Beta
বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫

এই দিন দিন না, বলে আইনজীবীদের ক্ষোভের মুখে কামরুল

সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার ঢাকার আদালতে নেওয়া হয়।
সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার ঢাকার আদালতে নেওয়া হয়।
[publishpress_authors_box]

আইন প্রতিমন্ত্রী হিসাবে যে আদালতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অভিযোগ ছিল যার বিরুদ্ধে, সেই আদালতে খুনের মামলার আসামি হয়ে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বর্তমান পরিস্থিতি চিরদিনের নয় বলে স্মরণ করিয়ে দিলেন কামরুল ইসলাম।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গ্রেপ্তার এই আওয়ামী লীগ নেতা মঙ্গলবার কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলেছেন, “সব দিন তো এক রকম যায় না। এই দিন দিন না।”

তার এই কথা শুনে রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থিত আইনজীবীরা ক্ষেপে ওঠেন। জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জিয়াদুর রহমান আসামি কামরুলকে ৮ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আদেশ দেন।

ঢাকা বারের আইনজীবী, এক সময়ের পিপি কামরুল ২০০৮ সালে প্রথম ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য হওয়ার পর আওয়ামী লীগের সরকারে আইন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তখন তার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালত নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ ছিল।

পরে ২০১৪ সালের সরকারে কামরুল খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। এরপর মন্ত্রিত্ব না পেলেও ২০১৮ এবং এই বছরের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনেও এমপি হন তিনি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীতেও তার স্থান হয়।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আড়াই মাস পর সোমবার ঢাকার উত্তরা থেকে কামরুলকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশ।

ঢাকার নিউ মার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে মঙ্গলবার তাকে নেওয়া হয় ঢাকার আদালতে।

ওয়াহেদের শ্যালক আব্দুর রহমানের করা এই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, কামরুলসহ ১৩০ জনকে আসামি করা হয়।

এই হত্যামামলায় আওয়ামী লীগ সরকারের আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা ও মন্ত্রীকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) রমনা জোনাল টিমের সদস্য পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আরিপ সাবেক মন্ত্রী কামরুলকেও জিজ্ঞাসাবাদে ১০ দিনের জন্য হেফাজতে চেয়ে আবেদন করেন।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, কামরুল ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের ভোট ডাকাতির মাধ্যমে’ চার বার এমপি হন। তিনি ‘অত্যন্ত ভয়ানক’ চরিত্রের অধিকারী, যা তার আচার-আচরণ, অঙ্গভঙ্গী ও কথাবার্তার মাধ্যমে প্রকাশ পেত। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে এমন কোনও অপর্কম নেই যে করেননি। তার ভয়ে তার সংসদীয় এলাকায় মানুষ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারত না।

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই বিকালে ঢাকার নীলক্ষেত এলাকায় আব্দুল ওয়াদুদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

সেই ঘটনায় কামরুলের যোগসূত্র থাকার দাবি করে রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, “তিনি অতিগুরুত্বপূর্ণ একজন দলীয় পলিসি/ডিসিশন মেকার ছিলেন। ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সহচর বলে দেশে-বিদেশে বিশেষভাবে জনশ্রুতি আছে। তাকে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটিত হবে।”

সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলামকে সোমবার ঢাকার উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলামকে সোমবার ঢাকার উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কামরুলের পক্ষে তার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করলে তার বিরোধিতাও করা হয় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে।

জামিন আবেদনে বলা হয়, “কামরুল ইসলাম থাকেন ঢাকার কেরানীগঞ্জে, অথচ ঘটনা দেখানো হলো নিউমার্কেট এলাকায়। এটা তো উনার এলাকার মধ্যেই পড়ে না। কীভাবে এ মামলায় তার নাম আসে? এছাড়াও আসামি একজন আইনজীবী।”

কোটা সংস্কার আন্দোলন দমনে কামরুলের ভূমিকা রয়েছে দাবি করে রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, “আসামির নির্দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার ওপর গুলি চালানো হয়।

“আসামি একজন আইনজীবী হয়েও প্রতিটি ক্ষেত্রে দূর্নীতি করেছেন। আসামি জামিন পেলে পলাতক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া বাহিরে থাকলে দেশের শান্তিশৃঙ্খলা নষ্ট করবে। এই হত্যার ঘটনার কারা কারা জড়িত, তথ্য উদঘাটনের লক্ষ্যে আসামিকে রিমান্ডে নেওয়া দরকার।”

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত কামরুল ইসলামের কিছু বলার আছে কি না, তা জানতে চান।

তখন তিনি বলেন, “আমার এলাকা কেরানীগঞ্জ। নিউমার্কেট এলাকা আমার অধীনে না। ওই এলাকার এমপি আমি নিজেও না। এ মামলায় আমাকে ৫৬ নাম্বার আসামি করা হয়েছে। আমার নামটি হয়ত শেষ মুহূর্তে ভুলে এজাহারে লিখে দেওয়া হয়েছে।”

তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, “উনি তো সব হত্যাকাণ্ডে জড়িত। শেখ হাসিনার সঙ্গে মিটিং এ থেকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন।”

এর প্রতিক্রিয়ায় কামরুল ‘এই দিন দিন না’ কথাটি বলেন।

এদিকে এদিন বাবাকে দেখতে আদালতে আসেন কামরুল ইসলামের ছেলে ডা. তানজির ইসলাম অদিত। এজলাসের ভেতরে অনেকটা বিচারকের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি।

তাকে সেখানে দেখে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তখন তিনি সেখান থেকে বের হয়ে যান। শুনানি চলাকালে কামরুলপুত্রের বিচারকের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা যা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আইনজীবীরা। 

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত