Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

রাশিয়া-চীন ছাড়া সব দেশেই রপ্তানি বেড়েছে

বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির কেন্দ্রবিন্দু চট্টগ্রাম বন্দর।
বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির কেন্দ্রবিন্দু চট্টগ্রাম বন্দর।
[publishpress_authors_box]

আর ক’দিন বাদেই শেষ হবে ২০২৪-২৫ অর্থ বছর। এই আর্থিক বছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) বাংলাদেশ ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডসে ২১৭ কোটি ৭২ লাখ (২.১৮ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে।

এটি মোট রপ্তানির ৫ শতাংশ হলেও এই অঙ্ক গত অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশের পণ্যের শীর্ষ গন্তব্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ইউরোপের এই দেশে।

শুধু নেদারল্যান্ডস নয়, রাশিয়া ও চীন ছাড়া অন্য সব বাজারেই গত ১১ মাসে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি চোখে পড়ার মতো। তার মধ্যে সাত বাজারে রপ্তানি বেড়েছে দুই অঙ্কের (১০ শতাংশ) বেশি।

এ কারণেই রাজনৈতিক অস্থিরতা, ট্রাম্প শুল্কের ধাক্কা ও নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেও পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।

তবে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধে ডামাডোলের মধ্যে আগামী দিনগুলোতে কী হবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকরা। তারা বলেছেন, একটার পর একটা ধাক্কা লেগেই আছে। যে ধাক্কার প্রভাব ছোট-বড় সব দেশেই লাগছে। এর মধ্যে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা খুবই কঠিন হবে।

রপ্তানির চিত্র

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পণ্য রপ্তানি থেকে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের ১১ মাসেই (জুলাই-মে) গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, জুলাই-জুন) চেয়েও বেশি আয় হয়েছে।

গত অর্থ বছরে ৪ হাজার ৪৪৬ কোটি ৯৭ লাখ (৪৪.৪৭ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছিল। বিদায়ী অর্থ বছরের ১১ মাসে হয়েছে ৪ হাজার ৪৯৪ কোটি ৬০ লাখ (৪৪.৯৫ বিলিয়ন) ডলার। ১১ মাসের হিসাবে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১০ শতাংশ।

বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের প্রধান উৎস হচ্ছে রপ্তানি আয়। এই সূচকের ওপর ভর করে বেশ কিছুদিন পর রিজার্ভ ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরে এসেছে।

একক দেশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার। বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই-মে সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির এই দেশটিতে ৮১০ কোটি (৮.১০ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা মোট রপ্তানি আয়ের ১৮ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।

এই ১১ মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় বেড়েছে ১৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে জুলাই-মে সময়ে ৬৯৫ কোটি ৪২ লাখ (৬.৯৫ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল এই বাজারে।

বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম বড় বাজার জার্মানি। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই-মে সময়ে ইউরোপের এই দেশটিতে ৪৮৯ কোটি ৩৫ লাখ (৪.৮৯ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা মোট রপ্তানি আয়ের ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

১১ মাসে গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় বেড়েছে ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে জুলাই-মে সময়ে এই বাজারে ৪৪৩ কোটি ৭৯ লাখ (৪.৪৩ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।

রপ্তানি অঙ্কের হিসাবে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তৃতীয় বৃহত্তম বড় বাজার যুক্তরাজ্য। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই-মে সময়ে এই দেশে ৪২৯ কোটি (৪.২৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

১১ মাসে গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় বেড়েছে ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে জুলাই-মে সময়ে এই বাজারে ৪১৪ কোটি ৭৩ লাখ (৪.১৪ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।

বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের আরেক বড় বাজার স্পেন। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই-মে সময়ে এই বাজারে ৩৩০ কোটি ৯০ লাখ (৩.৩১ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

১১ মাসে গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় বেড়েছে ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে জুলাই-মে সময়ে এই বাজারে ৩২০ কোটি ৬৬ লাখ (৩.২০ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।

বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের আরেক বড় বাজার ফ্রান্স। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই-মে সময়ে এই বাজারে ২২৫ কোটি ২০ লাখ (২.২৫ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৫ শতাংশ।

১১ মাসে গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় বেড়েছে ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে জুলাই-মে সময়ে এই বাজারে ২০৪ কোটি ৭৩ লাখ (২.০৪ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।

বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই-মে সময়ে ইতালিতে রপ্তানি বেড়েছে ৬ দশমিক ২২ শতাংশ; রপ্তানি হয়েছে ১৫৪ কোটি ৭৬ লাখ (১.৫৪ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

কানাডায় রপ্তানি বেড়েছে ১৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ; রপ্তানি হয়েছে ১৩৪ কোটি ৭৬ লাখ (১.৩৫ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৩ শতাংশ।

২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই-মে সময়ে পোল্যান্ডে ১৬৭ কোটি ৪৫ লাখ (১.৬৭ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

এই ১১ মাসে গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

বিদায়ী অর্থ বছরের দ্বিতীয় মাস আগস্ট থেকেই ভারতের সঙ্গে কূটনতিক সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে বাংলাদেশের। তবে ভারতে পণ্য রপ্তানি বেড়েই চলছে।

এই ১১ মাসে পাশের দেশটিতে রপ্তানি বেড়েছে ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ; রপ্তানি হয়েছে ১৬৬ কোটি ৪৩ লাখ (১.৬৬ বিলিয়ন) ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ।

বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের উল্লেখযোগ্য গন্তব্যস্থল হলো জাপান। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই-মে সময়ে এই দেশটিতে ১৩২ কোটি ৮০ লাখ (১.৩২ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা মোট রপ্তানি আয়ের ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এই ১১ মাসে গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি বেড়েছে ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

বিদায়ী অর্থ বছরের জুলাই-মে সময়ে অষ্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি বেড়েছে ২ দশমিক ৬২ শতাংশ; রপ্তানি হয়েছে ৮৪ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য, যা মোট রপ্তানির প্রায় ২ শতাংশ। এই ১১ মাসে বেলজিয়ামে ৬৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৪১ শতাংশ।

তুরস্কে রপ্তানি বেড়েছে ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ; রপ্তানি হয়েছে ৬০ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের পণ্য।

অন্যদিকে চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে। চীন থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করলেও এই বাজারে রপ্তানির অঙ্ক খুবই কম।

বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের ১১ মাসে অর্থাৎ জুলাই-মে সময়ে চীনে ৬৪ কোটি ১৪ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা গত অর্থ বছরের চেয়ে ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ কম।

চীন থেকে বাংলাদেশের আমদানি প্রতিবছরই বাড়ছে। সেই তুলনায় রপ্তানি বাড়ছে না। ফলে বাণিজ্যঘাটতি বেড়েই চলেছে। গত এক দশকে বাণিজ্যঘাটতি তিন গুণের বেশি বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থ বছরে চীন থেকে ৬৩২ কোটি (৬.৩২ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি হয়। বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে গেছে মাত্র ৪৬ কোটি ডলার পণ্য। বাণিজ্যঘাটতি ছিল ৫৮৫ কোটি (৫.৮৫ বিলিয়ন) ডলার।

২০২২-২৩ অর্থ বছরে চীন থেকে ১ হাজার ৯৮১ কোটি (১৯.৮১ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে, রপ্তানি ছিল ৬৮ কোটি ডলার। সেই হিসাবে, বাণিজ্যঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯০০ কোটি (১৯ বিলিয়ন) ডলারের বেশি।

রাশিয়ায় রপ্তানিতে আশার আলো দেখা দিয়েছিল। দেশটিতে রপ্তানি আস্তে আস্তে বাড়ছিল। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বাংলাদেশ রাশিয়ায় ৪৮ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি করে।

২০২০-২১ অর্থ বছরে ৩৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেড়ে সেই রপ্তানি ৬৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলারে গিয়ে ওঠে, যা ছিল এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।

পরের অর্থ বছরে (২০২১-২২) রাশিয়ায় রপ্তানি ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারে গিয়ে পৌঁছবে বলে আশা করেছিলেন রপ্তানিকারকরা।

কিন্তু এর পরেই আসে ধাক্কা। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করে; শুরু হয় যুদ্ধ। সেই যুদ্ধ এখনও চলছে; যার মাশুল দিচ্ছে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব।

যুদ্ধের মধ্যে ২০২১-২২ অর্থ বছরে রাশিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি কমে ৬৩ কোটি ৮৩ লাখ ডলারে নেমে আসে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা আরও কমে ৪৬ কোটি ডলারে নেমে আসে।

গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে রপ্তানি অঙ্ক ছিল ৩৯ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।

সবশেষ বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের ১১ মাসে অর্থাৎ জুলাই-মে  সময়ে ৩৩ কোটি ৯৩ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে রাশিয়ায়, যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ কম।

বাংলাদেশের প্রধান প্রধান পণ্যভিত্তিক রপ্তানি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে জুলাই-মে সময়ে মোট ৮টি খাত—ওভেন পোশাক, নিটওয়্যার (নিট পোশাক), হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্য, কৃষিজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, এবং প্রকৌশল দ্রব্যাদি থেকে আয় হয়েছে ৪ হাজার ১০৬ কোটি ৪২ লাখ (৪১.০৪ বিলিয়ন) ডলার। যা মোট রপ্তানি আয়ের ৯১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

এর মধ্যে তৈরি পোশাক (ওভেন ও নিট) থেকে এসেছে ৩৬ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। যা মোট আয়ের ৮১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ২০ শতাংশ।

কী হবে আগামীতে

যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ সব দেশেই বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য হচ্ছে তৈরি পোশাক। তবে স্বস্তি নেই এই খাতে; একটার পর একটা ধাক্কা লেগেই আছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত বছরের জুলাই-আগস্টে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি ব্যাহত হয়। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়।

এর মধ্যে গাজীপুর ও ঢাকার সাভারে শ্রমিক অসন্তোষের বেশ কয়েক দিন অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ থাকে; উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান এ খাতের কর্মকাণ্ড।

এরই মধ্যে আসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কের ধাক্কা। এখন ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধ।

সব মিলিয়ে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের ভবিষৎ কী—এ প্রশ্নের উত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সানেমের (সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, অনেক ঝামেলার মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরটা ভালোই গেলো। অস্থিরতার মধ্যে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অবশ্যই ভালো প্রবৃদ্ধি।

“শুধু তাই নয়, ছোট-বড় সব দেশেই রপ্তানি বেড়েছে; ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে সামনে কী হবে—সেটাই উদ্বেগের বিষয়।”

তিনি বলেন, “ট্রাম্প শুল্কের প্রভাব তো আছেই। শুরু হয়েছে ইসরাইল-ইরান যুদ্ধ। এই যুদ্ধের শেষ পরিণতি কী হবে—সেটাই এখন দেখার বিষয়।”

সেলিম রায়হান বলেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যদি সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয় এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের প্রাকৃতিক গ্যাস স্থাপনায় হামলা হয় কিংবা হরমুজ প্রণালী বন্ধ হয়ে যায়, তবে তার অভিঘাত বিশ্ব অর্থনীতির পাশাপাশি বাংলাদেশের ওপরও সরাসরি এবং গভীরভাবে পড়বে।

ইরান লাগোয়া হরমুজ প্রণালী দিয়ে বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ জ্বালানি পণ্য পরিবাহিত হয়।

সেলিম রায়হান বলেন, এটি যদি সাময়িক সময়ের জন্যও বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম দ্রুতগতিতে বেড়ে যেতে পারে।

“বাংলাদেশ জ্বালানির বড় অংশ আমদানি করে, বিশেষ করে এলএনজি ও পরিশোধিত তেল। তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বেড়ে যাবে, যার প্রভাব শিল্প উৎপাদন, পরিবহন, কৃষি এবং ভোক্তা পর্যায়ের ওপর এসে পড়বে। এতে দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে এবং সাধারণ জনগণের জীবিকায় চাপ সৃষ্টি হবে।”

“একই সঙ্গে হরমুজ প্রণালী বন্ধ থাকলে বিশ্বজুড়ে জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে, যার ফলে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে বিলম্ব ও ব্যয়বৃদ্ধি ঘটবে। বাংলাদেশ, যেটি রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতি হিসেবে তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর ভীষণভাবে নির্ভরশীল, সেখানে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে সময়মতো পণ্য সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটতে পারে এবং চুক্তি বাতিলের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে,” বলেন তিনি।

উদ্বিগ্ন দেশের পোশাক রপ্তানিকারকরাও। নিট পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমও।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এই সঙ্কটের মধ্যেও আমরা নিট পোশাক রপ্তানিতে ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। সব দেশেই আমাদের রপ্তানি বেড়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে—আগামী কী হবে? সেটা নিয়েই চিন্তিত আমরা সবাই।

“১০ শতাংশ ট্রাম্প শুল্কের ধাক্কা আমাদের ওপর পড়তে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি যেটা বাড়ছে, সেটা আসলে চীনের কিছু অর্ডার আমাদের এখানে চলে আসার কারণে। আমাদের সামগ্রিক অর্ডার কিন্তু কমছে। ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ চলছে; বিশ্ব পরিস্থিতি উত্তপ্ত। জানি না আগামী মাসগুলোতে কী হবে?”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত