদিয়ের দেশমের আমলে এই দৃশ্য কখনও দেখতে হয়নি। অথচর ৫৬ মিনিটে কিলিয়ান এমবাপ্পের পেনাল্টি গোলে গ্রুপসেরা হওয়া সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিল তাদের।
কারণ একই সময়ে হওয়া নেদারল্যান্ডস-অস্ট্রিয়া ম্যাচের ফল যাই হোক, ফ্রান্স জিতলে সেটি কোনও প্রভাব ফেলতো না। কিন্তু ৭৯ মিনিটে রবার্ত লেভানদোভস্কির পেনাল্টি গোল হিসাব পাল্টে দেয়। ম্যাচ শেষ হয় ১-১ গোলের ড্রতে।
ওদিকে রোমাঞ্চকর ম্যাচে ডাচদের ৩-২ গোলে হারিয়ে শীর্ষে বসে যায় অস্ট্রিয়া। ডনিয়েল মালেনের আত্মঘাতী গোলে অস্ট্রিয়া এগিয়ে যায় ষষ্ঠ মিনিটে। ৪৭ মিনিটে কোডি গাকপোর লক্ষ্যভেদে সমতায় ফেরে ডাচরা। কিন্তু ৫৯ মিনিটে অস্ট্রিয়া আবার লিড নেয় রোমানো শিমিড জাল খুঁজে নিলে।
উত্তেজনাকর ম্যাচ ৭৫ মিনিটে আরও জমে যায় মেমফিস ডিপাইয়ের লক্ষ্যভেদে নেদারল্যান্ডস স্কোরলাইন ২-২ করলে। এরপর ৮০ মিনিটে মার্সেল সাবিৎজারের গোলে দুর্দান্ত জয়ে ‘ডি’ গ্রুপের শীর্ষস্থান নিশ্চিত করে অস্ট্রিয়া।
৩ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট অস্ট্রিয়ার। সমান ম্যাচে ফ্রান্সের পয়েন্ট ৫। ১ পয়েন্ট কম নিয়ে তৃতীয় স্থানে থাকা নেদারল্যান্ডসও শেষ ষোলোর টিকিট পেয়েছে তৃতীয় সেরা দল হিসেবে।