শেখ হাসিনার পদত্যাগের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলেও সেই পদত্যাগপত্রটিই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
এনিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে বঙ্গভবন বিষয়টি মীমাংসিত বলে ব্যাখ্যা হাজির করলেও তাতে সন্তুষ্ট নন ফরহাদ মজহার।
তিনি বলছেন, “হাসিনার পদত্যাগপত্রের ভূমিকা নাই? অবশ্যই ভূমিকা রয়েছে।”
রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরীর প্রতিবেদন, তা নিয়ে উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের প্রতিক্রিয়া এবং বঙ্গভবনের ব্যাখ্যার পর এনিয়ে ফেইসবুকে লিখেছেন ফরহাদ মজহার।
যাদের নেতৃত্বে আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে, সেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের কেউ কেউ ফরহাদ মজহারের ভাবশিষ্য বলে মনে করা হয়।
এই আন্দোলনের বিজয়ের পরপরই ফরহাদ মজহার আওয়ামী লীগের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছ থেকে উপদেষ্টাদের শপথ নেওয়ায় আপত্তি তুলেছিলেন।
আগের অবস্থান তুলে ধরে মঙ্গলবার ফেইসবুকে তিনি লিখেছেন, “পদত্যাগপত্রের কথা বলেই হাসিনার নিয়োজিত জেনারেলদের সহযোগিতায় গণঅভ্যুত্থানকে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীনস্থ করা হয়েছে।
“যদি হাসিনাকে উৎখাতই করা হয়ে থাকে তাহলে তার ফ্যাসিস্ট সংবিধান বহাল এবং সেই সংবিধানের অধীনে শপথ নেওয়া হলো কেন? কেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চুপ্পুর (রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন) উপদেষ্টা বানানো হলো? কেন জনগণের অভিপ্রায়কে এভাবে ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীনে এনে নস্যাৎ করা হলো এবং কার্যত ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থাই টিকিয়ে রাখা হলো? এর জবাবদিহি কে করবে?”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কারের উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়েও সংশয় প্রকাশ করছেন ফরহাদ মজহার।
তিনি লিখেছেন, “সংস্কারের নামে লোক দেখানো চাতুরির কি ফায়দা? রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের কী যুক্তি? এই চাতুরির ফলে ফ্যাসিস্ট শক্তি দ্রুত মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পেরেছে। ভূ-রাজনৈতিক শক্তির সমীকরণ বাংলাদেশের জনগণের বিপক্ষে চলে গিয়েছে।”
রাষ্ট্রপতির কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৌখিকভাবে পদত্যাগ করেছেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক থেকে উপদেষ্টার পদে আসা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার এমন বক্তব্যেরও সমালোচনা করেছেন ফরহাদ মজহার।
ফেইসবুকে আরেকটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, “আসিফ, এটা সত্য নয়। মৌখিকভাবে পদত্যাগের কথা কখনই বলা হয়নি। সবসময়ই প্রেসিডেন্টের কাছে পদত্যাগপত্র দেবার কথা বলা হয়েছে। যে জন্য আমি আমার একটি ভিডিওতে পদত্যাগপত্র দেখতে চেয়েছি। আপনারা তখন দেখাতে পারেন নি। এখন কেন মৌখিক পদত্যাগ পত্রের ভুয়া গল্প প্রচার করছেন?”
এর আগেও যে কথা বলেছিলেন, সেই কথাই পুনর্বার স্মরণ করিয়ে দিয়ে ফরহাদ মজহার লিখেছেন, “শুরু থেকেই আমরা বলেছি যে চুপ্পুর কাছে শপথ নেওয়া ছিল আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। কিন্তু আপনারা সেটাই করেছেন।
“আপনারা আমাদের কারও কথা শোনেননি। এমনকি কথা বলাও প্রয়োজন বোধ করেন নি। আপনাদের অনেকে দাবি করেছেন, ট্রেন মিস হয়ে গিয়েছে, এখন আর কিছু করা যাবে না। এটাও ঠিক নয়। অবশ্যই সমাধান আছে। এখন সমাধানের কথা আলোচনা না করে খামাখা পদত্যাগপত্র নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াবেন না।”