Beta
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫

রপ্তানি আয়ের হিসাবে এখনও গরমিল

ডলার
মার্কিন ডলার
[publishpress_authors_box]

রপ্তানি আয়ের হিসাবে গরমিল রয়েই গেছে। অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকে বড় গলদ ধরা পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল শেখ হাসিনার সরকার

রপ্তানিকারকরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছিলেন, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের ফোলানো-ফাঁপানো তথ্য দিচ্ছে। সেই অভিযোগ ধরা পড়ে গত জুলাইয়ে। এরপর ইপিবি রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ বন্ধ করে দেয়।

সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, এখন থেকে পণ্য রপ্তানি থেকে আয়ের ‘প্রকৃত তথ্য’ প্রকাশ করা হবে। তবে সেই তথ্য প্রকাশ করতে দুই-তিন মাস সময় লাগবে।

ইপিবি এরপর গত ৯ অক্টোবর চার মাসের (গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ মাস জুন এবং চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাস জুলাই-সেপ্টেম্বর) তথ্য একসঙ্গে প্রকাশ করে। সংবাদ সম্মেলন করে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ওই তথ্য প্রকাশ করেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, “জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে রপ্তানির তথ্য সংগ্রহ করে ইপিবি। তবে কিছু কারণে সেখানে একই রপ্তানির তথ্য একাধিকবার হিসাব করা হয়েছিল। সে কারণেই হিসাবে গরমিল হয়েছিল।”

ইপিবি, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের আলোকে অসঙ্গতিগুলো ঠিক করা হয়েছে। তারপর এনবিআর থেকে নেওয়া সঠিক তথ্যের আলোকে ইপিবি সংশোধিত রপ্তানি তথ্য প্রকাশ করেছে।

“এখন থেকে তথ্যের সঠিকতা যাচাই করে প্রতি মাসে নিয়মিতভাবে রপ্তানি তথ্য প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে রপ্তানি তথ্য প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে,” বলেছিলেন ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার।

এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসের রপ্তানি আয়ের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে ইপিবির তথ্যের সঙ্গে ফের বড় ধরনের পার্থক্য ধরা পড়েছে।

এদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে দেখা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পণ্য রপ্তানি থেকে ১ হাজার ৫৬ কোটি (১০.৫৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকরা। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে আয়ের অঙ্ক ছিল ১ হাজার ৫ কোটি (১০.০৫ বিলিয়ন) ডলার।

অথচ গত ৯ অক্টোবর ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, এই তিন মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ১ হাজার ১৩৭ কোটি (১১.৩৭ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে আয়ের অঙ্ক ছিল ১ হাজার ৮২ কোটি (১০.৮২ বিলিয়ন) ডলার।

হিসাব-নিকাশ করে দেখা যাচ্ছে, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ইপিবির তথ্যে পার্থক্য দাঁড়িয়েছে ৮১ কোটি ডলার। অর্থাৎ এই তিন মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যের চেয়ে ৮১ কোটি ডলার বেশি আয়ের তথ্য দিয়েছে ইপিবি।

এ বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনকে ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়েও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

গত জুলাইয়ে রপ্তানি আয়ের হিসাবে গরমিল নিয়ে যে সমালোচনা হয়েছিল, তা বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইপিবির তথ্যে বড় পার্থক্য দেখা দেওয়ার পরই হয়েছিল।

৯ অক্টোবর চার মাস পর রপ্তানি আয়ের তথ্য প্রকাশ করেছিল ইপিবি। এর আগে সবশেষ জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসের অর্থাৎ জুলাই-মে সময়ের রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করেছিল ইপিবি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ইপিবি প্রতি মাসের রপ্তানি তথ্য প্রকাশ করে আসছিল। সাধারণত চলমান মাসের প্রথম সপ্তাহে আগের মাসের রপ্তানি তথ্য প্রকাশ করত সংস্থাটি। কোনও কোনও মাসে ১/২ তারিখেও আগের মাসের তথ্য প্রকাশ করেছে ইপিবি।

গত মে মাসের তথ্য ৬ জুন প্রকাশ করেছিল ইপিবি। এরপর অর্থবছরের শেষ মাস জুন এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তথ্য একসঙ্গে প্রকাশ করা হয় ৯ অক্টোবর।

এরপর জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে রপ্তানির হিসাবে বড় ধরনের গরমিল ধরা পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে ইপিবি।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৩ জুলাই ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের (জুলাই-এপ্রিল) রপ্তানির ‘প্রকৃত তথ্য’ প্রকাশ করে। সেখানে ইপিবির প্রকাশ করা তথ্যের সঙ্গে প্রায় ১৪ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের ফারাক পাওয়া যায়। এরপর রপ্তানি আয়ের তথ্যের গরমিল নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

১১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসের (জুলাই-মে) রপ্তানির ‘প্রকৃত তথ্য’ প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, ১১ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪ হাজার ৭২ কোটি ৯০ লাখ (৪০.৭৩ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছেন বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা। এই অঙ্ক আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ কম।

অথচ ৪ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক পুরনো হিসাবে রপ্তানির যে তথ্য প্রকাশ করেছিল তাতে গত অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে পণ্য রপ্তানি থেকে ৫ হাজার ১৫৪ কোটি ২৭ লাখ (৫১.৫৪ বিলিয়ন) ডলার আয়ের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছিল। তাতে ওই ১১ মাসে ২ দশমিক শূন্য এক শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলা হয়েছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে দেখা যায়, রপ্তানির ‘প্রকৃত তথ্য’ প্রকাশের পর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে রপ্তানি আয় ১ হাজার ৮১ কোটি ৩৭ লাখ (১০.৮১ বিলিয়ন) ডলার কমে যায়।

সংশোধিত হিসাবে বিশাল অঙ্কের ওই রপ্তানি আয় কমে যাওয়ায় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) ওলোটপালট হয়ে যায়। চলতি হিসাব ও আর্থিক হিসাবে হঠাৎ বড় পরিবর্তন আসে; উদ্বৃত্ত থাকা চলতি হিসাবে ঘাটতি দেখা দেয়। আর বড় ঘাটতিতে থাকা আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত দেখা দেয়।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে গত ৩ জুলাই বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের তথ্য নতুনভাবে প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর তাতেই ওলোটপালট হয়ে যায় সব হিসাবনিকাশ।

অক্টোবরের রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করেনি ইপিবি

ইপিবি আগে চলমান মাসের প্রথম সপ্তাহে আগের মাসের রপ্তানি তথ্য প্রকাশ করত। কোনও কোনও মাসে ১/২ তারিখেও আগের মাসের তথ্য প্রকাশ করত সংস্থাটি।

নভেম্বর মাসের ৭ তারিখ পার হয়ে গেলেও অক্টোবর মাসের রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করেনি ইপিবি।

হিসাবের এমন গরমিল সম্পর্কে জানতে চাইলে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত নিট পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিটিএমইএ-এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক এখন রপ্তানির যে তথ্য প্রকাশ করছে, এটাই প্রকৃত তথ্য। দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়টি আমরা বলে আসছিলাম।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবই যৌক্তিক। সঠিক হিসাব না দেওয়ায় এত দিন নীতিনির্ধারকদের কাছে ভুল বার্তা গেছে। এতে করে পুরো খাতটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইপিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে যাতে কোনও পার্থক্য না থাকে সেটাই আমরা চাই।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত