Beta
মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫

৩৮ বছরেও ডেভিস কাপে উন্নতি নেই বাংলাদেশের

বাহরাইনে এ বছরের ডেভিস কাপে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ দল। ছবি: সংগৃহীত
বাহরাইনে এ বছরের ডেভিস কাপে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ দল। ছবি: সংগৃহীত
[publishpress_authors_box]

ডেভিস কাপ খেলে সোমবার বাহরাইন থেকে বাংলাদেশে ফিরেছেন হানিফ মুন্না। ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ মোহাম্মদ হায়দারের রোষের শিকার হয়ে দল থেকে বাদ পড়লেও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে শেষ মুহূর্তে সুযোগ পান তিনি। বাহরাইনে ২০-২৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ডেভিস কাপে প্রথমবার অংশ নেওয়ার পর হানিফের আফসোস, “আরেকটু ভালো প্রস্তুতি নিয়ে বাহরাইন গেলে সহজেই পরের রাউন্ডে উঠতে পারতাম।”

পরের রাউন্ড মানে ডেভিস কাপের এশিয়া-ওশেনিয়া অঞ্চলের গ্রুপ চারে উঠতে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু এই অঞ্চলের গ্রুপ পাঁচে খেলা বাংলাদেশ ১৫ দলের মধ্যে হয়েছে সপ্তম।

ডেভিস কাপ কি

বাংলাদেশের এমন পারফরম্যান্সের আলোচনার আগে জেনে নেওয়া যাক ডেভিস কাপ কোন ধরনের টুর্নামেন্ট। আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশন (আইটিএফ) আয়োজিত পুরুষদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের দলগত প্রতিযোগিতা হচ্ছে ডেভিস কাপ। ১৯০০ সালে যেটি গ্রেট ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি চ্যালেঞ্জ দিয়ে শুরু হয়েছিল। এরপর ধীরে ধীরে এর কলেবর বাড়তে বাড়তে হয়ে উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দলগত টেনিস প্রতিযোগিতা। যার পোশাকি নাম ‘টেনিসের বিশ্বকাপ’। বর্তমানে বিশ্বের ১৫০টি দেশ প্রতি বছর অংশ নিচ্ছে ডেভিস কাপে। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশও প্রতি বছর খেলে ডেভিস কাপে।   

বাংলাদেশের অভিষেক ৩৮ বছর আগে

ডেভিস কাপে বাংলাদেশ খেলে থাকে এশিয়া-ওশেনিয়া অঞ্চলে। এতে বাংলাদেশের অভিষেক হয় ১৯৮৬ সালে। এই ৩৮ বছরের মধ্যে মাত্র ‍দুবার অংশ নেয়নি। বেশিরভাগ সময় বাংলাদেশ ডেভিস কাপের গ্রুপ তিন বা গ্রুপ চারে খেলে। ২০২২ সাল থেকে বাংলাদেশ গ্রুপ চার থেকে নেমে যায় পাঁচে। সাধারণত কোনও গ্রুপের সেরা দুটি দল পরের বছর সুযোগ পায় ওপরের ধাপে খেলার। সেই হিসেবে বাংলাদেশের পারফরমান্সে শুধুই অধোগতি। ডেভিস কাপের ইতিহাসে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য ১৯৮৯ সালে। সেবার বাংলাদেশ গ্রুপ দুয়ের সেমিফাইনালে খেলেছিল।

ঢাকা ছাড়ার আগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ দল। ছবি: সংগৃহীত

এবার যেমন করেছে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ এবার খেলেছে পুল ডি-এ। সেখানে সব মিলিয়ে খেলেছে ৪টি দেশের সঙ্গে। এর মধ্যে দুটি দেশের বিপক্ষে জিতেছে। হেরেছে দুই দেশের কাছে। পুলের ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছে বাহরাইনের কাছে। তবে ইয়েমেন ও তাজিকিস্তানকে হারিয়েছে। এরপর পঞ্চম-ষষ্ঠ স্থানের প্লে অফে গুয়ামের কাছে হেরেছে।

এক নজরে ডেভিস কাপে বাংলাদেশ

চ্যাম্পিয়ন ০
প্রথম অংশগ্রহণ১৯৮৬
কতবার অংশগ্রহণ৩৬
ম্যাচ১৪৬ (৬৭ জয়, ৭৯ হার)
ওয়ার্ল্ড গ্রুপে অংশগ্রহণ
সবচেয়ে বেশি জয়ীঅমল রায় (৫৬ জয়)
এককে সর্বোচ্চ জয়ীঅমল রায় (৩৭ জয়)
দ্বৈতে সর্বোচ্চ জয়ীরঞ্জন রাম (২১ জয়)
সেরা দ্বৈত জুটিরঞ্জন রাম-অমল রায় (১১ জয়)
সবচেয়ে বেশি ম্যাচঅমল রায় (৬৪ ম্যাচ)
সর্বোচ্চ অংশগ্রহণঅমল রায় (১৭ বার)

কেন এই অধোগতি

পাইপলাইনে খেলোয়াড়ের অভাব, জাতীয় দল নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা না থাকা, সংগঠকদের স্বেচ্ছাচারিতা, সরকারি আমলাদের ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়াসহ নানা কারণে ডেভিস কাপে ভরাডুবি বাংলাদেশের।

নতুন খেলোয়াড় মোটেও উঠে আসছে না টেনিসে। ডেভিস কাপে বাজে ফলের জন্য এটাকে অন্যতম বড় কারণ বললেন জাতীয় দলের টেনিস খেলোয়াড় কাজী শারমিন ইসলাম মেধা , “ চতুর্থ শ্রেণীতে যখন পড়তাম তখনও যাদের ডেভিস কাপে খেলতে দেখেছি, এখনও তারাই খেলছেন। আসলে নতুন কোনও খেলোয়াড় উঠে আসছে না। ফেডারেশন কোনও খেলোয়াড় তৈরি করতে পারেনি। এমনকি বিকেএসপি থেকেও খেলোয়াড় উঠে আসছে না।”

ফেডারেশনের দুর্নীতির কারণে অনেক খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে। মেধার মতে এটাও ডেভিস কাপে বাজে ফলের জন্য দায়ী, “ডেভিস কাপে খেলাকে কেন্দ্র করে হানিফ মুন্নার সঙ্গে যেটা হয়েছে সেটা তো সবাই জানে। এমন অনেক অন্যায় অবিচার খেলোয়াড়দের সঙ্গে প্রতিনিয়ত হয়ে আসছে। যখন কোনও খেলোয়াড় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে আঘাত পেয়ে, যখন প্রতিবাদ করেও কিছু করতে পারে না তখন তারা টেনিস ছেড়ে দূরে চলে যায়। অন্য কোনও পেশায় ক্যারিয়ার তৈরি করে।”

ডেভিস কাপের ট্রফি।

দেশের অনেক টেনিস খেলোয়াড় বর্তমানে চীনে কোচিং পেশায় যুক্ত হয়েছে। সেটার পেছনেও ফেডারেশনের দুর্ব্যবহারকে দায়ী করলেন মেধা, “এখন যারা ডেভিস কাপে খেলছে এদের চেয়েও অনেক ভালো খেলোয়াড় চীনে, অস্ট্রেলিয়ায় আছে। তারা কিন্তু টেনিস নিয়েই আছে। কিন্তু কেন বাংলাদেশে নেই? কারণ বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশন তাদের ধরে রাখতে পারেনি।”

ঘরোয়া প্রতিযোগিতার অভাব, তৃণমূলে টুর্নামেন্ট আয়োজন হচ্ছে না, এসবকেও টেনিসের বাজে ফলের কারণ বলছেন তিনি।

তবে মেধা বাজে পারফরম্যান্সের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে দেখছেন সরকারি আমলাদের টেনিস ফেডারেশনের দায়িত্ব দেওয়া, “খেলা নিয়ে একজন ক্রীড়া সংগঠকের যে ভালোবাসা বা জবাবদিহিতা থাকে সেটা তো কোনও সরকারি আমলার নাও থাকতে পারে। তারা সরকারি দায়িত্বের অতিরিক্তি হিসেবেই টেনিসে এসেছেন। এবং কোনও রকমে দায়সারা গোছে ফেডারেশন পরিচালনা করেছেন। যে কারণে টেনিস নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী কোনও পরিকল্পনায় হয়নি। যার প্রভাব পড়েছে প্রতি বছরের ডেভিস কাপে।”

ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হবে কবে

এবারের ডেভিস কাপে প্লে-অফের ফাইনালে বাহরাইনকে হারিয়ে গ্রুপ চারে পৌঁছে গেছে নেপাল। অথচ বাংলাদেশকে প্রতিবার ডেভিস কাপে গিয়ে লড়তে হয়। নেপালের মতো দেশের উন্নতি দেখে আফসোস করেন হানিফ, “আমরা জাতীয় দলের ক্যাম্পে ভালো কোনও খাবার খেতে পারি না। কোনও কোচ নেই আমাদের। সুযোগ সুবিধা পাই না। মাত্র কয়েকদিনের অনুশীলনে খেলতে গেছি। ওখানে গিয়ে মনে হয়েছে প্রতিপক্ষ আমাদের চেয়ে খুব বেশি কঠিন না। অথচ নেপাল ডেভিস কাপে খেলার আগে তিন মাস ট্রেনিং করেছে দেশের বাইরে। আমাদের টেকনিক ঠিক থাকলেও শুধু ফিটনেসের কাছে পিছিয়ে গেছি।”

এবারের ডেভিস কাপে বাংলাদেশের ফল।

টেনিস বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা হলেও বাংলাদেশে অবহেলিত। রজার ফেদেরার, রাফায়েল নাদাল, নোভাক জোকোভিচরা বিশ্বের অন্যতম ক্রীড়া তারকা। কিন্তু বাংলাদেশে টেনিসের চর্চা নেই বললেই চলে। যুগ যুগ ধরে এটাই যেন স্বাভাবিক দেশের ক্রীড়াঙ্গনে। ফেডারেশন কর্মকর্তাদের সাংগঠনিক ব্যর্থতার প্রভাব নিয়মিতই পড়ছে টেনিস কোর্টে। তাইতো প্রতিবার ডেভিস কাপ খেলে ফেরার পর হানিফ মুন্নাদের দীর্ঘশ্বাস আরও দীর্ঘ হতে থাকে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত