সরকার পাঁচ নিত্যপণ্য- চাল, ভোজ্যতেল, চিনি, আলু ও ডিম আমদানিতে করছাড় দেওয়ার পরও তার প্রভাব বাজারে পড়েনি। এমন পরিস্থিতিতে পণ্যের দাম না কমার বিষয়ে ভোক্তাদের সরাসরি ব্যবসায়ীদের কাছ জানতে চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
সোমবার ১০ ডিসেম্বর ভ্যাট দিবস উপলক্ষ্যে এক সংবাদ সম্মেলনে এ পরামর্শ দেন তিনি। করছাড়ের পরও পণ্যের দাম না কমার প্রতিবাদ না করে ক্রমাগত সহ্য করতে থাকলে অনিয়ম আরও বাড়বে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবন সম্মেলন কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
এক প্রশ্নের উত্তরে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “অনেক দিন ধরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান সমন্বয় না করার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে নানা কারণে হঠাৎ করে ডলারের বিপরীতে টাকা প্রায় ৫০ শতাংশ মান হারিয়েছে।
“এর ফলে বাজারে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এরপর সরকার (এনবিআর) চাল, ভোজ্যতেল, চিনি, আলু এবং ডিম আমদানির ওপর করছাড় দিয়েছে। কিন্তু বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। কেজিপ্রতি কত টাকা দাম কমবে- সেটাও আমরা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলে দিয়েছি।”
”সব দিক থেকেই সচেতনতা তৈরি হলে আমার মনে হয় আমরা একটা জায়গায় যেতে পারব”, যোগ করেন তিনি।
সরকার করছাড় দেওয়ার পরও বাজারে পণ্যের দাম না কমলে সরাসরি ব্যবসায়ীদের কাছ জানতে চাওয়ার পরামর্শ দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের যিনি ক্রেতা তিনি বাজারে গিয়ে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করবেন যে সরকার তো কেজিপ্রতি এতো টাকা দাম কমালো; তারপরও আপনি বেশি দামে বিক্রি করছেন কেন?”
তিনি বলেন, “দাম সহনীয় রাখার জন্য আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় যে সিন্ডিকেটগুলো আছে, বিভিন্ন জায়গায় যে বিভিন্ন রকমের হার্ডেলগুলো আছে ব্যবসা-বাণিজ্যে সেগুলো দূর করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে, ভোক্তা অধিকার কাজ করছে।”
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “জনগণেরও সেখানে ভয়েস রেইজ করার সময় আসছে। আমরা যদি অনিয়মগুলো ক্রমাগত সহ্য করতে থাকি, অনিয়মের পরিমাণ বাড়বে। কিন্তু কাউকে না কাউকে প্রতিবাদ করতে হবে।”
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ উন্নয়ন সহযোগীরা করছাড় দেওয়া থেকে সরে আসার যে পরামর্শ দিয়েছে সে প্রসঙ্গ টেনে আবদুর রহমান খান বলেন, “আমাদের কর অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। উন্নয়ন সহযোগীরা আমাদের নিজেদের স্বার্থেই এ অভ্যাস থেকে সরে আসার পরামর্শ দিচ্ছে।”
অর্থনৈতিক সংকটের কারণে কিছু পণ্যে করছাড় দিতে হয়েছে জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “পরিস্থিতির উন্নতি হলে তা আবার আগের জায়গায় ফিরিয়ে নেওয়া হবে।”
করছাড়ের কুফল তুলে ধরে তিনি বলেন, “সবার জন্য একই অঙ্কের কর নির্ধারণ করা উচিত। করছাড় দুর্নীতি বাড়ায়।”
এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, আগামী ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভ্যাট সপ্তাহ পালন করা হবে।
ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, “আপনাদের যতটুকু ভ্যাট, ততটুকুই দিতে হবে। বেশি দিতে হবে না।”
অনলাইনে ব্যবসায়ী পর্যায়েও ভ্যাট আদায় সহজ করা হয়েছে জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আগে অনলাইনে জমা দেওয়ার পর হার্ড কপি ভ্যাট অফিসে এসে জমা দেওয়ার বিধান ছিল। আমরা সেই ব্যবস্থাও এখন তুলে দিয়েছি।”