আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ঢালাও মামলা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, যিনি নিজেও একজন আইনজীবী।
মঙ্গলবার ঢাকার আদালতে তিনি বলেছেন, তার বিরুদ্ধে মামলায় আসামিদের নাম উল্লেখ ছাড়া কার কী ভূমিকা, তার কিছুই নেই।
মামলার বাদীও আসামিদের চেনেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “(বাদী) বলতেও পারবে না আসামি কারা। আমাদের মতো আইনজীবীরাই আসামিদের নাম লিখে দিয়েছে।”
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুজন ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে পঞ্চগড়-২ আসন থেকে চার বার সংসদ সদস্য হন। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রেলপথমন্ত্রী ছিলেন তিনি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হচ্ছে।
আন্দোলনের মধ্যে পুলিশের গুলিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো নিয়ে এসব মামলা হচ্ছে। এমন একটি মামলায় সুজনও আসামি।
যাত্রাবাড়ীতে গত ৫ আগস্ট ইমরান হাসান নামের এক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তার মা কোহিনুর আক্তার গত ১ সেপ্টেম্বর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক রেলমন্ত্রী সুজনসহ ২৯৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যামামলা করেন।
সেই ঘটনায় সুজনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিন হেফাজতে রাখার আবেদন নিয়ে মঙ্গলবার ঢাকার আদালতে যান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাহ আলম মিয়া।
সুজনকে একদিন আগেই ঢাকার শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
শুনানির সময় আদালতের অনুমতি নিয়ে সুজন বলেন, “হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। অনেকটা জোর করে রিলিজ দিয়ে নিয়ে আসছে।”
বিচারকের কাছে নিজের চিকিৎসার বন্দোবস্তের আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, “বিচার যা হওয়ার হবে, চিকিৎসার সুযোগ করে দেবেন “
সুজন বলেন, “আমার এলাকা পঞ্চগড়ে আমার বিরুদ্ধে কোনও মামলা নেই। সারাজীবনে এ মামলা ছাড়া আর কোনও মামলা নেই।”
মামলার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, “৩ আগস্ট পর্যন্ত আমি এলাকায় থেকে বাচ্চাদের সাইকেল বিতরণ করি। ৪ তারিখ সন্ধ্যায় সৈয়দপুর এয়ারপোর্ট দিয়ে ঢাকায় আসি।”
শুনানিতে সুজনের পক্ষে ছিলেন তার ভাগ্নে আইনজীবী ফজলুল হক বাবু, তিনি রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন।
তিনি বলেন, “তিনি রাজনৈতিক পরিবারের মানুষ। রাজনীতি করেছেন মানুষের সেবার জন্য, দুর্নীতির জন্য না। তার বিরুদ্ধে দুদকের কোনও অভিযোগ নাই।”
এই মামলায় সুজনের নাম আসামির তালিকায় ৬ নম্বরে রয়েছে জানিয়ে বাবু বলেন, “ইতিমধ্যে তিনজন আগাম জামিন পেয়েছেন। তার বিষয়ে শুনানির আবেদন করেছি। শুনানির জন্য আজকে দিন নির্ধারিত ছিল। এর মাঝে তাকে হাসপাতাল থেকে জোর করে রিলিজ করিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
মামলার এজাহারের অস্পষ্টতা তুলে ধরে এই আইনজীবী বলেন, “বোঝাই যাচ্ছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মামলা। হয়ত তিনি তখন বাসায় ছিলেন, এমনকি ঘুমিয়েও থাকতে পারেন।
“বয়স্ক মানুষ, অসুস্থ। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। রিমান্ডে নেওয়ার কোনও গ্রাউন্ডও নেই।”
অন্যদিকে বিএনপি সমর্থক আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী আসামি সুজনকে রিমান্ডে পাঠানোর পক্ষে যুক্তি দেখান।
উভয় পক্ষে শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম শাহীন রেজা তিন দিন রিমান্ডের আদেশ দেন।