প্রজনন মৌসুমে ইলিশ শিকারের নিষেধাজ্ঞার দিন-ক্ষণ জানানোর পাশাপাশি সাগরের এই মাছকে নদীতে আসার পথে বাধা দূর করার ওপর জোর দিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
ইলিশ রপ্তানির বিপক্ষে অবস্থান নিলেও কেন দুর্গাপূজায় ভারতে রপ্তানির সিদ্ধান্ত হলো, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি।
রবিবার সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ফরিদা।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিপণন ও মজুদে নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
মা ইলিশ রক্ষায় ইলিশের প্রজনন সময় বিবেচনায় নিয়ে আশ্বিন মাসের পূর্ণিমাকে ভিত্তি ধরে প্রতি বছরই এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়ে থাকে।
ফরিদা বলেন, “বাংলাদেশে ইলিশ অত্যন্ত মূল্যবান মাছ। এই মাছ রক্ষা করার জন্য বৈজ্ঞানিকভাবে এই নিষেধাজ্ঞার সময় নির্ধারণ করা হয়। বিশেষ করে মা ইলিশের সুরক্ষায় আমাদের বিজ্ঞানীরা পূর্ণিমা ও অমাবস্যার সঙ্গে মিল রেখে যে তারিখটা নির্ধারণে পরামর্শ দিয়েছেন, সে বিষয়ে আমরা সবাই একমত হয়েছি।”
এই সময়কালে যেন ইলিশ শিকার বন্ধে নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, বিজিবি, র্যাবসহ সংশ্লিষ্টরা সবাই নজর রাখবে।
নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের জীবিকা নির্বাহে যে সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়, তার পরিমাণ কিছুটা বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন উপদেষ্টা ফরিদা।
তিনি বলেন, “এত দিন নিষেধাজ্ঞার সময় প্রত্যেক জেলের জন্য ২৫ কেজি চাল বরাদ্দ রাখা হতো। এটা বাড়ানোর বিষয়ে দাবি এসেছে। এই বিষয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাব।”
‘নদীপথ ঠিক করে দিন’
বিশ্ব নদী দিবসে সাংবাদিকদের সামনে এসে ইলিশের বিচরণ পথের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন উবিনীগের নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার।
তিনি বলেন, “আজ বিশ্ব নদী দিবস। এই দিবসে যেটা শুনলাম, সেটা হলো সাগর থেকে ইলিশ মাছ নদীতে আসতে পারছে না। এটা আমার কাছে শিউরে ওঠার মতো একটি তথ্য। নদীগুলো ভরাট হওয়ার কারণে, নানাভাবে দখল হওয়ার কারণে, ইলিশ মাছ নদীতে প্রবেশের পথ যেভাবে নষ্ট হচ্ছে। এই পথটা যদি ইলিশ মাছকে আমরা দিতে না পারি তাহলে এটা নিয়ে বড় বড় কথা বলে কোনো লাভ নেই।”
এবিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা ফরিদা বলেন, “নদীপথগুলোকে ঠিক করে দেন। ইলিশ মাছকে আসতেও দিতে হবে, যেতেও দিতে হবে। আসা ও যাওয়ার পথ ঠিক না করলে আমরা কেউ ইলিশ পাব না।”
ইলিশ বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসাবে স্বীকৃত। সাগরের এই মাছ কেবল ডিম ছাড়ার জন্যই নদীতে আসে।
রপ্তানি ‘বিশেষ অনুরোধে’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েনের মধ্যে প্রতিবেশী দেশটিতে ইলিশ রপ্তানি না করার পক্ষে অবস্থান জানিয়েছিলেন উপদেষ্টা ফরিদা।
তিনি বলেছিলেন, ইলিশ আগে দেশের মানুষ পাবে, তারপরে রপ্তানি।
কিন্তু গত শনিবার দূর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ৩ হাজার টন (৩০ লাখ কেজি) ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমোদন দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এ নিয়ে রবিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে ফরিদা বলেন, “বিশেষ অনুরোধের প্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। এটা তাদের সিদ্ধান্ত।”
“আমার বক্তব্যের বিষয়ে আমি আগের অবস্থানেই আছি,” বলেন তিনি।
দুর্গাপূজায় পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের মধ্যেও ইলিশের চাহিদাও বাড়ে। বাংলাদেশ ইলিশ রপ্তানি করছে না শুনে সেখানে হতাশাও শোনা গেছে।
তবে বাংলাদেশ ও ভারতের ব্যবসায়ীরা ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিল।
বছরে প্রায় ৬ লাখ উৎপাদনের বিপরীতে রপ্তানির পরিমাণ নগন্য হওয়ার তথ্যটি তুলে ধরে ফরিদা বলেন, “গত বছর ৩ হাজার ৮০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার টন।”