চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের অংশগ্রহণ ছিল কম। মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও ছেলেদের সংখ্যা কেন কমল সেই কারণ খুঁজে বের করার ওপর জোর দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ উপলক্ষে রবিবার সকালে গণভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
এর আগে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সম্মিলিত ফলের পরিসংখ্যান প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি একটি বোতাম টিপে ফল প্রকাশ করেন।
এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৮৩ দশমিক শূন্য চার শতাংশ। পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পাশাপাশি ফলাফলেও ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে মেয়েরা।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাক্ষরতার হার বেড়েছে। শিক্ষায় অংশ নেওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। মেয়েদের হার অনেক বেড়েছে। প্রাথমিকে একসময় ৫৪ শতাংশ ছাত্রী যেত, এখন ৯৮ শতাংশ মেয়ে স্কুলে যায়।
ফলের পরিসংখ্যানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ফলাফল দেখে আমি হিসাব করছিলাম, প্রত্যেকটা বোর্ডে আমাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যা কত। মাত্র তিনটা বোর্ডে ছাত্রের সংখ্যা একটু বেশি। অধিকাংশ জায়গায় ছাত্রীদের সংখ্যা বেশি।
“এটা একদিকে খুশির খবর, কারণ নারী শিক্ষার ওপর আমরা বেশি জোর দিয়েছি। এইচএসসি পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করেছি।”
এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা ছিল নয় লাখ ৮৮ হাজার ৭৯৪ জন, আর ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ১০ লাখ ২৪ হাজার ৮০৩ জন।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “কেন ছাত্র সংখ্যা কমে যাচ্ছে সেই কারণটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। কী কারণে ছাত্র কমে যাচ্ছে?”
তিনি বলেন, “পাসের হারে মেয়েরা এগিয়ে, সেটা খুব ভালো কথা। কিন্তু তারপরও আমি আমি বলব, এই বিষয়টায় আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। বিনামূল্যে বই দিচ্ছি, বৃত্তি দিচ্ছি, প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি।”
প্রধানমন্ত্রী ছেলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমার কারণ জানার জন্য পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়ে বলেন, “বিবিএসকে বলতে পারি জরিপের সময় এটা জানার চেষ্টা করতে। কী কারণে ছেলেরা কমবে?
“মেয়েরা বাড়লে খুশি হই, সমান সমান হলে ভালো। কিন্তু ছেলে কেন কমল এটা জানতে হবে। ছেলেরা পিছিয়ে আছে কেন, জানতেই হবে। এটা যার যার বোর্ডে খোঁজ নেবেন। কিশোর গ্যাং কালচার দেখতে পাচ্ছি। কাজেই এটা খতিয়ে দেখতে হবে।”
পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে এসএসসির ফল ঘোষণা করতে পারায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মাসের পর মাস গেছে, ছেলে-মেয়েরা রেজাল্ট পায়নি। আমরা ৬০ দিনের মধ্যে তা দিতে পেরেছি। এখন একটা নিয়মের মধ্যে আনা হয়েছে। শিক্ষায় অংশ নেওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও অনেক বেড়েছে।”
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা আসার পর থেকেই প্রচেষ্টা ছিল মানুষকে লেখাপড়ার প্রতি উৎসাহিত করা– মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, তারপরও আমরা বলব, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যারা বাকি আছে, তাদের স্কুলে পাঠানোর দায়িত্ব আমাদের। তবে সাদাসিধা এমএ-বিএ পাস করবে তা নয়। সঙ্গে সঙ্গে কারিগরি শিক্ষায় পারদর্শী হবে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি, সার্বিকভাবে শিক্ষিত হওয়ার জন্য যা যা দরকার সব শিখবে।”
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়ে ১২ মার্চ শেষ হয়।
এবার এসএসসি, দাখিল, এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থীর ছিল ২০ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৭ জন।
এর মধ্যে এসএসসিতে ১৬ লাখ ৬ হাজার ৩৯৪ জন, দাখিলে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৬৬৫ জন এবং এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল)-এ ১ লাখ ২২ হাজার ৫৩৮ জন পরীক্ষার্থী ছিল।