রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে বিদেশি মুদ্রায় দেওয়া ঋণের সুদের হার নির্ধারণে পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এখন থেকে সোফরের (সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট) ওপর ভিত্তি করে এই সুদহার নির্ধারিত হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, বৈশ্বিক আর্থিক বাজারের প্রবণতার সঙ্গে মিল রেখে ইডিএফের সুদের হার নির্ধারণের এই পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে।
রবিবার দেশের সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের এই নির্দেশনা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকগুলো সোফর সুদের হারের সঙ্গে বার্ষিক শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ সুদ যোগ করে ইডিএফ থেকে ঋণ নিতে পারবে।
ডিলার ব্যাংকগুলো উৎপাদক বা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সোফর হারের সঙ্গে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদ যোগ করে ঋণের বিপরীতে সুদ আদায় করতে পারবে।
প্রতি কার্যদিবসে নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ বা যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিউ ইয়র্ক শাখা স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় সোফর সুদহার প্রকাশ করে।
বৈশ্বিক সুদহার নির্ধারণের মাপকাঠি লাইবর (লন্ডন ইন্টারব্যাংক অফারড রেট) উঠে যাওয়ার পর বাংলাদেশে গত বছরের জুলাই থেকে সোফর অনুসরণ করে আসছে।
নতুন এই নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগ পর্যন্ত ইডিএফ থেকে দেওয়া ঋণের সুদ নির্ধারিত ছিল।
এত দিন ইডিএফ থেকে দেওয়া অর্থের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ৩ শতাংশ সুদ আদায় করত। ডিলার ব্যাংকগুলো পণ্য উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে এই ঋণের বিপরীতে ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদ নিত।
নিউ ইয়র্ক ফেডের তথ্যানুযায়ী, সোমবার সোফরের হার ছিল ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। সে ক্ষেত্রে ইডিএফ থেকে এখন ঋণ নিলে আগের তুলনায় বেশি সুদ দিতে হবে। অর্থাৎ রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের ঋণের সুদের হার কার্যত আগের তুলনায় বেড়েছে। তবে সোফর কোনও কারণে কমে গেলে এই সুদের হারও কমে আসবে। অর্থাৎ এই সুদহার বাজারভিত্তিক।
রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে গঠিত ইডিএফের আকার এক সময় ৭ বিলিয়ন বা ৭০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা হয়েছিল। তবে পরে ডলার–সংকটের কারণে এই তহবিলের আকার সীমিত করা হয়। গত বছরের এপ্রিল মাসে ইডিএফ থেকে ঋণ নেওয়ার সীমা কমিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে যে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ দিয়েছে, তার শর্ত হিসেবে রিজার্ভের অর্থের প্রকৃত হিসাব করতে সুপারিশ করে সংস্থাটি। এর অংশ হিসেবে ধীরে ধীরে এই তহবিলের আকার ছোট করার কাজ শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সে লক্ষ্যে রপ্তানিকারকদের ঋণের সীমা সে সময় ৫০ লাখ ডলার করে কমিয়ে দেওয়া হয়। এতে রিজার্ভের অর্থে গঠিত এই তহবিল থেকে আগের চেয়ে কম ঋণ পাচ্ছেন রপ্তানিকারকেরা।