Beta
বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫
Beta
বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

প্রণোদনার নতুন হারে সংকট বাড়বে, শঙ্কা রপ্তানিকারকদের

হস্তশিল্প রপ্তানিতে প্রণোদনা কমিয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে। সম্প্রতি বাণিজ্য মেলার একটি স্টল থেকে তোলা ছবি — সকাল সন্ধ্যা
হস্তশিল্প রপ্তানিতে প্রণোদনা কমিয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে। সম্প্রতি বাণিজ্য মেলার একটি স্টল থেকে তোলা ছবি — সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য (জানুয়ারি-জুন) রপ্তানির বিপরীতে প্রণোদনার নতুন হার ঘোষণা করা হয়েছে। এতে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশে উত্তরণের বিষয়টি সামনে রেখে তৈরি পোশাক, হস্তশিল্প, প্লাস্টিক, কৃষি, চামড়াসহ ৪৩ খাতের পণ্যে রপ্তানির বিপরীতে আর্থিক প্রণোদনা কমানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, সংকটকালে প্রণোদনার নতুন এই হারে সংকট আরও বাড়বে।

প্রণোদনার নতুন হার অনুযায়ী, পণ্যভেদে প্রণোদনা কমেছে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ থেকে স‌র্বোচ্চ ১৫ শতাংশ প্রণোদনা পাবেন রপ্তানিকারকরা। আগে যা ছিল ১ শতাংশ থেকে স‌র্বোচ্চ ২০ শতাংশ।

তৈরি পোশাক খাতে এক শতাংশ থেকে কমিয়ে প্রণোদনা শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে।

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সরকার এমন সিদ্ধান্ত ভুল সময়ে নিল। আমাদের সাথে কোনও আলোচনা না করে, হঠাৎ আর্থিক প্রণোদনা কমিয়ে দেওয়া হল। এটা ঠিক হল না। আমরা যে প্রোডাক্টগুলোতে ভালো করছিলাম, সেসব প্রোডাক্ট থেকে প্রণোদনা একদম তুলে নেওয়া হয়েছে। তাহলে তো কোনও ইনসেনটিভ থাকল না।”

এতে তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা ‘খুব বিপদে পড়বে’— এমন অভিমত ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “মজুরি বেড়েছে, ব্যাংকের সুদের হার বেড়েছে, জ্বালানি সংকট, বৈশ্বিক মন্দার ফলে কার্যাদেশ এমনিতেই কম। এরকম অবস্থায় এ সিদ্ধান্ত সংকটের সময় সংকট আরও বাড়াবে।”

ফারুক হাসান বলেন, “বর্তমানে লোহিত সাগর দিয়ে পণ্য যাতায়াত বাধাগ্রস্ত হওয়ায় পরিবহন ভাড়া বেড়েছে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে রপ্তানিকারকরা বড় ধরনের বিপদে পড়বেন এবং রপ্তানি কমে যাবে। সরকারের ২০২৬ সালের যে লক্ষ্যমাত্রা, তা নিয়ে আমাদের সাথে আলাপ হয়েছিল, আর্থিক প্রণোদনা কমানো হবে, কিন্তু অন্যভাবে আমাদের প্রণোদনা দেওয়া হবে। সেই ব্যবস্থা না করে এভাবে হুট করে সিদ্ধান্ত এই খাতের জন্য ভালো হবে না।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী, রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক খাতের দেশি বস্ত্রখাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র-ব্যাক এর পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা পাওয়া যাবে ৩ শতাংশ, আগে যা ছিল ৪ শতাংশ। নিট, ওভেন ও সোয়েটার অন্তর্ভুক্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে থাকা অতিরিক্ত সুবিধা আগের মতো ৪ শতাংশই রেখেছে সরকার। এছাড়া নতুন পণ্য বা নতুন বাজার (বস্ত্রখাত) সম্প্রসারণে সহায়তা ৪ শতাংশের বদলে ৩ শতাংশ করা হয়েছে।

প্লাস্টিক
দেশে বাড়ছে প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি।

কিছুদিন আগেই হস্তশিল্পকে বর্ষপণ্য ঘোষণা করেছে সরকার। হস্তশিল্পে ২০১৯ সালে আর্থিক প্রণোদনার হার ২০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা হয়েছিল। রপ্তানিকারকরা সেই সময় থেকে আর্থিক প্রণোদনা ২০ শতাংশে পুর্নবহালের দাবি জানিয়ে আসছেন। প্রণোদনার নতুন হারে, সরকার তা আরও কমিয়ে ৮ শতাংশ করেছে।

এ বিষয়ে সকাল সন্ধ্যার কথা হয় বাংলাদেশ হস্তশিল্প রপ্তানিকারকদের সমিতি বাংলাক্রাফট-এর সভাপতি এস ইউ হায়দারের সঙ্গে। তিনি বলেন, “আমরা তো ২০ শতাংশ প্রণোদনার কথা বলে আসছিলাম সরকারকে। এখন ১০ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশ করায় আমাদের জন্য কঠিন হয়ে গেল।”

তিনি বলেন, “২০১৫ সালে যে হস্তশিল্প নীতিমালা হয়েছে, তার কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সভা হলে তারা শুধু আশ্বাস দেয়— নীতিমালা বাস্তবায়ন করবে। নীতিমালা তো বাস্তবায়নই হল না,তার ওপর যতটুকু প্রণোদনা পেতাম তাও কমিয়ে দেওয়া হল।”

হায়দার বলেন, “পুঁজির অভাব এ খাতে উদ্যোক্তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা। ব্যাংকের ঋণের ওপর সুদের হার এখন অনেক বেশি, ফলে প্রণোদনা কমানোর সিদ্ধান্ত উদ্যোক্তাদের নিরুৎসাহিত করবে।”

একই রকম অবস্থা প্লাষ্টিক শিল্পেও। প্রণোদনা হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে।

২০৩০ সাল নাগাদ বছরে ৮৫ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্যসামগ্রী রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে আছেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এ সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। আমরা সব অর্ডার হাতে নিয়েছি, এই অর্থের পরিমাণ মাথায় রেখে। এখন হঠাৎ করে এটা কমিয়ে দিলে আমরা সেই অর্ডারগুলো করব কীভাবে এখন। এ সিদ্ধান্তে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে গেল।”

শামীম বলেন, “এমনিতেই আমাদের রপ্তানির অবস্থা ভালো না, ডলার ও জ্বালানি সংকটে আমরা রয়েছি। সরকারের এ সিদ্ধান্ত রপ্তানিকারকদের হতাশ করবে।”

প্রণোদনা আগের হার পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে তারা সরকারকে চিঠি দেবেন বলেও জানান শামীম।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত