আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের ‘সেবাদাসে’ পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সেই কারণেই নয়া দিল্লিতে গিয়ে দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী দুদিনের সফর শেষে ভারত থেকে ফেরার পরদিন রবিবার ঢাকার নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।
ফখরুল বলেন, “আজকে ভারতের কাছে তারা (সরকার) সেবাদাসে পরিণত হয়ে গেছে। শুধু ভারত নয়, আশপাশের প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে তারা আজকে পুরোপুরি মাথা নিচু করে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছে।
“মিয়ানমার থেকে গুলি আসে জবাবটাও পর্যন্ত তারা দিতে পারে না। এই একটা অথর্ব-নতজানু শাসকগোষ্ঠি আমাদের ওপরে চেপে বসে আছে।”
শেখ হাসিনার এই সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের নতুন সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতেও সম্মত হয় দুই দেশ।
কিন্তু বাংলাদেশের মূল চাওয়াগুলো উপেক্ষিত রয়ে গেছে দাবি করে ফখরুল বলেন, “আমরা যে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছি না, সেই ব্যাপারে কোনও চুক্তি হয়নি। উপরন্তু কী হয়েছে? তিস্তা প্রকল্পের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করার জন্য, তাতে বিনিয়োগ করার জন্য ভারতবর্ষ প্রস্তাব করেছে।
“আমাদের প্রশ্ন খুব পরিষ্কার, আমরা সবার আগে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা চাই এবং অভিন্ন প্রত্যেকটি নদীর আমরা ন্যায্য হিস্যা চাই। এই কথাগুলো সরকার বলতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।”
পুলিশ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের প্রতিক্রিয়ায় পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে বিস্ময় প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, “সাংবাদিকদেরকে হুমকি দিয়েছে যে, এই সত্য (পুলিশের দূর্নীতির খবর) প্রকাশ করা যাবে না। কারণ এতে নাকি তাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়।
“আজকে সারাদেশের মানুষ জানে, সারা পৃথিবী জানে যে পুলিশ বাহিনীর কিছু কিছু সদস্য তারা কীভাবে এই অবৈধ সরকারের সঙ্গে যোগসাজস করে বিত্ত-বৈভবের পাহাড় গড়ে তুলেছে।”
দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আশু আরোগ্য কামনায় নয়া পল্টনে দোয়া মাহফিলে বক্তব্য রাখছিলেন ফখরুল।
খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানোর দাবি
অসুস্থ খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে সরকারের প্রতি দাবি জানান ফখরুল।
তিনি বলেন, “এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড বার বার বলেছেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) যে অসুখ, সেই অসুখের চিকিৎসা এখানে (বাংলাদেশে) করা সম্ভব নয়। তার যে মাল্টি ভ্যারিয়াস ডিজিজেস আছে, তার চিকিৎসা করতে হলে উন্নত দেশের মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি হসপিটাল প্রয়োজন।”
বারবার আহ্বানেও সরকারের সাড়া না দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল বলেন, “শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে, তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাকে কোনোভাবে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।”
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া নানা ধরনের অসুস্থতা নিয়ে এখন ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়া সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্ত থাকলেও তার বিদেশ গিয়ে চিকিৎসার কোনও সুযোগ নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে।
ফখরুল বলেন, “তাকে বাসায় থাকার সুযোগ দেওয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি পুরোপুরি অবরুদ্ধ হয়ে আছেন, বন্দি আছেন। তিনি অবরুদ্ধ অবস্থায় কারাগার থেকেই অসুস্থ হয়েছেন। তার সেখানে কোনও চিকিৎসা হয়নি। তিনি বার বার কমপ্লেইন করেছেন, কিন্তু সরকার তা শোনেনি, চিকিৎসাও দেয়নি।”
দলীয় চেয়ারপারসনের আরোগ্য কামনায় বিএনপি রবিবার ঢাকাসহ সব মহানগর ও জেলায় দোয়া মাহফিল করছে। নয়া পল্টনের কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু অংশ নেন।