রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দেখা দিয়েছিল শ্রমিক অসন্তোষ, কারখানা বন্ধসহ নানা কারণে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছিল, তবে রপ্তানি আয়ের তথ্য দেখাচ্ছে ভয় নেই।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) জানিয়েছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছে।
এই তিন মাসে ১ হাজার ১৩৭ কোটি (১১.৩৭ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে এই অঙ্ক ছিল ১ হাজার ৮২ কোটি (১০.৮২ বিলিয়ন) ডলার।
সবশেষ সেপ্টেম্বর মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৫১ কোটি (৩.৫১ বিলিয়ন) ডলার দেশে এসেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এসেছিল ৩২৯ কোটি (৩.২৯ বিলিয়ন) ডলার। এখানেও প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
বুধবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে ইপিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে রপ্তানির আয়ের হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরেন ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন।
এবার চার মাস পর রপ্তানি আয়ের তথ্য প্রকাশ করল ইপিবি। এর আগে সবশেষ জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসের অর্থাৎ জুলাই-মে সময়ের রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ইপিবি প্রতি মাসের রপ্তানি তথ্য প্রকাশ করে আসছিল। গত মে মাসের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল ৬ জুন।
রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এরপর আর তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। এর মধ্যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত আগস্টে সরকারের পতন ঘটে।
এর আগে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে রপ্তানির হিসাবে বড় ধরনের গরমিল ধরা পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনায়ও পড়েছিল ইপিবি।
রপ্তানিকারকরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছিলেন যে ইপিবি রপ্তানি আয়ের ফোলানো-ফাঁপানো তথ্য দিচ্ছে।
১১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসের (জুলাই-মে) রপ্তানির ‘প্রকৃত তথ্য’ প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, ওই ১১ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪ হাজার ৭২ কোটি ৯০ লাখ (৪০.৭৩ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ কম।
অথচ ৪ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক পুরনো হিসাবে রপ্তানির যে তথ্য প্রকাশ করেছিল, তাতে গেল অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে পণ্য রপ্তানি থেকে ৫ হাজার ১৫৪ কোটি ২৭ লাখ (৫১.৫৪ বিলিয়ন) ডলার আয়ের তথ্য দেখানো হয়েছিল। তাতে ওই ১১ মাসে ২ দশমিক শূন্য এক শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলা হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে দেখা যায়, রপ্তানির ‘প্রকৃত তথ্য’ প্রকাশের পর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে রপ্তানি আয় ১ হাজার ৮১ কোটি ৩৭ লাখ (১০.৮১ বিলিয়ন) ডলার কমে যায়।
সংশোধিত হিসাবে বিশাল অঙ্কের ওই রপ্তানি আয় কমে যাওয়ায় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) ওলটপালট হয়ে যায়। চলতি হিসাব ও আর্থিক হিসাবে হঠাৎ বড় পরিবর্তন আসে; উদ্বৃত্ত থাকা চলতি হিসাবে ঘাটতি দেখা দেয়। আর বড় ঘাটতিতে থাকা আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত দেখা দেয়।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে গত ৩ জুলাই বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের তথ্য নতুনভাবে প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এতেই ওলটপালট হয়ে যায় সব হিসাবনিকাশ।
বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সফটওয়্যারে সরাসরি যুক্ত হওয়া রপ্তানি চালানের তথ্যের ভিত্তিতে রপ্তানি আয়ের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এখন থেকে প্রতি মাসে রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করা হবে।
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক। কিন্তু আন্দোলনের মধ্যে জুলাই মাসে কয়েক দিন কারখানাগুলো বন্ধ ছিল। তখন ব্যাংক বন্ধ এবং ইন্টারনেট অচল থাকায় বৈদেশিক লেনদেনও বাধাগ্রস্ত হয়।
অগাস্টের শুরুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আবার শ্রমিক অসন্তোষে কারখানা বন্ধ ছিল বেশ কয়েকদিন। এখনও পোশাক কারখানায় পুরোপুরি স্বভাবিক অবস্থা ফিরে আসেনি।