সংস্কার কার্যক্রম এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে একথা জানান সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বুধবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে যান ইউরোপীয় এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের পরিচালক পাওলা পাম্পালোনি। এসময় বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধি প্রধান মাইকেল মিলার উপস্থিত ছিলেন।
বাসসের খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যভূক্ত ২৭টি রাষ্ট্রের সমর্থন নিশ্চিত করে পাম্পালোনি প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, “আমাদের বার্তা খুবই স্পষ্ট। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আপনাদের পাশে আছে। আমরা আপনাদের সংস্কার উদ্যোগকে সমর্থন দিতে চাই।”
পাম্পালোনি বলেন, “সংস্কারের জন্য অর্থের কোনও ঘাটতি হবে না এবং বাংলাদেশ সরকারের এই কাজ সম্পাদনের জন্য তারা প্রযুক্তিগত সহায়তাও দেবে।”
এসব প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েনের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের কথা স্মরণ করে ড. ইউনূস বলেন, তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়ে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
পাম্পালোনি বলেন, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং আর্থিক সহায়তা দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অনেক দেশের পাশে দাঁড়িয়েছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেওয়া ড. ইউনূসের বক্তব্য শুনেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “বুঝতে পেরেছি এখন বাংলাদেশে আমাদের কাজ করার মতো একজন আছেন। আপনাকে একা অনুভব করতে হবে না। আমরা সত্যিই আপনাকে সমর্থন দিতে আগ্রহী।”
বাংলাদেশকে আরও বিনিয়োগের সুযোগ তৈরির আহ্বান জানিয়ে ইইউ কর্মকর্তারা বলেন, এতে করে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং বাণিজ্য বাড়বে।
রাষ্ট্রদূত মিলার প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, ব্যবসায় সুযোগ খুঁজে বের করার লক্ষ্যে আগামী জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে শ্রম অধিকার সংস্কারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করেন এবং বলেন, এর ফলে বিনিয়োগের পথ আরও প্রশস্ত হবে।
তিনি ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, “আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে শ্রম অধিকারের বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখব। এখানে কোনও লুকোচুরি হবে না। আমরা আর লুকোচুরির খেলা খেলতে চাই না।”
ইইউ কর্মকর্তারা বিভিন্ন খাতে সংস্কারের ক্ষেত্রে অধ্যাপক ইউনুসের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে নেপাল এবং ভারতের সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে অঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ বাড়ানোর আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, নেপালে বিশাল জলবিদ্যুৎ রয়েছে যা অপচয় হচ্ছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু সহায়তা পেলে নেপাল, বাংলাদেশ এবং ভারত সবাই এতে লাভবান হতে পারে।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের যুবসমাজের প্রতি মনোযোগ দিতে ইইউকে আহ্বান জানান।
দক্ষিণ এশীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের মেয়েদের সাম্প্রতিক অর্জনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “তারা খেলতে গেছে এবং জয় করেছে, একবার নয়, বরং দুবার।”
তিনি একটি ইউরোপীয় ফুটবল দলকে বাংলাদেশে পাঠানোর অনুরোধ করেন, যা বাংলাদেশের মেয়েদের অনুপ্রাণিত করবে।