Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

ফেইসবুকে মৃতরা জেগে উঠলে করণীয় কী  

Dead profile
[publishpress_authors_box]

আর দশটা দিনের মতোই একটি দিন। ফেইসবুকে স্ক্রল করতে করতে আবিদ বন্ধুদের পোস্টগুলোতে একটু চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে। একটা-দুটো মিম চোখে পড়লেই ‘হা-হা’ দিয়ে হাজিরা দিতেও ভুলছেনা। ইদানিং আবার রিলস-এ খুব মজেছে সে। কয়েকদিন খুব বেছে বেছে ডান্স কন্টেন্টগুলো দেখেছিল আবিদ, ফেইসবুকের অ্যালগরিদম তাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এই ধরনের কন্টেন্টগুলোই আজকাল তার ফিডস- এ দেখায়। আজও তার ব্যতিক্রম কিছু হচ্ছেনা অবশ্য। দশ-বারোটা রিলস এরই মধ্যে দেখা হয়ে গেছে তার। ফুরফুরে মেজাজে চলছে ফেইসবুকিং।  

বিপত্তিটা বাঁধলো এক ফ্রেন্ড সাজেশনে। সাজেশনে মেটা দেখাচ্ছে, পাঁচ বছর আগের সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত এক বন্ধুর প্রোফাইল। মুহূর্তে এক পশলা স্মৃতিতে ডুবে গেল আবিদ। এটা ওর কলেজের ক্লাসমেইট রুশদির প্রোফাইল। রুশদির সঙ্গে আবিদের খুব অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব না থাকলেও, কলেজ ক্যান্টিনে নিয়মিত গল্প হতো তাদের। রুশদি রাত জেগে ভিডিও গেমস খেলতো। আর ঢুলু ঢুলু চোখে কলেজে আসতো ক্লাস করতে। এইসব স্মৃতি আবিদের মনটা কেমন ভার করে ফেললো। হঠাৎ কেমন বিষণ্ণ বোধ করতে থাকলো সে। আবিদের মনে পড়ে গেল- বড় মামাও তো ঠিক এভাবেই মরে গেলেন- রোড অ্যাক্সিডেন্টে!

মুহূর্তেই মৃত রুশদির ফেইসবুক প্রোফাইল ফ্রেন্ড সাজেশনে আসার ঘটনা আবিদের ফুরফুরে মেজাজ যেন অমাবশ্যার মতো আচ্ছন্ন করে ফেললো। কে জানতো এই ‘হ্যাপি ফেইসবুকিং’ হুট করে একটা বিষণ্ণ দিনে পরিণত হবে?

ঘটনাটা কাল্পনিক হলেও মেটার ফেইসবুকে আজকাল এমন ঘটনা ঘটছে। হঠাৎ করেই ফ্রেন্ড সাজেশনে চলে আসছে মৃতদের পরিচিত মুখ। যা কিনা তাদের পরিচিতদের জন্য হয়ে উঠছে মন খারাপের কারণ। প্রশ্ন উঠছে – ফেইসবুকের অ্যালগরিদম কেন এই বিষয়টির কোন সুরাহা করতে পারছে না। কেন মৃত ব্যক্তিদের ইন্যাক্টিভ প্রোফাইলগুলো চলে আসছে ফ্রেন্ড সাজেশনে?

তাছাড়া ৫ বছর আগে মারা গেছে এমন কারও জন্মদিনের নোটিফিকেশন ফেইসবুকে ভেসে ওঠা মোটেও আনন্দের নয়। এই ঘটনাগুলো বিচলিত এবং বিষণ্ণ করে তুলতে পারে যে কাউকেই।

মুম্বাই ভিত্তিক একটি ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাতা ও মানসিক স্বাস্থ্য থেরাপিস্ট অনিন্দিতা ভাগানি এ বিষয়ে বলেন, “ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বেদনাদায়ক স্মৃতি উসকে দিতে পারে এমন ঘটনা কখনো কখনো আমাদের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করে দিতে পারে। তা যদি হয়- আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া কেউ, তবে তা আরও কষ্টের। কারণ এটা বার বার তাদের স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়ে আমাদের দুঃখ আর বেদনায় ভাসিয়ে দেওয়া আশংকা তৈরি করে। এমন অভিজ্ঞতা আমাদের শোকের অনুভূতিকে আরও তীব্র করে তুলতে পারে।”

২০১৯ সালে মেটার চিফ অপারেটিং অফিসার শেরল স্যান্ডবার্গ ঘোষণা দেন মৃত ব্যক্তিদের প্রোফাইল ফেইসবুকের নানা ছুতোয় দৃশ্যমান হওয়া ঠেকাতে মেটার এআইকে আরও আধুনিক করা হবে। কিন্তু সত্যিটা হলো পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এর কোনও বিহিত হয়নি। এরই মধ্যে পৃথিবীজুড়ে এলো কোভিড আর কেড়ে নিল প্রায় ৭০ লাখ প্রাণ। এখনও তাদের প্রোফাইল মাঝে মাঝেই ঘুরে ফিরে আসছে পরিচিত আর প্রিয়জনদের নিউজ ফিডস-এ। কখনো আসছে ফ্রেন্ড সাজেশন হিসেবে, আবার কখনো আসছে জন্মদিনের নোটিফিকেশনে। যা কিনা অনেক সময় বেদনাদায়ক হয়ে উঠছে তাদের প্রিয়জনদের জন্য। ব্যবহারকারীদের দুঃখভারাক্রান্ত করে ফেলছে এইসব প্রোফাইলের উঁকিঝুকি।

তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ারও আছে নানা তরিকা। এ বিষয়ে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কিছু পরামর্শ জেনে নেওয়া যাক-

ফেইসবুকে নিজের অভিগম্যতা সীমিত করা

মৃত প্রিয়জনদের মুখগুলো ফেইসবুকে বেদনার কারণ হলে তাদের প্রোফাইল আনফ্রেন্ড করা যেতে পারে। তাদের ফলো করা থাকলে আনফলো এমনকি ব্লক করাও যেতে পারে। মোদ্দা কথা নিজের আবেগীয় ভারসাম্য ঠিক রাখাটাকেই দিতে হবে প্রাধান্য।

মেডিটেশন এবং ইয়োগা

নিয়মিত মেডিটেশন এবং ইয়োগার চর্চা সোশ্যাল মিডিয়ার অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখানো থেকে বিরত রাখতে সহায়তা করে।

মৃতদের সম্মান জানানো

মৃত প্রিয়জনদের সম্মান জানাতে নিজস্ব একটি পথ বের করে নিতে হবে। আর এ কাজটি হতে পারে নিয়মিত। এতে করে তাদের স্মৃতির সঙ্গে যেমন একটি সহজ যোগাযোগ গড়ে উঠবে তেমনি আবেগীয় ভারসাম্যও ঠিক থাকবে। আর এ কাজটি হতে পারে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে অথবা তাদের স্মৃতিময় কোন স্থানে মাসে অন্তত একবার বেড়াতে গিয়ে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সীমিত উপস্থিতি

সারাদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পড়ে থাকলে আবেগীয় ভারসাম্য ঠিক রাখা বেশ দুরূহ। তাই একটা নির্দিষ্ট সময় ঘড়ি ধরে ফেইসবুক ব্যবহার করলে অনেক দুঃখ বেদনার মুখোমুখি হতে হবেনা।     

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত