Beta
শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৪

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কর্মবিরতির মাঝে ব্যাখ্যা এল ‘প্রত্যয়’ নিয়ে

SS-universal-pension-scheme-bd-210324
Picture of বিশেষ প্রতিনিধি, সকাল সন্ধ্যা

বিশেষ প্রতিনিধি, সকাল সন্ধ্যা

[publishpress_authors_box]

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিলের দাবিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান সর্বাত্মক কর্মবিরতির মধ্যেই যাত্রা শুরু করেছে স্কিমটি।

পাশাপাশি এই স্কিমের কিছু বিষয় স্পষ্টও করেছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এই আন্দোলনকে অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১ জুলাই অর্থাৎ রবিবার থেকেই যাত্রা শুরু করেছে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার ‘প্রত্যয়’ স্কিম।

সেখানে বলা হয়, “সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে একটি টেকসই পেনশন ব্যবস্থায় আনার লক্ষ্যে অন্যদের পাশাপাশি স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত ও তার অঙ্গ সংগঠনের প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রত্যয় স্কিম প্রবর্তন করা হয়েছে।”

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ এই স্কিমের কিছু বিষয় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্পষ্ট করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, এতদিন দেশে আনফান্ডেট ডিফাইন্ড বেনিফিট সিস্টেমের পেনশন ব্যবস্থা চালু ছিল। যা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই ব্যবস্থা নয়। সে কারণেই নতুন করে ফান্ডেড ডিফাইন্ড কনট্রিবিউটরি সিস্টেমের পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এতে সিস্টেমে প্রাপ্ত কন্ট্রিবিউশন ও বিনিয়োগ মুনাফার ভিত্তিতে একটি ফান্ড গঠিত হবে। তাই এটি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই, ভারতের মতো অনেক দেশেই এ ধরনের পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে।

আন্দোলনে অবসরে যাওয়ার বয়স, প্রাপ্য ছুটির অর্থ নিয়ে সমস্যাগুলোর কথা উঠে এসেছে সেগুলোরও সমাধানের করার কথা বলা হয়েছে।

দেশে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪০৩টি। যার প্রায় ৯০টিতে পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে। অবশিষ্ট প্রতিষ্ঠান কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ডের (সিপিএফ) আওতাধীন।

সিপিএফ সুবিধার আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা এককালীন আনুতোষিক পান, পেনশন হিসেবে কোনও অর্থ পান না।

প্রত্যয় স্কিম নিয়ে যা বলছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ

এ বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত যেসব শিক্ষক/কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরিরত আছেন, তারা আগের মতো সব পেনশন সুবিধা পাবেন।

দেশে বর্তমানে সরকারি পেনশনে আনফান্ডেট ডিফাইন্ড বেনিফিট সিস্টেমের পেনশন ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। যেখানে পেনশনের যাবতীয় ব্যয় প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেট বরাদ্দ থেকে মেটানো হয়।

তবে ১ জুলাই থেকে চালু হয়েছে ফান্ডেড ডিফাইন্ড কনট্রিবিউটরি সিস্টেমের পেনশন ব্যবস্থা। যেখানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বেতন থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে মাসিক জমার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

প্রত্যয় স্কিমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর পাওয়া মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা, কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বেতন থেকে কাটবে। এরপর সমপরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা দেবে। এই  দুই উৎস থেকে পাওয়া অর্থ ওই কর্মকর্তা/কর্মচারীর কর্পাস অ্যাকাউন্টে জমা হবে।

‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিল দাবিতে অচল সব বিশ্ববিদ্যালয়

আনফান্ডেট ডিফাইন্ড বেনিফিট সিস্টেমের পেনশন ব্যবস্থায় সরকারের আর্থিক সংশ্লেষ বাড়তে থাকে, যা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয়। অন্যদিকে ফান্ডেড কনট্রিবিউটরি পেনশন সিস্টেমে প্রাপ্ত কন্ট্রিবিউশন ও বিনিয়োগ মুনাফার ভিত্তিতে একটি ফান্ড গঠিত হবে। তাই এটি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই পেনশন ব্যবস্থা।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মচারী, যারা ২০২৪ সালের ১ জুলাই ও তার পরবর্তী সময়ে নতুন নিয়োগ পাবেন কেবলমাত্র তারা প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদনের পর নিজ বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে একই পদে বা উচ্চতর পদে নিয়োগ পেলে তিনি সার্ভিস প্রটেকশন ও পে প্রটেকশন পান। তাই এটিকে নতুন নিয়োগ হিসেবে গণ্য করা হয় না।

সেক্ষেত্রে তার বিদ্যমান পেনশন সুবিধার আওতায় থাকার সুযোগ থাকবে।

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনে ৬০ বছর বয়স থেকে পেনশন পাওয়ার উল্লেখ থাকলেও যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ৬৫ বছরে অবসরে যান, তাই সেই সময় থেকেই তাদের পেনশন শুরু হবে। এক্ষেত্রে আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে।

যেহেতু ছুটি নগদায়ন ও পিআরএল অর্জিত ছুটি প্রাপ্যতার ভিত্তিতে দেওয়া হয়, তাই ছুটি জমা থাকা সাপেক্ষে তাও বহাল থাকবে।

‘প্রত্যয়’ নিয়ে কেন বিরোধিতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বলছে, কন্ট্রিবিউটরি পেনশন সিস্টেমে অংশগ্রহণকারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এককালীন নয় বরং মাসিক পেনশনের যুক্তিসংগত পরিমাণ নির্ধারণ করাই অগ্রগণ্য। তাই এক্ষেত্রে আনুতোষিকের ব্যবস্থা রাখা হয়নি বরং বিদ্যমান মাসিক পেনশনের কয়েকগুণ বেশি মাসিক পেনশন দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

প্রত্যয় স্কিমে মাসিক পাঁচ হাজার টাকা বেতন থেকে কাটা হলেও একই পরিমাণ অর্থ যেহেতু প্রতিষ্ঠান জমা দেবে তাই ৩০ বছর পর একজন পেনশনার প্রতি মাসে ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৬০ টাকা হারে আজীবন পেনশন পাবেন। তার নিজ আয়ের মোট জমা অর্থের পরিমাণ ১৮ লাখ টাকা এবং তিনি যদি ১৫ বছর ধরে পেনশন পান সেক্ষেত্রে তার মোট প্রাপ্তি হবে ২ কোটি ২৪ লাখ ৩৮ হাজার ৮০০ টাকা, যা তার জমার প্রায় ১২ দশমিক ৫ গুণ।

পেনশনার পেনশনে যাওয়ার পর ৩০ বছর জীবিত থাকলে তার জমার প্রায় ২৫ গুণ অর্থ পেনশন পাবেন।

বিদ্যমান ব্যবস্থায় পেনশনার আজীবন পেনশন পান। তার অবর্তমানে পেশনারের স্বামী বা স্ত্রী এবং প্রতিবন্ধী সন্তান আজীবন পেনশন পান। নতুন পেনশন ব্যবস্থায়ও পেনশনার আজীবন পেনশন পাবেন। তবে পেনশনারের অবর্তমানে তার স্বামী-স্ত্রী বা নমিনি পেনশন শুরুর তারিখ থেকে ১৫ বছর হিসাবে যে সময় অবশিষ্ট থাকবে সে পর্যন্ত পেনশন পাবেন।

যেমন, একজন পেনশনার অবসরে যাওয়ার পর পেনশন ভোগরত অবস্থায় পাঁচ বছর পেনশন পেয়ে তারপর মারা গেলেন। এক্ষেত্রে তার স্বামী-স্ত্রী বা নমিনি আরও ১০ বছর পেনশন পাবেন।

শিক্ষকদের আন্দোলন অযৌক্তিক : অর্থমন্ত্রী

সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলনকে অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

তিনি বলেন, “প্রত্যয় স্কিম নিয়ে শিক্ষকদের আন্দোলনের কোনো যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না।”

মঙ্গলবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সম্মেলন কক্ষে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) দক্ষিণ, মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াংমিং ইয়ংয়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার প্রত্যয় স্কিম বাতিল দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছেন দেশের ৩৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। শিক্ষকদের এই আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীও যুক্ত হয়েছেন। ফলে সোমবার থেকে হয়নি কোনও ক্লাস-পরীক্ষা। সব মিলে অচল হয়ে পড়েছে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়।

আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলছেন, প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন না করা পর্যন্ত তাদের এই কর্মবিরতি কর্মসূচি চলবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত