‘চোখ রাঙানো’ বাগধারাটি বাংলায় আমরা ‘রাগ করা’ অর্থেই বোঝাতে অভ্যস্ত। বাঙালির কাছে সৌন্দর্য ও ফ্যাশনের সঙ্গে এই শব্দযুগলের কোন সম্পর্ক একেবারেই নেই। তাই বলে কি ফ্যাশনের জন্য ‘চোখ রাঙানো’র প্রচলন পৃথিবীতে থেমে আছে!
সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো ‘চোখ রাঙানো’র জন্য এই ট্যাটু করা আবার দু্টি পদ্ধতি আছে। একটি কেবল ফ্যাশনের জন্য, যেটিতে চোখের উপরের সাদা অংশে (স্কেলেরা) কালি ইনজেক্ট করা হয় এবং আরেকটিতে চিকিৎসা পদ্ধতি চোখের কর্নিয়ায় কালি ইঞ্জেক্ট করা হয়। দ্বিতীয়টি ‘কেরাটোপিগমেন্টেশন’ হিসেবে পরিচিত।
চোখের ট্যাটু
হাজার বছর ধরেই এই ট্র্যাডিশন চলে আসছে। তবে এই শতকের শুরুর ভাগে হঠাৎ করেই এই পদ্ধতি ট্যাটুকারীদের মধ্যে বিশেষ পরিচিতি পায়। গত কয়েক বছরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হলো, এ ধরনের ট্যাটু প্রক্রিয়া একটু ওলট-পালট হলে আজীবনের জন্য অন্ধ হওয়াটা বিচিত্র নয়। আর অন্যান্য সংকট তো রয়েছেই। যেমন- চোখের ভেতর অ্যালার্জি, জ্বালাপোড়া, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, দীর্ঘমেয়াদী নিবিড় পরিচর্যা ইত্যাদি। এটি একটি স্থায়ী ব্যাপারও বটে। কাজেই কখনো চোখের রং সবুজ থেকে নীল করতে হলে সেটি করা যাবে না।
কেরাটোপিগমেন্টেশন
কেরাটোপিগমেন্টেশন মূলত একটি চিকিৎসা প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে চোখের কর্নিয়া-তে পিগমেন্ট বা রঙ প্রয়োগ করা হয়। চোখের আকার বা রঙের পরিবর্তন ঘটানোর জন্য এটি করা হয়। অনেকের চোখ নানাভাবে আলোক সংবেদনশীল হয়ে থাকে, চোখের কর্নিয়া বা মণিতে কারও শ্বেত বা কালচেটে দাগ থাকে, এসবের চিকিৎসা কেরাটোপিগমেন্টেশন পদ্ধতি প্রয়োগ করে হয়। এই প্রক্রিয়াটি অবশ্য দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর চিকিৎসার ব্যবহার হয় না। কেবল চোখের শোষণ বা কসমেটিক অবস্থার উন্নতিতে সাহায্য করতে পারে।
কেরাটোপিগমেন্টেশন প্রথমে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান ও কসমেটিক সার্জারির অংশ হিসেবে উদ্ভূত হয়।
এর ইতিহাস অনেক পুরনো নয়। মূলত ২০০০ সালের পর এটির প্রসার হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার চক্ষু বিশেষজ্ঞ ড. সিওং হো সিও এবং ইউরোপীয় গবেষকরা এর প্রয়োগ এবং উন্নতির জন্য পরিচিত।
প্রথমদিকে এটি মূলত চিকিৎসার প্রয়োজনে কর্নিয়া ও চোখের সংবেদনশীল অংশের উন্নতির জন্য ব্যবহৃত হত, পরে কসমেটিক বা ফ্যাশনের উদ্দেশ্যে এর ব্যবহার বৃদ্ধি পায়।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, যারা কর্নিয়ার বিশেষ চিকিৎসা ও সার্জারি জানেন, তারা এই পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এর জন্য বিশেষ প্রস্তুতিরও প্রয়োজন হয়। কেরাপিগমেনটেশন চোখের রঙ পরিবর্তন বা সঠিকতাকে উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।
কেরাটোপিগমেন্টেশন বর্তমানে বিশ্বব্যাপী একটি ছোট কিন্তু ক্রমবর্ধমান বাজার তৈরি করেছে। কসমেটিক সার্জারির অংশ হিসেবে এটি কিছু উন্নত দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, তবে এখনও মূলধারা হয়ে ওঠেনি। দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, এবং ইউরোপীয় দেশগুলোতে এর চাহিদা বাড়ছে।
কেরাটোপিগমেন্টেশন প্রক্রিয়াতেও কিছু ঝুঁকি রয়েছে:
• ইনফেকশন: চোখে পিগমেন্ট ইনজেক্ট করার কারণে ইনফেকশন বা চোখের ক্ষতি হতে পারে।
• দৃষ্টিশক্তি ক্ষতি: প্রক্রিয়াটি যদি সঠিকভাবে না করা হয়, তবে চোখের দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি হতে পারে।
• অ্যালার্জি বা প্রতিক্রিয়া: কিছু পিগমেন্ট বা রঙের প্রতি অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যা চোখে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণে, এটি করার আগে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।
কেরাটোপিগমেন্টেশন করার মাধ্যমে কিছু মানুষ তাদের চোখের আকার বা রঙ পরিবর্তন করতে পারেন। এটি চোখের সৌন্দর্য বাড়ানো এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির জন্যও কার্যকর হতে পারে।
তবে এভাবে চোখ রাঙানোর চেয়ে বরং রাগের চোখ রাঙানো কম ঝুঁকিপূর্ণ ও সহজ, কী বলেন!